সরকার বন্যা দূর্গত মানুষের দিকে না তাঁকিয়ে পদ্মাসেতুর উদ্বোধন নিয়ে ব্যস্ত : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৪ পিএম, ১৮ জুন,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:২১ এএম, ১৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বন্যা দূর্গত মানুষের দিকে না তাঁকিয়ে 'সরকার পদ্মাসেতুর উদ্বোধনী উৎসব নিয়ে ব্যস্ত' বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ভাটারায় ঢাকা মহানগর উত্তরের কয়েকটি ওয়ার্ড সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ''আমরা মনে করি এই দুঃসময়ে এই দুযোর্গের সময়ে, জনগনের এই কষ্টের সময়ে সরকার ব্যস্ত হয়ে আছে উৎসব নিয়ে। তারা পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধন নিয়ে এতো ব্যস্ত যে, তারা মানুষের কল্যাণের দিকে তাকানোর কোনো সময় নেই, মানুষের কষ্টের দিকে তাকানোর সময় নেই।
আমরা দাবি করছি বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোকে দূর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক এবং এই সমস্ত অঞ্চলের জনগনের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক কোনো বিলম্ব না করে। আমরা অবিলম্বে সরকারকে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে গিয়ে দূর্গত মানুষের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করে এবং বন্যা যেন না হয় তার ব্যবস্থা করা জন্য আহবান জানাচ্ছি।
বন্যা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ''সারাদেশে আজকে বন্যার ধারালো ছোবল। সিলেট, সুনামগঞ্জ থেকে শুরু করে উত্তরে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ সমস্ত অঞ্চল বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। গতকালের যে নিউজ সেই নিউজ হচ্ছে ফারাক্কার সকল বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে এবং ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা সব নদীর পানি এখন বাড়তে থাকবে। এদেশের মানুষকে ভাসিয়ে দেবে, তাদের বহুদিনের যে কষ্ট করা যে ফসল সেই ফলসকে নষ্ট করবে, তাদের বাড়ি-ঘর নষ্ট করবে, তাদের গোবাদি পশু নষ্ট করবে, তাদের সমস্ত সম্পদ ভাসিয়ে নিয়ে চলে যাবে।"
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''কেনো এই বন্যা? ক্লাইমেট চেইঞ্জ হচ্ছে সেজন্য বন্যা আসতে পারে। কিন্তু সেই বন্যাকে মোকাবিলার জন্য বা সেই বন্যায় যাতে কম ক্ষতি হয় সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। তারা গত এক যুগেও ভারতের সঙ্গে যেসব অভিন্ন নদী রয়েছে, সেই অভিন্ন নদীগুলোর পানিবন্টনের যে চুক্তি সেই চুক্তি করতে সক্ষম হয় নাই। আমাদেরকে বহুদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি চুক্তির মূলা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত করা হয় নাই। ফারাক্কার পানি হটাত করেই যে তারা(ভারত) গেইট খুলে দেয় তখন যে পানির ঢল আসে সেই ঢল সামলানো সম্ভব হয় না। আজকে সিলেট-সুনামগঞ্জ অঞ্চলে একই ঘটনাগুলো ঘটছে। আজকে এটার জন্য সম্পূর্ণভাবে এই সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি এবং তার জনগনের প্রতি যে অবহেলা সেটাই প্রমাণ।"
তিনি বলেন, ''বন্যা হবে না কেনো? যে সমস্ত হাওর ও নদীগুলো বাঁধ এবং ব্রিজ দেয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। সেখানে এতো দুর্নীতি হয়েছে যে, সমস্ত বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এবং নতুন করে যেসব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে তা ভেঙে যাচ্ছে। সব কিছু সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আজকে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে।"
রাজধানীর ভাটারা বাজারে কাছে ভাটারা থানা বিএনপির ওয়ার্ড সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে উত্তর মহানগর বিএনপির ১৭, ৩৯ ও ৪০ নং ওয়ার্ডের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ''এখন তারা (সরকার) নতুন একটা গান শুরু করেছে। সেই গানটা কি? যে বাংলাদেশে এই যে পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধন হবে সেখানে নাকী একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। জাতির সামনে বলেন সেই দূর্ঘটনাটি, কারা করছে- পরিস্কার করে বলেন। আমরা দেখছি যে, বরাবরই আপনারা এই সমস্ত কথা বলেন। নিজেরা দূর্ঘটনা ঘটান তারপরে এটা বিএনপির ওপরে চাপিয়ে দেন। এটা হচ্ছে আপনাদের চরিত্র, এটা আপনাদের নীতি।"
