মৌলভীবাজারের জুড়ী ছাত্রদলের কমিটিতে বিবাহিত ও ছাত্রলীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০৫ এএম, ১৯ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৫৫ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
মৌরভীবাজারের জুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন বিবাহিত, বিএনপি, ছাত্রলীগ ও শিবিরের কর্মী। এনিয়ে উপজেলা জুড়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিভাবক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যেও চলছে তোলপাড়।
জানা যায়, জেলার জুড়ী উপজেলায় দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর পর আবারো কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদল। ওই কমিটিতে মুজাহিদুল ইসলাম জয়দুল নামের উপজেলা বিএনপির এক নেতাকে (সাবেক শিবিরকর্মী) আহ্বায়ক করা হয়। সে জুড়ী উপজেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক এবং বিবাহিত। যা ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি বলে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। জেলা কমিটি অনুমোদিত ২১ সদস্যের ওই উপজেলা কমিটিতে ৪ জন বিবাহিত এবং একজন ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা বলে ক্ষোভের সঙ্গে অভিযোগ করেছেন উপজেলা ও তৃণমূলের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩রা মার্চ আজহার আহমেদ ওয়াসিমকে আহবায়ক করে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট জুড়ী উপজেলা শাখা কমিটি অনুমোদন করে তৎকালীন জেলা কমিটি। এর পর গত বছরের ২রা ফেব্রুয়ারি কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। দীর্ঘদিন কমিটি বিহীন থাকার পর গত ১৫ই জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান স্বাক্ষরিত জেলা ছাত্রদলের আওতাধীন উপজেলা, পৌর ও কলেজসহ ৯ টি শাখার আহবায়ক কমিটি ঘোষিত হয়। এরই সঙ্গে ২১ সদস্য বিশিষ্ট জুড়ী উপজেলা শাখা কমিটিও অনুমোদন পায়। কমিটিতে উপজেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম জয়দুলকে আহবায়ক এবং আব্দুল্লাহ আল ইমনকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। অপর যুগ্ম আহবায়করা হলেন- ফয়জুর রহমান, সোহেল আহমদ, তাহমিদ বিন আহমদ, জুবের আহমদ, সাইফুল ইসলাম, বদরুল ইসলাম শান্ত, দেওয়ান মারজান মেহেদী, লুৎফুর রহমান ইমন, তরিকুল ইসলাম, আ.স.ম. কিবরিয়া, রুহেল আহমদ, মারজান রহমান। আর সদস্যরা হলেন- হাসান আহমদ লিজন, রায়হান আহমদ, রিয়াজ উদ্দিন, সায়মন, লিটন আহমদ, জাবেল মিয়া, সাব্বির খান।
এরমধ্যে মুজাহিদুল ইসলাম জয়দুল, আ.স.ম কিবরিয়া, সাইফুল ইসলাম, লিটন আহমদ, দেওয়ান মারজান মেহদী ও সায়মনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ, বিবাহিত ও বিএনপি এমন গুরুতর অভিযোগ তোলেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তাদের এমন আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন (বিয়ের কাবিন, অন্য দলের দলীয় অনুষ্ঠানে নেতাদের সাথে অন্তরঙ্গ ছবি) তথ্য-উপাথ্যও জমা দেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। উপজেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটির এক যুগ্ম আহবায়কসহ উপজেলা ও তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মী ক্ষোভের সাথে বলেন, এ কমিটি ছাত্রদলের কমিটি হতে পারে না। এই কমিটির আহবায়ক বিএনপি নেতা, ছাত্রলীগ ও বিবাহিত। জীবনে কোনদিন ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে আসেনি তাদেরকেও উপজেলার নেতা বানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে নতুন আহবায়ক মুজাহিদুল ইসলাম জয়দুল বলেন, আমি বিবাহিত এটা ডাহা মিথ্যা কথা। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরাই এই মিথ্যা রটাচ্ছে। তারা আগেও এরকম করেছিলো এখন করছে। তাছাড়া আমি বিএনপির কমিটি থেকে পদত্যাগ করে ছাত্রদলের জন্য লবিং করেছি। তাছাড়া ভুয়া কাবিন, ফেইক ফেসবুক আইডি ও অন্যের বিবাহের ছবি দিয়ে আমার নামে চালানো হচ্ছে। আমি এব্যাপারে থানায় জিডি করেছি। তবে কমিটিতে স্থান পাওয়া অনেকেই বিবাহিত আছেন এমনটি স্বীকার করেন।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকিদুর রহমান সোহান এবিষয়ে বলেন, এখন যেভাবে তথ্য-উপাত্ত্য দিয়ে অভিযোগ আসছে প্রথম দিকে আমরা ওরকম পাইনি। কেন্দ্র থেকে আমাদেরকে যেভাবে বলা হয়েছে আমরা ওই রকম কমিটি দিয়েছি। কেন্দ্রের বাইরে তো আমরা কিছু করতে পারি না। তাছাড়া ওই উপজেলার অভিভাবক সংগঠনের (বিএনপি) সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবগত করেই আমরা ওই কমিটির জন্য সুপারিশ করেছি। অভিযোগের বিষয়টি এখন আমরা অবগত হয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবগত করব। বিবাহিত, বিএনপি এবং ছাত্রলীগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা ছাত্রদলের ৩ নেতার বিবৃতি
