রকেট গতিতে উন্নয়নের কথা বললেও বাস্তবের সাথে তার কোনো মিল নেই - সুজন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪১ এএম, ৩০ মার্চ,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৮ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জনদুর্ভোগ ও করণীয়’ শিরোনামে আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। গোলটেবিল বৈঠকের মূল আয়োজন করেন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর ঢাকা মহানগর কমিটি। বৈঠকটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এস এম নাজের হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকটিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ক্বাফী রতন, নাগরিক সমাজের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়াও সুজন- ঢাকা মহানগর ও জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দ অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত ছিলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের আজকের প্রোগ্রাম সাধারণ মানুষের জন্য। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই রাজনৈতিক দলগুলোর সাধারণ মানুষের কল্যাণ ও স্বার্থ সংরক্ষণ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। সরকার রকেট গতিতে উন্নয়নের কথা বললেও বাস্তবের সাথে তার কোনো মিল নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সমুন্নত রাখার জন্য আমাদের বিরাজমান যে নির্বাচন ব্যবস্থা, তা আজ ভেঙ্গে পড়েছে। এই দেশে সব দিকেই এখন সিন্ডিকেট। এর উত্তরণের জন্য দরকার একটি দায়বদ্ধ সরকার।
জুবায়েরুল হক নাহিদ বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি কিভাবে ব্যবসায়ীদের একটি কুচক্রী মহল জনগণকে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানোর মাধ্যমে কুক্ষিগত করে ফেলছে। আশা করছি সুজন-এর এই আয়োজনে আপনাদের কাছ থেকে আমরা এই সমস্যার সমাধান বের করতে পারবো এবং এই কথাগুলো আমরা নীতিনির্ধারকদের নিকট পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবো। বৈঠকটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এস এম নাজের হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির ঢেউ সামলে স্বাভাবিক আয়ে ফিরতে লড়াই করছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাদের এ লড়াই আরও কঠিন করে তুলেছে জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ। চাল, ডাল, তেল, আটা থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম ক্রমাগতভাবেই বেড়েই চলেছে। বাজারের উত্তাপ সইতে না পারায় মধ্যবিত্তরাও টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়াচ্ছেন। নিত্যপণ্য সেখানেও হাহাকার। ভোক্তা ও বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া, সরকার ভ্যাট প্রত্যাহার, নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এলসি (ঋণপত্র) মার্জিনের হার ন্যুনতম পর্যায়ে আনাসহ বাজার তদারকি জোরদার করা হলেও ভোক্তারা এর সুফল পাচ্ছেন না। বাজারে বেশি মুনাফা লুটতে এখনো তৎপর মজুতদার ও সিন্ডিকেট চক্র। এটা খুবই অনাকাক্সিক্ষত, দেশের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্যের বিশাল পার্থক্যই বলে দিচ্ছেন আমাদের বাজার ব্যবস্থা ভোক্তাবান্ধব নয়। উৎপাদন অথবা আমদানি পর্যায় এবং ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যমূল্যের যে বড় ব্যবধান, তা ন্যায্য ব্যবসার পরিচয় বহন করে না।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন সবগুলো উৎপাদন, বিপনন এবং বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বভাব একইরকম হয়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির দৌরাত্ম্যে কেউ পিছিয়ে নেই। দুর্নীতি যে করে এবং যে প্রশ্রয় দেয় উভয় দলই সমান অপরাধী।
ক্বাফী রতন বলেন, আমাদের সমাজ এখন অলিগার্কিক (ঙষরমধৎপযরপ) সমাজে পরিণত হয়েছে। সিন্ডিকেটের হাতে আমাদের তেল, চিনি ইত্যাদি তুলে দেয়া হয়েছে। মুষ্টিমেয় একটি শক্তি এখন সবকিছু কন্ট্রোল করছে। আমাদের সরকার এখন ‘অফ দি ব্যবসায়ী, বাই দি ব্যবসায়ী এবং ফর দি ব্যবসায়ী’ সরকারে পরিণত হয়েছে। কৃষকেরা আমাদের দেশের একমাত্র উৎপাদক। কিন্তু তারাই নিজেদের পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারেন না। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। এদেশে বর্তমানে ৬ কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। গতকালকের হরতাল আমরা সফল করতে পেরেছি কারণ সাধারণ জনগণ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা oligarchy নয় বরং kleptocracy। আমাদের সরকার নিজেই এই সিন্ডিকেট প্রমোট করছেন। আমি নিজে দেখেছি চট্টগ্রামে টিসিবির ট্রাকের পিছনে ২০০ জন নারী-পুরুষ দৌড়াতে দেখেছি কারণ টিসিবির পণ্য তারা পাননি, সেগুলো শেষ হয়ে গেছে। দেখলে মনে হয় দুর্ভিক্ষ নিয়ে কোনো চলচ্চিত্রের একাংশ। আমি মনে করি, সবচাইতে বড় সিন্ডিকেট হল সরকার। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই চুরির সরকার সরাতে না পারছি, দেশে কিছু ঠিক হবে না। সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।