ডিজিটাল সিকিউরিটিসহ সব কালাকানুন আইন বাতিল করা হবে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৮ এএম, ১৭ জুন,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:০৬ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটিসহ সব কালাকানুন আইন বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সবকিছু রক্ষা করতে চাইলে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা আমরা বহু আগে থেকেই জানি। এই কারণে বলে দিয়েছি যে, বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে না। পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানেই হচ্ছে, তাদের আরও বৈধতা দেয়া।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। ১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৬ জুন শুধুমাত্র সাংবাদিক বা সংবাদপত্র জগতের জন্য কালো দিন নয়। সমগ্র জাতির জন্য একটা কালো দিন। এদিন সমস্ত সংবাদপত্রকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র চারটি সংবাদপত্রকে চালু রাখা হয়েছিল এবং তা সরকারি তত্ত্বাবধানে চলবে এই সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছিল। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রাষ্ট্রের চরিত্রকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল যে, এটা আওয়ামী লীগের একদলীয় রাষ্ট্র। সেদিন যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আমরা গত এক যুগ ধরে দেখছি, ধীরে ধীরে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের সাথে আমাদের তফাৎ হচ্ছে তারা গণতন্ত্রকে হরণ করেছে, মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করেছে। বিএনপি সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার মাধ্যমে। আজকে যারা ব্যবসায়ী আছেন তারা সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের থেকে তো আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করার ব্যাপারটা পাবো না। আজকে অনেকেই বলেছেন সেখানে ব্যক্তি সাংবাদিকদের ভূমিকা অবশ্যই থাকবে। সেটা কতোটুকু সম্ভব আমি তাও জানি না। সেই লক্ষ্যে আমাদের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এর জন্য সব পেশা ও শ্রেণির মানুষকে আমাদের জাগিয়ে তুলতে হবে। যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তার চূড়ান্ত রূপ দিতে হবে। এ আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই আমরা দেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবো।
তিনি আরও বলেন, যারা বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্র হরণ করেছিল, তাদের কাছ থেকে তো গণতন্ত্র পেতে পারি না। এখন রাষ্ট্র, জাতি, সংবাদপত্র, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রক্ষা করতে হলে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমাদের সব মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে জাগিয়ে তুলে গণতন্ত্রের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রয়েছে। এতকিছুর পরও আমরা কিন্তু থেমে নেই, কাজ করছি। চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়া এবং দেশকে মুক্ত করার বিষয়ে কোনো ঘাটতি নেই। আমরা নিঃসন্দেহে সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাব। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনব, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনব। এই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা বিশ্বাস করি সফল হব।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনসহ সব কালাকানুন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাতিল করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষের মগজে ঢুকে গেছে। তারা মানুষকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে যে, কিছু লিখতে গেলে, বলতে গেলে বারবার ভাবতে হচ্ছে।
বিএফইউজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, কামাল উদ্দিন সবুজ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সভাপতি সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ডিইউজের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সহ-সভাপতি বাসির জামাল, রাশেদুল হক, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা সাব এডিটরস কাউন্সিলের যুগ্ম সম্পাদক লাবিন রহমান, বিএফইউজের যুগ্ম সম্পাদক শাহজাহান সাজু, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে এম মহসিন, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলম প্রমুখ।