এদিকে জেলা ছাত্রদলের ৩ নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যমে নতুন কমিটি নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। গতকাল প্রেরিত ওই বিবৃতিতে তারা বলেন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমানের নির্দেশ মোতাবেক ছাত্রদলকে সু-সংগঠিত করার লক্ষ্যে সারা বাংলাদেশে বিভাগীয় ওয়ারী ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজার জেলার অধীনস্থ ১৯টি ইউনিটের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১ম ধাপের ১০টি কমিটি ঘোষিত হয় গত ১২ই ডিসেম্বর। পূর্ববর্তী সময়ে কেন্দ্র ঘোষিত বিভাগীয় প্রতিনিধি দলের সাথে মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের সুপার ফাইভের বৈঠক হয়। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল সমন্বয়ের মাধ্যমে যে কমিটি জমা নেন তার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী কমিটি প্রকাশ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৫ই জানুয়ারি আরও ৯টি কমিটি ঘোষণা করেন। যা পূর্বের মত সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী কমিটি আবারও প্রকাশ করা হয়। ১৬ই জানুয়ারী রাতে প্রেরিত মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম মহসীন, ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল আলম চৌধূরী শাহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান চৌধুরী জুমা এর যৌথ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করেন, দলের সর্বোচ্চ মহলের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে ওই কমিটিগুলো প্রত্যাখ্যান করছি এবং অনতি বিলম্বে কমিটিগুলো যাচাই পূর্বক আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন আহবায়ক কমিটি সমন্বয়ের মাধ্যমে (সুপার ফাইভ) ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি।
তারা বলেন, শহীদ জিয়ার আদর্শ বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ ও তারেক রহমানের নেতৃত্বের উপর অবিচল আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে থেকে হামলা মামলায় জর্জরিত হয়েছি। দল পরিপন্থি কোন সিদ্ধান্তে আমরা যেতে চাই না। সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে আমাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে। যেখানে সারা বাংলাদেশে প্রত্যেকটি বিভাগে গ্রুপিংয়ের ঊর্ধ্বে উঠে কমিটিগুলো করা হচ্ছে সেখানে আমাদের জেলাতে গ্রুপিং কমিটির বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। আমরা কমিটির গুলোর অনিয়ম তুলে ধরছি। সিনিয়র ও জুনিয়রদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। বারবার নির্যাতিত, মামলা হামলার স্বীকার কর্মিদের অগ্রাধিকার না দিয়ে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সম্পূর্ণ রুপে নির্যাতিত কর্মীদের নাম বাদ দিয়ে, তাদের মনোনীত ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, যারা কখনই আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ততা ছিল না। বিবাহিত ও চাকরিজীবীদের কমিটিতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। নিজ এলাকার ভাই ও ভাতিজাদের কমিটিতে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ছাত্রদলের আওতায় সরকারি কলেজে ভর্তি করে দিবে বলে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে যারা টাকা আদায় করেছে, তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কালো টাকার কমিটি বাণিজ্যের সুস্পষ্ট প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।