বালুখেকো সেলিম খান আ.লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৭ এএম, ৫ জুন,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:৩২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম খানকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।
আজ শনিবার (৪ জুন) সকালে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী বলেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগসহ দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক দলের প্রধান শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নির্দেশনায় এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পরামর্শক্রমে সেলিম খানকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের এ সভায় দল থেকে তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদও বাতিল করা হয়। এ ছাড়া দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সভায় জেলার হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারীকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুর রব ভূঁইয়া, আবদুর রশীদ সরদার, আবুল খায়ের পাটওয়ারী, মঞ্জুর আহম্মেদ প্রমুখ।
জেলা আওয়ামী লীগ, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলার সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের মেঘনার পাড়ে একটি এলাকা নির্ধারণ করা হয়। সেখানকার ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান বিধিবহির্ভূতভাবে তাঁর ছেলে-মেয়েসহ বিভিন্ন স্বজনের নামে অস্বাভাবিক মূল্যে দলিল তৈরি করেছেন। ওই জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তদন্ত হলে সেলিম খানের কয়েক শ কোটি টাকা লোপাটের পরিকল্পনার তথ্য বের হয়ে আসে।
সূত্রটি জানায়, ওই চেয়ারম্যান ও তাঁর লোকেরা পদ্মা ও মেঘনায় কয়েক শ খননযন্ত্র বসিয়ে কয়েক বছর ধরে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এসব কাজ করে তিনি বিপুল সম্পদ ও অর্থের মালিক হয়েছেন। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে চাঁদপুরের নদীভাঙন তীব্রতা পেয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীটির অন্যান্য জীববৈচিত্র্য। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগের খবর প্রথম আলোসহ দেশের আরও কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, গত ৬ এপ্রিল সেলিম খানের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য দুদকের কুমিল্লা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাতের নেতৃত্বে দুদকের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে তাঁর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলে। সেলিম খান বালু উত্তোলনের জন্য সম্প্রতি উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দেন। পরে আপিল বিভাগ তাঁর ওই পিটিশন খারিজ করে দেন। এতে তাঁর বালু উত্তোলনের কার্যক্রম বন্ধ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।
এসব অভিযোগ ও দল থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে কথা বলতে সেলিম খানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।