তিনি বলেন, ''চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা আপনাদের ব্যর্থতার কারণেই হয়েছে। যে ডিপোতে আগুন লেগেছে সেই ডিপোর মালিক আপনাদের লোক, আওয়ামী লীগের একজন নেতা। সেখানে তাকে গ্রেফতার না করে, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে যারা আহত হয়েছে তাকে আসামী করে মামলা দেয়া হয়েছে। অর্থটা কী? অর্থটা হচ্ছে তারা ওই সমস্ত কাজ করবে, অর্থ আয় করবে আর বিএনপির লোকজন যারা কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবেন। এই সমস্ত করে কোনো লাভ হবে না। জনগন আপনাদের প্রকৃত পরিচয় জেনে গেছে।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''পত্রিকায় এসেছে, সুইস ব্যাংকের বাংলাদেশীদের টাকার পরিমান গত এক বছরে তিন গুন বেড়েছে। অর্থাত যারা চুরি করছে, যারা লুট করছে তারা পাচার করে সুইস ব্যাংকে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে। এভাবে তারা কানাডাতে বেগমপাড়া তৈরি করেছে, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করেছে এবং এই দেশে তারা কোনো বাধা-বিপত্তি ছাড়াই, কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই চরমভাবে প্রত্যেকটা খাতে দুর্নীতি করছে।"
তিনি বলেন, ''একটা সংসদ আছে। এই সংসদ নির্বাচিত সংসদ নয়। সেকারণে সেখানে সরকারের সমালোচনা হয় না এবং সেখানে যেহেতু বিরোধী দল বলতে কিছুই নেই সেজন্য এই জবাবদিহিতার কাজটা তারা করতে পারে না।''
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''আমরা এই নির্বাচন কমিশনকে মানি না। আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব পরিস্কার করে বলেছেন যে, আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না যদি সেটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন না হয়। আমরা পরিস্কার করে বলেছি, আপনাদের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নেই। আপনারা অবিলম্বে পদত্যাগ করুন এবং একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সংসদকে বাতিল করে দেন। এরপর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের অধিনে একটা জবাবদিহিমূলক নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনে নতুন পার্লামেন্ট গঠন হবে, নতুন সরকার হবে।
তিনি বলেন, "আজকে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে, নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবিতে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকলকে শক্তিশালী হয়ে, প্রতিবাদী হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের যে সংগঠন তৈরি হচ্ছে সেই সংগঠনের মধ্য দিয়ে আমাদের আন্দোলন আরো শক্তিশালী হবে এবং সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর গণঐক্য তৈরি করে এই সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হবো।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে কিছু প্রস্তাব করা হছে। সেটা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ। আমি বিস্মিত হয়ে গেছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা প্রতিষ্ঠান, শতবর্ষ ধরে যে বিশ্ববিদ্যালয় এই দেশে সবচাইতে মেধাবী মানুষদেরকে শিক্ষা দিয়ে সমাজে পাঠিয়েছে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, সাহিত্যের ক্ষেত্রে, সামাজের বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রস্তাব করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিশ হাজার শিক্ষার্থী আছে- এর মধ্যে যারা ধনী তাদের জন্য বিশেষ ফি অর্থাত বেশি টিউশন ফি দিতে হবে। কারণ তারা ধনীর সন্তান।"
তিনি বলেন, ''ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই কেরেক্টারের নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইজ এ সেন্টার অব এক্সসিলেন্স যেটা গোটা দেশের সবচাইতে ভালো মানুষের ছাত্ররা এখানে ভর্তি হয়। এখানে ভর্তি হয়ে তারা তাদের শিক্ষা শেষ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নেতৃত্ব দেয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে তো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারতো। এখানে আমাদের জনগনের ট্যাক্সের টাকা.. যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমরা পাবলিক ইউনিভার্সিটি বলি সেগুলোতে অর্থ দেয়া হয় তা পরিচালনার জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ আজকে সেই চরিত্রটাকে নষ্ট করে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করবার একটা হীন চক্রান্ত করছে । আমরা এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করছি, তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।"
৩৯ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র আহবায়ক এসএম কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আবদুল আলি নকি, আতিকুল ইসলাম মতিন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, এজিএম শামসুল হক, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, মোয়াজ্জেম হোসেন মতি, আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, আখতার হোসেন, মোস্তফা জামাল প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।