বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারের ত্রাণ সামগ্রি পৌঁছাচ্ছে না : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৬ পিএম, ২৪ জুন,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:২২ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারের ত্রাণ সামগ্রি পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার সকালে খিলগাঁওয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের 'গুম' হওয়া কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের বাসায় তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের পরে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, '' আপনারা দে্খেছ্ন যে, দেশে একটা ভয়াবহ বন্যা চলছে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে। আমি নিজে গতকাল সিলেটে গিয়েছিলাম। নিজের চোখে না দেখলে এর ভয়াবহতা সস্পর্কে কোনো ধারণা করা যায় না। মানুষ যে কষ্টে আছে এবং তাদের কাছে যে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া, তাদের বাঁচার ব্যবস্থা করে দেয়া, তাদের পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া তার কোনো ব্যবস্থা সরকার করে নাই।"
'' অথচ এই তথাকথিত অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী তিনি হেলিকপ্টারে গিয়ে ওপর দিয়ে ঘুরলেন, ঘুরে তিনি সার্কিট হাউজের হেলিপ্যাডে নেমেছেন। সেখানে ১০জন লোককে টোকেন ত্রাণ দিয়ে্ছেন এবং তারপরে তিনি বলেছেন, সব হয়ে যাবে। গতকাল রাত পর্যন্ত আমি যা খবর পেয়েছি এগুলো একেবারে কিছুই হয়নি।"
মির্জা ফখরুল বলেন, '' সেনাবাহিনী নামার পরে তারা সিস্টেমেটিক্যালী কিছু ত্রাণ রিমোট অঞ্চলগুলো পৌঁছাঁনোর চেষ্টা করছে। এছাড়া কিছু কাজ করছে বেসরকারি এনজিওগুলো।"
বিএনপির ত্রাণ কার্য্ক্রম সম্পর্কে মহাসচিব বলেন, '' আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা সবচেয়ে বেশি কাজ করছে। তারা নিজেদের পয়সা দিয়ে নৌকা ভাড়া করে ত্রাণ নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে এবং ব্যাপকহারে কাজ করছে তারা।আমি আপনাদের মাধ্যমে সিলেটের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।"
'' একই সঙ্গে আমি অবিলম্বে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দূর্গত এলাকা ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।"
মির্জা ফখরুল বলেন, '' যে কারণে বন্যা হয় সেই কারণ বা সমস্যা সমাধানে কোনো ব্যবস্থা সরকার গ্রহন করেনি।বরঞ্চ এটাকে বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাওড়ে যে বড় রাস্তা হয়েছে, যেটা কিশোরগঞ্জের ইটনায় গিয়েছে। আমরা শুনেছি সেটা আমাদের রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের একটা প্রাইজ প্রজেক্ট। ৩৩ কিলোমিটার এই রাস্তা। এই রাস্তায় সম্পূর্ণ পানির যে স্বাভাবিক প্রবাহ যেটাকে বন্ধ করে দিয়েছে।''
'' আজকে যে পানি উজার থেকে নেমে আসে সেই পানি আপনার সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওড় দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে কিশোরগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওড় দিয়ে মেঘনাতে গিয়ে পড়ে। অথচ পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বা গতিকে আজকে বন্ধ করা হয়েছে। যার ফলে এভাবে ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হচ্ছে।"
২০১০ সালের ২৪ জুন রাজধানীর ফার্মগেইট এলাকা থেকে সাদা পোষাকে গোয়েন্দা সংস্থার পরিচয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২০ ওয়ার্ডের( সাবেক ৫৬ নং ওয়ার্ড) নির্বাচিত কমিশনার চৌধুরী আলমকে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায়।
তার নিখোঁজ হওয়ার এই দিনটিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকাল সাড়ে ১০টায় খিলগাওয়ে চৌধুরী আলমের বাসায় যান এবং তার সহধর্মিনী হাসিনা চৌধুরীর সাথে কথা বলেন এবং পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন।
এ সময়ে চৌধুরীর আলমের দুই ছেলে আবু সাঈদ চৌধুরী, আবু সাদাত চৌধুরী, দুই মেয়ে মাহমুদা আখতার, মাহফুজা আখতার ও চৌধুরী আলমের ছোট ভাই খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন।
মহানগর দক্ষিন বিএনপির সভাপতি আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, মহানগর নেতা আবদুল হান্নান, ফারুক আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নজরুল ইসলাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের শায়রুল কবির খান এই সময়ে মহাসচিবের সাথে ছিলেন।
'সরকার জনগনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে'
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ''আজকে যাদেরকে গুম করা হয়েছে, তাদেরকে জীবনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে তাদের সমস্ত ব্যাংকের লেনদেন, সম্পত্তির মালিকানা, ওয়ারিসন সার্টিফিকেট পর্যন্ত পাচ্ছে না।গুম হওয়ার পরিবার চরম কষ্টের মধ্যে আছে।"
'' প্রতিটি ক্ষেত্রে এই সরকার জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে আমি বলছিলাম এই সরকারকে একমাত্র আখ্যা দেয়া যেতে পারে গণশত্রু। তারা জনগনের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে।"
তিনি বলেন, '' চৌধুরী আলমকে এই সরকারের নির্যাতনকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে যায়। তার পর থেকে ১২ বছরে শত চেষ্টা করেও তার পরিবার ও বিএনপি কোথাও কোনো সন্ধান পাইনি। এখন পর্যন্ত সরকার তার কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে এই ধরনের ঘটনা অনেকগুলো সংগঠিত হয়েছে।আমাদের হিসেবে আমাদের দলের লোকই আছে ৬'শর উপরে।"
'' জাতিসংঘের মানবাধিকার সম্পর্কিত যে ধারা আছে সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে এই ধরনের জোর করে কাউকে নিখোঁজ করা হলে তা হবে মানবতা বিরোধী অপরাধ, ইটস ক্রাইম। এই সরকারের ১৫ বছরে দুঃশাসনে কত মানুষের যে সন্তানহারা হয়েছেন, কত জন স্বামীহারা হয়েছেন, কতজন পুত্রহারা হয়েছেন তার কোনো হিসাব সঠিকভাবে আমরা সক্ষম হচ্ছি না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্যে এই গুম, খুন, বেআইনিভাবে আটক করে তাকে হত্যা করা, বিচারবর্হিভুত হত্যাকান্ড এমনভাবে বেড়েছে যেটা কোনো সভ্য সমাজে করতে পারে না।"
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আবারো সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।