মেগা প্রকল্পের হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচারেই 'গায়ে জ্বালা' : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৩১ পিএম, ২৬ মে,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:১৫ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
পদ্মা সেতু নয়, মেগা প্রকল্পের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশ পাঁচারেই 'গায়ে জ্বালা' বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
'পদ্মা সেতুর কারণে সারা দেশে মানুষ খুশি হলেও বিএনপি ও তাদের দোসরদের বুকে অনেক জ্বালা সৃষ্টি হয়েছে' আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এরকম বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ''আমাদের সরকার তো এখন গদগদ হয়ে গেছে। সারাক্ষন এখন শুধু পদ্মাসেতু, পদ্মাসেতেু, পদ্মাসেতু নিয়ে বলছে। পদ্মাসেতু তো কারো পৈত্রিক সম্পত্তি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে না। পদ্মাসেতু এদেশের মানুষের পকেটের টাকা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। সমস্যাটা কোথায়? যেটা করতে লাগত ১০ হাজার কোটি টাকায়। সেটা তৈরি করা হচ্ছে এখন ৩০-৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে।"
মির্জা ফখরুল বলেন, ''আমাদের গায়ে নাকি জ্বালা হচ্ছে। গায়ে জ্বালা হচ্ছে পদ্মাসেতু বলে নয়, আমাদের গায়ে জ্বালা হচ্ছে, পদ্মাসেতু থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ওরা বিদেশে সম্পদ করছে-এখানেই আমাদের গায়ে জ্বালা হচ্ছে। কারণ এটা আমাদের টাকা, আমাদের কষ্টার্জিত টাকা এবং সমস্ত মেগা প্রজেক্ট তোমরা এভাবে করছো।"
রাজধানীর মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন,''আপনারা নিশ্চয়ই মেট্রো রেল দেখছেন। মীরপুর থেকে যদি দেখেন কিছুক্ষন পর পর স্টেশন। এর কোনো প্রয়োজন নেই। আগারগাঁতে একটা, তারপরে শেওলাপাড়ায় একটা, তারপরে এসে সংসদ ভবনের ওখানে আরেকটা, এরপর ফার্মগেটে একটা। এতো কাছাকাছি স্টেশন পৃথিবীর আর কোথাও দেখিনি। কারণ কী? একটাই যে, অনেক টাকা পাওয়া যাবে। এদের লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি, এদের লক্ষ্য হচ্ছে লুট, এদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে লুটে নিয়ে যাওয়া।"
মেগা প্রকল্পের নামে সরকার দেশকে 'ঋণগ্রন্থ' করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ''আমাদের দেশকে ঋণের গভীরে নিয়ে গেছে। আমরা পুরোপুরি ঋণগ্রস্থ হয়ে গেছি। আমরা বুঝতে পারছি না, আমরা চাকচিক্য দেখে অনেকে মনে করছি কত কি?.., ।"
এই অবস্থা থেকে উত্তরলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, ''এই সংকট আমাদের বাংলাদেশের অস্তিত্বের সংকট। আমরা যদি এটাতে জয়যুক্ত না হতে পারি আমাদের গণতন্ত্র বলুন, আমাদের অর্থনীতি বলুন, আমাদের সমাজ বলুন, আমাদের ভবিষ্যত বলুন সব কিছু ধবংস হয়ে যাবে। এদেরকে প্রতিরোধ যদি আমরা না পারি তাহলে আমরা আমাদের রাষ্ট্রের জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারব না। আসুন আজকে আমরা সবাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এই ভয়াবহ দানবীয় যে একটা ফ্যাসিবাদী শক্তি আমাদের ওপর বসে আছে তাকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগনের জন্য যারা কাজ করবেন, জনগনের ভোটে যারা নির্বাচিত হবেন একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সেই পার্লামেন্ট তৈরি করে আমরা এই রাজনৈতিক সংকট ও অন্যান্য সংকট উত্তরণে কাজ করি।"
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ''জিয়া পরিষদকে অনুরোধ জানাবো আপনারা দয়া করে গবেষণার কাজগুলো করার চেষ্টা করেন এবং ইয়াং ব্লাড সংগঠনের নিয়ে আসুন। আমরা যারা পুরনো হয়ে গেছি আমরা অনেক কিছুই পারি না কিন্তু ইয়াং যারা আছেন তারা অনেক কিছু পারেন, তাদেরকে দায়িত্ব দেবেন এবং দেখবেন তারা অনেক বেশি কাজ করতে পারবেন এবং গতিশীলতা আনতে পারবে।"
জিয়াউর রহমান জীবন-কর্মের ওপর জিয়া পরিষদকে আরো গবেষনা করার অনুরোধ জানান তিনি।
'কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে জিয়া পরিষদ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংকলিত এই গ্রন্থের প্রকাশক জিয়া পরিষদের পক্ষে অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস। গ্রন্থের মূল্য ধরা হয়েছে পাঁচ শত টাকা।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী এম সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান হাওলাদার, অধ্যাপক আবু জাফর খান, অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, আবদুল্লাহ হিল মাসুদ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আকন্দ মামুন, অধ্যাপক মইনুল হক, অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস, খান মো. মনোয়ারুল ইসলাম, খন্দকার শফিকুল হাসান রতন, এনামুল ইসলাম এনাম, মোস্তফা কামাল পাশা, রবিউল ইসলাম, জাহেদুল আলম হিটো, রিয়াজ উদ্দিন নসু প্রমূখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।