আ.লীগ-বিএনপি যেন দেশের ইজারা নিয়েছে : জিএম কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৭ পিএম, ১৮ জুন,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৩ এএম, ২ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি যেন দেশের ইজারা নিয়েছে। দুটি দলের আদর্শগত অমিল রয়েছে, কিন্তু চরিত্রগত কোনো অমিল নেই।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে এক ধরনের কথা বলে আর ক্ষমতার বাইরে গিয়ে অন্যরকম কথা বলে। বিরোধী দলে থাকলে নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় আর ক্ষমতায় গেলে বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন নেই।’
‘ক্ষমতায় থাকলে দেশের দুর্নীতি, বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুম বিষয়ক আন্তর্জাতিক রিপোর্ট সম্পর্কে বলেন সবই ভুয়া আর বিরোধী দলে থাকলে বলে সব রিপোর্টই সঠিক।আবার ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি টেন্ডারবাজি, দলবাজি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করে। ক্ষমতায় গিয়ে তারা রাজত্ব তৈরি করে, সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের কোনো খেয়াল থাকে না। কোনো ইস্যু পেলেই নাচে-গানে আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে, কিন্তু সাধারণ মানুষের অবস্থা তারা বুঝতে চায় না।’
আজ শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টিতে মেজর (অব.) মো. শাহ আলম জমাদার ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলম সরকারের নেতৃত্বে কয়েকশ নেতাকর্মী জিএম কাদেরের হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন।
এ সময় যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের স্বাগত জানিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী দিনে যদি রাজনীতি না টিকে, তা হবে দুঃখজনক। রাজনীতি না টিকলে হয়ত রাজনৈতিক দল থাকবে, দলের নেতাও থাকবে কিন্তু গণমানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একটি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি খুঁজছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জনগণের হাত থেকে দেশের মালিকানা লুট করেছে। জণগন হচ্ছে দেশের প্রকৃত মালিক। তারা যাদের নির্বাচিত করবেন তারাই কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু দেশের মানুষের মালিকানা নেই, তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারছে না। ব্রিটিশ আমলে দেশের টাকা লুট হয়ে লন্ডনে যেত। পাকিস্তান আমলে দেশের টাকা লুট হয়ে ইসলামাবাদ যেত। এখন দেশের টাকা লুট হয়ে বিভিন্ন দেশে যায়। শুধুমাত্র সুইস ব্যাংকে গেল এক বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে।
‘দুটি দল দেশের মানুষের সঙ্গে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। এখন সরকারি দল না করলে চাকরি মেলে না, সরকারি দল না করলে ব্যবসা করা যায় না। এর ফলে একটি শ্রেণি ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছে আর সাধারণ মানুষ গরিব থেকে আরও গরিব হচ্ছে।’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি দলই জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে মিথ্যে অপপ্রচার চালিয়েছে। দুটি দল দেশকে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে অথচ তারা বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নাকি দুর্নীতিবাজ। আবার জাতীয় পার্টির দেশ পরিচালনার সময় হয়ত রাজনৈতিক আটটি খুনের ঘটনা নেই অথচ এখন একদিনে অসংখ্য খুনের ঘটনা ঘটে। যারা খুন ও গুমের সঙ্গে জড়িত তারাই জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে জাতীয় পার্টিই দেশের মানুষকে সুশাসন দিতে পারবে। আর এ কারণেই প্রতিদিন জাতীয় পার্টির পতাকাতলে যোগ দিচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। আমরা সাধারণ মানুষকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে রাজনীতি করছি। আমরা দেশের মানুষকে প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ উপহার দেব।’
গাজীপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এমএম নিয়াজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মো. মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, মো. শফিকুল ইসলাম সেন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান।
গাজীপুর নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন- মো. হারুন অর রশীদ, আলফাজ উদ্দিন, জহির সরকার, হানিফ মাস্টার, আব্দুস সামাদ মিয়া, ইসরাফিল মিয়া, বারী মাস্টার, সেলিম পাঠান, সাইফুল আলম সরকার, ওমর ফারুক, বাহারুল ইসলাম ইউনুস, সাইফুল ইসলাম খান, মো. মাসুদ ভূঁইয়া, জসীম উদ্দিন, নাসির উদ্দিন তালুকদার, মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম, মাওলানা মো. জয়নুল আবেদীন ফয়েজি, জসীম উদ্দিন, নাসির উদ্দিন তালুকদার, মনির হোসেন, মো. মাসুদ রানা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক-২ এমএ রাজ্জাক খান, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম, গাজীপুর নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মো. শওকত আলম, হাসান আলী, ওয়াজ উদ্দিন, আমিরুল ইসলাম, সেকেন্দার মিয়া, মোক্তার হোসেন, বাবুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, আলী আকবর, মুজিবুর রহমান, নাসির উদ্দিন, আব্দুল হালিম প্রমুখ।