একান্ত সাক্ষাৎকারে সিনিয়র আইনজীবি অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান
বেগম খালেদা জিয়ার সাজা চক্রান্তমূলক তা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৭ এএম, ২৩ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:৩৪ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। সেই মামলার ধরন, বিচার প্রক্রিয়া, চার্জ গঠন, নিম্ন আদালতের জাজমেন্ট, উচ্চ আদালতের জাজমেন্ট সবগুলোকে একটি জায়গায় এনে বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের আইনজীবীরা বারবার বলে আসছেন এই সাজা রাজনৈতিক চক্রান্তেরই একটি অংশ। এই সাজা যে রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ এবং বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সাজার রায় দেয়া হয়েছে তা মার্কিন প্রতিবেদনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান।
আজ শুক্রবার একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, কেবল বেগম খালেদা জিয়াই নন, বর্তমানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন আমলের সরকার দুদককে ব্যবহার করে যে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা দিয়েছে তাও একদিন আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত হবে।
জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান বলেন, ১/১১-এর মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকারের সময় দুদককে ব্যবহার করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে নির্বাহী আদেশে তাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেয়। অথচ আইন অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার হলে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর প্রত্যাহার হওয়ার কথা, কারণ একটি মামলা আরেকটি মামলার নজির হয়ে থাকে কিন্তু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের কারণে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো বিচার প্রক্রিয়ায় রেখে দেয়া হয়। সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়নি। যেদিন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন বিএনপি নেতাকর্মীরা এই সকল ষড়যন্ত্রমূলক মামলা থেকে মুক্তি পাবেন।
জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে জিয়া পরিবারের একমাত্র শত্রু তাদের জনপ্রিয়তা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভালো করেই জানেন জিয়া পরিবার বাংলাদেশের মানুষের মনের মণিকোঠায় অবস্থান করে। গণতান্ত্রিক ও জনগণের প্রশ্নে আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি না করলে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে পারবে না। তাই বেগম খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাজা দিয়ে জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে আছে আওয়ামী লীগ। জিয়া পরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি, তারুণ্যের অহংকার, মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠস্বর, আগামী বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক, দুঃখী ও নির্যাতিত মানুষের একমাত্র বাতিঘর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে এমন কোনো অপপ্রচার নেই যা আওয়ামী লীগ করেনি। শত অপপ্রচারের পরেও তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে সাজা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, এখন তারেক রহমনের স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রে নেমেছে আওয়ামী লীগ।
আগামীতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেছে আওয়ামী লীগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের জন্য আওয়ামী লীগ বারবার আদালতের দোহাই দিচ্ছে। অথচ আদালতের রায়ের আগেই আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের নেতৃত্বে সংসদীয় কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। অথচ এখন আদালতের দোহাই দিচ্ছে। কিন্তু সে সময় প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বেঞ্চ এটাও বলেছিলেন যে, আগামী দুই বারের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই অংশ আমলে না নিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা করছে। এই অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে বিএনপির নেতৃত্বে দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও গণতন্ত্রকামী জনগণকে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা আদায় করে নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের কোন অপরাধে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে নামাতে চায় বিএনপি। এই বক্তব্যের সমালোচনা করে অ্যাডভোকেট খন্দকার জিল্লুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য হাস্যকর এবং বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অপরাধ তারা দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও স্বাধীনচিন্তা কেড়ে নেয়া। আওয়ামী লীগের ১৩ বছরের ক্ষমতায় দেশ থেকে ১১ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। একদিকে যেমন স্বাধীনচেতা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে অন্যদিকে দেশের অর্থ লুট করে বিদেশ পাচার, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম করছে, লাখ লাখ বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে বন্দি করে রেখেছে। বাংলাদেশের জেলখানা এখন বিরোধী নেতাকর্মীদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে।