আ'লীগ ১৫ বছর ধরে অলিখিত বাকশাল চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৫ এএম, ৪ জুন,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৫১ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
সরকার পতন আন্দোলনে ‘বৃহৎ প্লাটফর্ম’ গড়তে ‘বাম-ডান রাজনৈতিক দলগুলো’র ঐক্য চান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার (৩ জুন) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ কথা জানান।
তিনি বলেন, 'যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে থাকে তারা কী ক্ষমতা ছেড়ে দেয়। এটা আদায় করতে হবে, সেটা জনগণের শক্তিতেই আদায় করতে হবে। আমাদের তো কোনো শক্তি নেই, শক্তি একটাই সেটা হচ্ছে জনগণ।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'আসুন, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে যে ঐক্য প্রক্রিয়া শুরু করেছি, সেই ঐক্য প্রক্রিয়াকে আমরা সবাই সফল করি। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, এটা দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের, বাম-ডান হোক, যেটাই হোক আমরা তাদেরকে একখানে নিয়ে এসে এই ভয়াবহ যে সরকার আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে তার থেকে আমরা মুক্ত হই।'
সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে গত ২৪ মে থেকে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। এর মধ্যে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন, সাইফুল হকের বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব সংলাপ করেছেন। এছাড়া, ২০ দলীয় জোটের বাংলাদেশে লেবার পার্টি ও কল্যাণ পার্টির সঙ্গেও সংলাপ শেষ করেছে তারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) অতীতে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। গত ১৫ বছর ধরে তারা আবার অলিখিত বাকশাল চালাচ্ছে। এখানে তারা বিচার বিভাগ, প্রশাসন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গণমাধ্যম, ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকেও ধ্বংস করে দিয়েছে।’
'সেই কারণে আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হবে না। এখানে অবশ্যই আওয়ামী লীগকে সরে যেতে হবে। নিরপেক্ষ একটা সরকারের হাতে দায়িত্ব দিতে হবে এবং সেই সরকারের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে।]
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪১তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাগপার প্রতিষ্ঠাতা শফিউল আলম প্রধানের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধিতে সরকার জড়িত : দেশের খাদ্য পণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আজকে কী হচ্ছে বাজারে? মন্ত্রী নিজে স্বীকার করেছেন সিন্ডিকেটরা দাম বাড়াচ্ছে। তাহলে আপনি আছেন কেনো? তারা সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, দুর্নীতিবাজদেরকে ধরতে পারে না। তারা ছোট ছোট আরতদারদেরকে গিয়ে ধরছে।'
তিনি বলেন, 'আসল ব্যাপার তো দেখানে নয়। আসল ব্যাপার তো পত্রিকায় এসে গেছে। বড় বড় কর্পোরেটগুলো এতো বেশি করে চাল কিনছে, চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বরাবরই তাই নয়। সরকারের প্রশ্রয় ছাড়া, সরকারের মদদ ছাড়া কখনোই এটা করা সম্ভব হয়না। তাই আমরা বার বার করে বলছি যে, সরকারের কারসাজি শুধু নয়, সরকারের সরাসরি সম্পৃক্ততা আজকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করেছে, চালের দাম বৃদ্ধি করেছে।'
ক্ষমতাসীনদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ: মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবকে সর্তক করতে চাই যে, আপনারা ইতিহাস থেকে তো শিক্ষা নেন না। এবার একটু শিক্ষা নেন। মনে করুন ১৯৭৪ সালের কথা। তখন দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, খাদ্য শষ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল। আজকে আবার খাদ্যশস্যের দাম বাড়ছে, খাদ্যের দাম বাড়ছে এবং মানুষের হাহাকার শুরু হয়েছে। সেই সময়ে যদি আপনি দেয়ালের লিখন না পড়েন, উদ্যোগ যদি না নেন। এখন ওই সমস্ত উল্টো-পাল্টা কথা বলে লাভ নাই।'
'আপনারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসুন, গণতন্ত্রের পরিবেশ তৈরি করুন, মানুষের কথা বলতে দিন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। তা নাহলে আপনাদের যে পরিণতি হবে। সেই ভয়ানক পরিণতি যেন না হয় এখন থেকে জনগণের অধিকারগুলো ফিরে দেন, আপনারা মানুষ হত্যা বন্ধ করেন, গুম করা বন্ধ করেন, মিথ্যা মামলা দেয়া বন্ধ করেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন। তা না হলে আপনাদের কোনো দিন কোনো মুক্তি হবে না। এটা হচ্ছে মূল কথা।'
জাগপার সভাপতি খন্দকার লুতফর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এসএম শাহাদাতের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির আমান উল্লাহ আমান, খায়রুল কবির খোকন, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাগপার আওলাদ হোসেন শিল্পী, ইউসুফ আলী হুমায়ুন কবির, আমির হোসেন আমু প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।