খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে হবে-রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৯ এএম, ১৯ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩০ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন ত্বরান্বিত করার ঘোষণা দিয়েছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, আজ বন্দি গণতন্ত্র ছটফট করছে। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের আশা-উদ্দীপনার উৎস গৃহবন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে হবে। তাঁর নেতৃত্বেই ফিরে আসবে মানুষের স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্র। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কঠোর পরিশ্রম করছেন বিদেশের মাটিতে থেকেও। আমরা আশা করব, তাঁর এই পরিশ্রম সফল হবে ইনশাআল্লাহ। গতকাল মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত শনিবার দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভায় আগের মতোই ব্যাপক সহিংসতা, রক্তপাত ও ভোট ডাকাতির নির্বাচন করেছে ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন নিয়ে অন্ধকার শ্বাসরোধী পরিবেশের কোনো পরিবর্তনই হয়নি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অধিকাংশ পৌর নির্বাচনি এলাকায় তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। সিরাজগঞ্জের শহীদগঞ্জে জনগণের ভোটে বিজয়ী আমাদের কাউন্সিলর প্রার্থী তরিকুল ইসলামকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে আওয়ামী জঙ্গি সন্ত্রাসীরা। তরিকুলের হত্যাকারী প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বুদ্দিন বাহিনীকে এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। এই হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে সিরাজগঞ্জ যখন উত্তাল তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরাসরি খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ‘কাউন্সিলর হত্যা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মাত্র!’ নিহত নির্বাচিত কাউন্সিলর যেহেতু বিএনপির নেতা, তাই তার কাছে হয়ে গেলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা! শুধু অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা কতটা নৃশংস হতে পারে এটা তার জাজ¦ল্য প্রমাণ। এদের মনে কোনো অনুশোচনা নেই। যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে ততদিন দেশের ফাঁড়া কাটবে না। সর্বত্র চর দখলের মতো কেন্দ্র দখল করে ভোট কারসাজির ডিজিটাল মেশিন ইভিএম দিয়ে প্রকাশ্যে কারচুপি করা হয়েছে। বহু কেন্দ্রে ইভিএমে নৌকা ছাড়া কোনো প্রতীক রাখেনি। মানুষ ভোট দিতে গিয়ে দেখে যে, শুধু নৌকায় ভোট পড়ছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, কৃত্রিম লাইন তৈরি করে ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে না দেয়া, নৌকা ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্ট ও প্রার্থীদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া, ভোটের ফলাফল সরকারদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঘোষণা করা, আমাদের নেতাকর্মীদের হয় কারাগারে নয়তো এলাকাছাড়া করা, এসবই হয়েছে এই পৌর নির্বাচনে। অনিয়ম, ভোট জালিয়াতি ও পেশী শক্তির বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও রিটার্নিং কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
