সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা দুর্ঘটনা নয় বরং হত্যাকাণ্ড : সংসদে রুমিন ফারহানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৩ এএম, ৭ জুন,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২১ পিএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনাকে দুর্ঘটনা নয় বরং হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন বিএনপি থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। এ ঘটনার জন্য ডিপোর মালিকপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করে রুমিন বলেন, দুই দিন পার হয়ে গেলেও এখনো ডিপোর মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, এটাই তাঁর খুঁটির জোর। ক্ষমতাসীন দলের এমন একটি পদে থেকে কোনো নিয়মকানুন মানার প্রয়োজনীয়তা সম্ভবত তিনি বোধ করেননি।
আজ সোমবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেওয়া বক্তব্যে রুমিন ফারহানা এ কথা বলেন।
ডিপোর মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে রুমিন বলেন, সীতাকুণ্ডের ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি হত্যাকাণ্ড। চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলেছে, ওই ডিপোতে দাহ্য পদার্থ রাখার বিষয়টি তাদের জানানো হয়নি। এ ধরনের পণ্য সংরক্ষণে বিশেষ ধরনের অবকাঠামো দরকার, কিন্তু ওই ডিপোতে সে ধরনের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অনুমোদন না নিয়ে ডিপোতে কেমিক্যাল রাখা হয়েছিল।
রুমিন বলেন, ফায়ার সার্ভিসও বলেছে, ডিপোর মালিকপক্ষের কেউ সেখানে কেমিক্যাল রাখার বিষয়টি তাদের জানায়নি। সেটা তাদের জানা থাকলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তাতে বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা কমে যেত। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মৃত্যুর ঘটনা হয়তো এত হতো না। এই জীবনগুলো ঝরে গেছে কনটেইনার ডিপোর মালিকের চরম উদাসীনতার।
রুমিন বলেন, দেশে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করার সংস্কৃতি নেই। তাই তিনি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগ চান না।
বিএপির এই সংসদ সদস্য বলেন, ২০১০ সালে নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় ১২৪ জন। সে ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। একটি জিডি হয়েছিল, যার তদন্ত এখনো চলমান। যার ফলেতে চুড়িহাট্টায় একই ঘটনা। এ দুটি ঘটনার কারণ একটাই, কেমিক্যালের গুদাম। ওই ঘটনার পর সরকার বলেছিল, কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো পুরান ঢাকা থেকে সেই গুদাম সরানো হয়নি। সেখানে ১৫ হাজার কেমিক্যাল গুদাম ও দোকানের নামে বারুদ রয়েছে। মানুষ বসবাস করছে এর মধ্যে।
রুমিন ফারহানা আরও বলেন, আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০১২ সালে মারা যান ১১১ জন পোশাককর্মী। সেই ঘটনার মূল আসামি তাজরীনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন। এই মামলার ১০ বছর হয়ে গেল, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। বরং এই দেলোয়ার হোসেনকে সম্প্রতি ঢাকা মহানর উত্তর আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ডের ঘটনা নিয়ে জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন বলেন, এ ঘটনার পেছনে কোনো নাশকতা রয়েছে কি না, সরকার তদন্ত করে তা বের করবে। যদিও এসব ঘটনার তদন্ত আলোর মুখ দেখে না।
আবু হোসেন প্রশ্ন রাখেন, একটি জনবহুল এলাকাতে কীভাবে ডিপোর মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য থাকে, ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়, কিন্তু কেন ফায়ার সার্ভিসের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয় না।
জাপার এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘সরকারকে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প করছে, ভালো। কিন্তু দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমরা যোজন যোজন দূরে আছি, সীতাকুণ্ড চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে।’