আওয়ামী লীগের কারণে সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০৯ পিএম, ১৬ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৬ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আওয়ামী লীগের কার্যকলাপের কারণে সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার (১৬ এপ্রিল) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এগুলোর উত্তর দেয়ার রুচি তো আমাদের নেই। এগুলো আসলে মূল বিষয়গুলো এড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছু নয়। শক্তিশালী বিরোধী দল আছে বলেই তো আমরা কথা বলছি। কিন্তু সংসদে বিরোধী দল নাই তাদের কার্যকলাপের কারণে। তারা (সরকার) এদেশের কোন গণতান্ত্রিক স্পেসই রাখে নাই। সেই স্পেস না থাকলে একটা ফ্যাসিবাদি রাষ্ট্রে উনি (প্রধানমন্ত্রী) কোন ধরণের শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে চাচ্ছেন, সেটা আমরা ঠিক বুঝি না। কিন্তু উনি যেহেতু চাচ্ছেন দেখতে, সেটা অতি অল্প সময়ে মধ্যে দেখতে পারবেন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন হবে কি হবে না- সেটা তো নির্ভর করবে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে কি হবে না। নির্বাচনের পরিবেশ যদি তৈরি হয় তাহলে অবশ্যই নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পরবে।
এরআগে গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. জোবায়দা রহমানের লিভ টু আপিল আবেদন আপিল বিভাগ কর্তৃক খারিজ হওয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, ডা. জোবায়দা একজন অরাজনৈতিক চিকিৎসক। তাকে দুদকের এই মামলায় জড়ানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসামূলক। মামলার কোন ও ভিত্তি না থাকলেও শুধুমাত্র জিয়া পরিবারকে হয়রানি ও হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। যে আদেশ প্রদান করা হয়েছে তা ফরমায়েসী বলে প্রতীয়মান হয়।
ফখরুল বলেন, বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে এই ফ্যাসীবাদী সরকার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মূল করার হীন উদ্দেশ্যেই এসব হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। একইভাবে বেগম খালেদা জিয়া বিরুদ্ধেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা মামলায়, বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টা করছে, পরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগকে কাজে লাগিয়ে সাংবিধানের গণতান্ত্রিক চরিত্র ধ্বংস করে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিচার বিভাগ সংবিধান প্রদত্ত স্বাধীনতা রক্ষা না করে দলীয় সংকীর্ণ উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্য বেআইনি, জবর দখলকারী অনির্বাচিত আওয়ামী সরকারকে অনৈতিক সহযোগিতা করছে বলে জনমনে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। বৈঠকে এই ধরণের হীন অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জনানো হয় এবং বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে স্বাধীন ভাবে সংবিধানের মূল চরিত্রকে অক্ষুণ্ন রেখে বিচারিক কর্ম সম্পাদনের আহ্বান জানানো হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বৈঠকে সম্প্রতি ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ টিআইবি গবেষণায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি দামে টিকা ক্রয় এবং অর্থ ব্যয়ে চরম অস্বচ্ছতার কারণে ২৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়মের তথ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ইতিপূর্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির ১১টি স্থান চিহ্নিত করে সেগুলো নিরসনের জন্য দুদক যে সুপারিশ করেছিলো সে সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা করা হয় এবং অবিলম্বে দুর্নীতির বিষয়গুলো নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুদককে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। সরকারের মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ মদদে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে বলেও বৈঠক মনে করে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা যা বাংলাদেশ সরকার দায়ের করেছিলো তা মার্কিন আদালতে খারিজ হয়ে যাওয়ায় বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ জানিয়ে তিনি বলেন, চুরির বিষয়টিকে ধামা-চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যেই একেবারে দায়সারা মামলা দায়ের এবং দায়িত্বহীনতার কারণেই মার্কিন আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত মামলা দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে যে সকল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করা থেকেই প্রমানিত যে সরকারের কোনও মহল এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
‘অবিলম্বে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে উন্মোচন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থ গ্রহনের দাবিও জানানো হয় বৈঠকে।’
ফখরুল জানান, বৈঠকে ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস এবং ৩রা মে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম দিবস পালনের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্ব চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।