তিনি বলেন, ভোট নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে প্রচুর ভোটার উপস্থিতি ছিল। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।’ কত বড় বেহায়া এবং সরকারের কাছে আত্মা বিক্রি করলে এমন নগদ মিথ্যা বলা যায়! নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অথচ সিইসি নুরুল হুদার নেতৃত্বে যে কমিশন সেই কমিশনের অধীনে আজ পর্যন্ত একটি নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনি ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধবংস করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন সরকারের ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে। বরাবরের মতোই শনিবারের পৌরসভার নির্বাচনগুলোতেও সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত নির্লজ্জ। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও নিজেদের স্বাধীন সত্তা বিকিয়ে দিয়ে সরকারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী আদর্শে রঞ্জিত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা নিজের মানসম্মানকে মোটেই তোয়াক্কা করেন না। তাই সবকিছু ধ্বংস করে শুধু শেখ হাসিনার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য নৌকাকে বিজয়ী করাকে তিনি তাঁর আদর্শিক কাজ বলে মনে করেন। ভোট কেন্দ্রের অবস্থা কী তা আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মুখ খুলতে শুরু করেছে। সত্যিকার ভোট হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা দরজা ঠুয়াই পাইবো না, দরজা খুঁজে পাবে না-এটা তো আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মুখ থেকে আসছে। আর এটাই হলো বাস্তবতা। একারণে সুষ্ঠু ভোট শেখ হাসিনার কাছে আতঙ্ক।
ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্বাচনি এলাকায় বসুরহাট পৌরসভায় তার আপন ছোট ভাই বহুলালোচিত আব্দুল কাদের মির্জার বিজয়ে অতি আনন্দিত হয়েছেন। খুশিতে গদগদ হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বসুরহাটে যে নির্বাচন হয়েছে সেটা নাকি স্বচ্ছতার মডেল’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি ‘বসুরহাট’ মডেল নির্বাচন চান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার বেহুদা নির্বাচনে নিজের ছোটভাই আব্দুল কাদের মির্জার জয়লাভের আনন্দে ছোটভাইয়ের মতোই ওবায়দুল কাদেরের এই মন্তব্যে একটি প্রবাদের কথা মনে পড়ে গেল, ‘পাগলের সুখ মনে মনে, পাতা টোকায় আর টেকা গোনে’।
‘রকিবুল হুদা কিংবা নুরুল হুদা’ চক্র গত এক দশক ধরেই বেহুদা নির্বাচনের মাধ্যমে যে নানারকম নির্বাচনি মডেল জন্ম দিয়েছেন তা জনগণের স্মৃতি থেকে এখনও বাসি হয়ে যায়নি। কখনো ‘নির্বাচন ছাড়াই ১৫৪ এমপি’ আবার কখনো ‘ভোট ছাড়াই নিশিরাতের এমপি’ এইসব মডেলের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চাহিদা পূরণে এবার বেহুদা কমিশনের লেটেস্ট আবিষ্কার ‘বসুরহাট মডেল’। বসুরহাট পৌর নির্বাচন আওয়ামী ভন্ডামির নতুন মডেল। ওবায়দুল কাদের সাহেব এবং নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর ‘বসুরহাট মডেল’-এর মর্মার্থ হলো ‘সবই আমরা আমরা’। এই মডেলে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রশংসায় ভাসিয়ে দেবে আবার নিজেরাই নিজেদের বিরোধিতায় মেতে উঠবে। এমন বিরোধিতা যাতে একদিকে গণমাধ্যমকে ব্যস্ত রাখা যায় আবার অপরদিকে নির্বাচন নামের প্রহসনকে আলোচনায় রাখা যায়। এটাই হলো ‘বসুরহাট’ মডেল। এই মডেলে, সব প্রশংসা নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর জন্য আর সমালোচনা সব আওয়ামী লীগের অন্য সব নেতাদের। আওয়ামী লীগের সকল কাজই প্রকৃতপক্ষে এক ছলনা ছাড়া কিছুই নয়।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, দেশের জনগণ জানে, আওয়ামী লীগের আমলে জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে জনগণের ভোটে হারজিত নির্ধারিত হয় না। হারজিত নির্ধারিত হয় গণভবনে। নির্বাচন কমিশন স্রেফ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি পোস্ট বক্স। নির্বাচন কমিশনের কাজ, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে পাঠানো তালিকা প্রকাশ করা। এ খেলার মাস্টার মাইন্ড শেখ হাসিনা আর খেলোয়াড় হিসেবে আছে পুলিশ প্রশাসন। নির্লজ্জ রেফারি নির্বাচন কমিশন এখানে হাতের পুতুল। তাই আমরা মনে করি, পূর্ব নির্ধারিত এইসব একতরফা নির্বাচনকে একটু রমরমা করতেই এবারের ‘মডেল’ ছিলেন আব্দুল কাদের মির্জা। আওয়ামী লীগের এই নাটক মানুষ আগেই টের পেয়েছিলো। আমিও এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেই বলেছিলাম, ওবায়দুল কাদেরের ভাই আব্দুল কাদের মির্জার উদ্দেশ্য যাই থাকুক, তার মুখ থেকে কিছু অপ্রিয় সত্য বেরিয়ে এসেছে। সেইসব প্রশ্নের জবাব জনগণ জানতে চায়। ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই মির্জা কাদের স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘তার ভাবি অর্থাৎ ওবায়দুল কাদেরকে বৌ সামলাতে হবে, অন্যথায় আওয়ামী লীগকে পস্তাতে হবে’, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে যারা চলেন, তারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী। মির্জা কাদের আরো বলেছিলেন, তিনি এর আগেরবার জনগণের ভোটে বসুরহাটের মেয়র নির্বাচিত হননি, তাকে জেতানোর জন্য নির্বাচনের আগের রাতেই তার ভোটের বাক্সে ভোট ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। তাহলে এবারেও কি কাদের মির্জাকে জেতানোর জন্য নির্বাচনের আগের রাতে নাকি সকালে ভোটের বাক্সে ব্যালট পেপার ঢোকানো হয়েছে? করোনাভাইরাসের এই সংকটকালে প্রতিটি দেশের সরকারপ্রধান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অথচ বাংলাদেশে নিশিরাতের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা করোনার ভয়ে নিজেকে গণভবনে বন্দি রেখে জনগণের সঙ্গে তামাশায় লিপ্ত রয়েছেন। কখনো নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে জনগণকে ব্যস্ত রাখা কিংবা কখনো আব্দুল কাদের মির্জার মতো ‘আইটেম বয়’ মার্কেটে ছেড়ে গণমাধ্যমকে ব্যস্ত রাখা-এইসব অপকৌশলের ব্যাপারে জনগণ সচেতন। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, মানুষকে নিয়ে, মানুষের স্বার্থ নিয়ে এইসব রঙ্গ তামাশার জবাব মানুষ কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দেবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ১৯ জানুয়ারি মহান স্বাধীনতার ঘোষক, সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৫তম জন্মবার্ষিকী। এই দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ইতোমধ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। শহীদ জিয়াউর রহমানের দূরদর্শিতা, দেশপ্রেম, সাহস, বীরত্ব, সততা, দক্ষতা, কর্মক্ষমতা, পরিকল্পনা, জনঘনিষ্ঠতা, ঔদার্য, আড়ম্বরহীনতা সবকিছুই কিংবদন্তি হয়ে আছে। হি ওয়াজ নট অনলি এ ভিশনারি লিডার, হি ওয়াজ এ ম্যান অব অ্যাকশন। এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল দেশ ও জাতির জন্য তখনই ষড়যন্ত্রের হিংস্র ছোবল তাঁকে ছিনিয়ে নিয়েছে। তিনি আর কোনোদিন সশরীরে ফিরবেন না আমাদের মাঝে। তবে আমাদের কাছে অমলিন হয়ে থাকবে তাঁর দিকনির্দেশনা, আদর্শ, কর্মসূচি ও তাঁর ব্যক্তিগত জীবনাচরণ। জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় অবদান, তিনি এই জাতিকে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে বাংলাদেশ ও জিয়াউর রহমান একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। সেই কারণে জিয়া, জিয়ার দর্শন, জিয়ার ধানের শীষ বাংলাদেশের মানুষের কাছে আজও এত প্রিয়। আজ গণতন্ত্রবিহীন, মানবতাহীন নির্মম এই রাষ্ট্রে জিয়া অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কারণ এদেশ এখন গণতন্ত্রশূন্য, দুর্বল স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব। সংগ্রাম গণতন্ত্রের জন্য, সংগ্রাম স্বাধীনতার জন্য, সংগ্রাম মুক্তির জন্য, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও-আজকের দিনে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। আজ বন্দি গণতন্ত্র ছটফট করছে। সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের আশা-উদ্দীপনার উৎস গৃহবন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন বেগবান করতে হবে। তাঁর নেতৃত্বেই ফিরে আসবে মানুষের স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্র। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কঠোর পরিশ্রম করছেন বিদেশের মাটিতে থেকেও। আমরা আশা করব, তাঁর এই পরিশ্রম সফল হবে ইনশাআল্লাহ। শহীদ জিয়াউর রহমান ইতিহাসের এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছিলেন, যখন দেশে বিরাজমান ছিল ঘোর অমানিশা। স্বাধীনতা-উত্তর বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, হত্যা, খুন, জখম, মজুদদারি ও চোরাচালানীতে ভরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা আইনের শাসনের বদলে জমিদারি শাসন কায়েম করেছিল। গণতন্ত্রে স্বীকৃত স্বাধীনতাগুলোকে তারা এক এক করে নিরুদ্দেশ করে দিয়েছিল। আজকের মতো সেদিনও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ^াসী মানুষদের গুম, খুন ও কারা-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রের ওপর চলেছে দমন-পীড়নের দৃষ্টান্তহীন পৈশাচিকতা। রক্তস্নাত স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ক্ষমতাসীনরা স্বার্থলোলুপ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়ে গোটা দেশের জন্য হয়ে ওঠে বিপজ্জনক। ’৭৩-এর নির্বাচনে দেশবাসী প্রথম ভোট লুট ও ভোট সন্ত্রাসের আতঙ্কজনক পরিস্থিতি অবলোকন করেছে। মফস্বলের ব্যালট বাক্স হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে এসে তা গণনা করে নিজেদের পচ্ছন্দসই ব্যক্তিকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই অবনতিশীল ছিল যে, তা সামাল দিতে না পেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিজেদের লোকদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘সবাই পেয়েছে সোনার খনি, আর আমি পেলাম চোরের খনি’। বিচারবহির্ভূত হত্যারও সূচনা হয় সেই আমলেই। ক্ষমতাসীনদের বিরোধী রাজনৈতিক দলের অনেকেই বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ভিন্নমতের কারণে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদারকে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হয়। এই হত্যাকান্ড নিয়ে অনুশোচনা দূরে থাক, আস্ফালন করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতা চলছে আজও। আজও চলছে ভোট ডাকাতির সেই জেনেটিক্যাল বৈশিষ্ট্যের বহুমাত্রিক বিস্তার।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, ফেনী জেলার পরশুরাম পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী পৌর বিএনপির আহবায়ক কাজী ইউসুফ মাহফুজ। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন নাসিমের চাচাতো ভাই সাজেল আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। বিএনপির প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পর থেকে শত শত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসহ তার বাড়ি এবং পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এমনকি তার পরিবারকে ২ দিন যাবৎ খাবার সংগ্রহ করতে দেয়া হয়নি। সেখানে পুলিশের সাহায্য চাওয়ার পর সেখানে পুলিশ গেলেও তাদেরকে কোনো সহযোগিতা করেনি। যারা যারা প্রার্থীর সাথে ছিল তাদের পরিবারকেও অবরুদ্ধ করে এবং মারধর করে পুরো পরশুরামে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বিএনপি নেতা রোকনুজ্জামান লিটন, আলম, শ্রমিক দল নেতা আলমগীর এবং সাবেক ছাত্রনেতা জহিরুলের ওপর হামলা করে আহত করে এবং তারা যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারে এবং ঢুকতে না পারে তাদের বাড়ির রাস্তাগুলো অবরুদ্ধ করা হয়। সর্বশেষ দলীয় প্রার্থী যদি নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ায় তাহলে তার মেয়েকে অপহরণ করার হুমকি দেয়া হয়। যার কারণে গতকাল দুপুর ২ টায় ফেনী জেলা বিএনপি ও পরশুরাম বিএনপির নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির প্রার্থী কাজী ইউসুফ মাহফুজ নির্বাচন বয়কট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মনোনয়নপত্র দাখিল করে নাই। এই ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনায় আমি নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।