বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে-যা খুবই আতঙ্কজনক : বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২৬ পিএম, ২০ জুন,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৩০ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে-যা খুবই আতঙ্কজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী দিয়েছেন।
গতকাল রবিবার (১৯ জুন) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বাণীতে বলা হয়, আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। জুন মাসের ২০ তারিখে প্রতি বছর জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালিত হয়। দিনটির একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর জুন মাসের ২০ তারিখ বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের অমানবিক অবস্থানের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও আজ এই দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এই দিবসটির প্রতি পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন এবং বিশ্বব্যাপী নিজ দেশে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুৎ শরণার্থীদের নাগরিক মর্যাদা ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের প্রতি সক্রিয় সমর্থন অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করছে।
বিশ্ব নাগরিকবৃন্দের সহজাত কিছু অধিকার রয়েছে, যেমন-মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য আশ্রয়, নিরাপত্তা এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার স্বাধীনতাসহ মানবিক মর্যাদা। কিন্তু নিজ দেশ থেকে উচ্ছেদ হওয়া শরণার্থীরা ঐ সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ভিন্ন দেশে আশ্রয় ও ক্ষুধা নিবৃত্তির সন্ধান করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশিদেরও সেই করুণ অভিজ্ঞতা আজও মলিন হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশে লাখ লাখ মানুষের আশ্রয় প্রার্থনা আমাদের ইতিহাসের এক অমোচনীয় অধ্যায়।
বর্তমানে বাংলাদেশ এক বিশাল শরণার্থী মানুষদের আশ্রয় প্রদান করেছে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শরণার্থী শিবির কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের। তারা নিপীড়নের শিকার হয়ে নিজ দেশের পৈতৃক ভিটে-মাটি ছেড়ে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের সাধ্যমতো প্রচেষ্টা নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটি মানবতার একটি বিরল দৃষ্টান্ত। জীবন-ধারণের উপকরণসহ তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদায় নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে আমি আন্তর্জাতিক ও বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতি সহযোগিতার আহবান জানাচ্ছি। ‘নিরাপত্তা চাইবার অধিকার সবার’-এই বছরের এই প্রতিপাদ্যটি বিশে^র প্রত্যেক দেশে দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আমি বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে বিশ্বের সকল শরণার্থীদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনসহ তাদের প্রতি পূর্ণ সংহতি জ্ঞাপন করছি।
বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষে অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিশ্ব শরণার্থী দিবস একটি আন্তর্জাতিক দিবস। ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসে আমি বিশ্বের সকল শরণার্থীকে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার লড়াইয়ের প্রতি আন্তরিক সংহতি জ্ঞাপন করছি। বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে-যা খুবই আতঙ্কজনক। বিশ্বের প্রতি ৯৫ জন নাগরিকের বিপরীতে একজন মানুষ শরণার্থী। দেশে দেশে জাতিগত দাঙ্গা, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ ও সহিংসতায় আক্রান্ত হয়ে ক্ষুধা-দরিদ্রতার জ্বালায় নিজ দেশ থেকে উচ্ছেদ হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে মানুষ ভিন্ন দেশে শরণার্থী হচ্ছে।
শরণার্থীরাও বিভিন্ন দেশে ক্ষুধা ও বেকারত্বের তাড়নায় অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে স্থানীয় সংস্কৃতির জন্য হুমকি হয়ে পড়ায় নতুন নতুন সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্ব শরণার্থী দিবসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরণার্থীদের মানুষ হিসেবে টিকে থাকার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় ভূমধ্য সাগরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি এবং সাগর পাড়ি দেয়ার সময় নৌকা ডুবিতে প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। বিশ্ব শরণার্থী দিবসটি আমাদের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এজন্য যে, বাংলাদেশ বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণ রোহিঙ্গাদের নানা ধরনের দুর্যোগ যেমন ক্ষুধা, আবাস, বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ইত্যাদি মোকাবিলায় অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নিজ মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়া এই রোহিঙ্গাদের সহায়তায় বাংলাদেশি জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এদেরকে নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দিয়ে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি বিশ্ব শরণার্থী দিবসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাসহ বিশ্বের সকল শরণার্থীদের সংকট মোকাবিলায় এগিয়ে যেতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ‘নিরাপত্তা চাইবার অধিকার সবার’-এই বছরের এই প্রতিপাদ্যটি একটি সর্বজনীন নীতি হিসেবে বিশ^ সম্প্রদায়কে গ্রহণ করতে হবে। আমি বিশ্ব শরণার্থীদের প্রতি সমব্যথী এবং তাদের নিজ দেশে মাথা উঁচু করে ফেরার প্রত্যাশা করছি।