কাদেরকে সতর্ক হতে বললেন কাদের মির্জা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০২ পিএম, ১০ জানুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৪৮ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যারা ভেঙেছে, আপনি কি দায়িত্বশীল লোক? এগুলো বন্ধ করেন। কী করবেন? বহিষ্কার করবেন? জেলে দেবেন? মেরে ফেলবেন? আমি সারা দেশের কথা বলিনি, আমি আপনাদের কথা বলিনি। আমি বলেছি, নোয়াখালী-ফেনীর অপরাজনীতির কথা। আপনারা কেন নিজেদের গায়ের ওপর নিচ্ছেন? তিনি বলেন, আমি সবার বিরুদ্ধে বলি না। দলের মধ্যে ভালো লোকও আছেন। কিন্তু অধিকাংশ শেখ হাসিনাকে অসহযোগিতা করেন। ‘সত্যবচনে’ এবার নিজের বড় ভাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সতর্ক হতে বললেন তার ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা।
আজ রোববার সকালে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনী পথসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘তার (ওবায়দুল কাদের) ওপরও আমার ক্ষোভ আছে। এখানে জিততে হলে তার আমাদের লাগবে। সামনে জিততে হলে ওনাকেও সতর্ক হতে হবে। এত সহজ নয়, কঠিন ব্যাপার। বউটউ (স্ত্রী) সামলাতে হবে। আর ওনার সঙ্গে যারা হাঁটেন, তারা কার থেকে মাসোহারা পান, তার খোঁজখবর নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুঠোফোনে আমাকে যুব মহিলা লীগের পরিচয় দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেছে। প্রশাসনকে জানিয়েছি, তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাহলে এই মহিলার হাত অনেক শক্তিশালী, না হয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কেন?’
মির্জা কাদের বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে আমার বক্তব্য স্পষ্ট। সেটা হচ্ছে ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে ইচ্ছা তাকে দেব’। সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা এনেছেন কী জন্য? জীবন যৌবন সবকিছু ক্ষয় করে দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন। এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আজকে ভাতের অধিকার শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। কিন্তু ভোটের অধিকার কি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন? ভোটের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আমি কি বলেছি, শেখ হাসিনা ভোটের অধিকার হরণ করেছেন? কিছু পত্রপত্রিকায় আমাদের ওই তথাকথিত নেতারা বসে বসে সমালোচনা করেন, শেখ হাসিনাকে খ্যাপানোর জন্য। খ্যাপিয়ে লাভ হবে না। নেত্রী সব বুঝেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাই পারেন ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। শেখ হাসিনার বাবা এ দেশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা মানুষের ভাতের অধিকার দিয়েছেন। এখন শেখ হাসিনাকেই এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা এখান থেকে সহযোগিতা করব। রাতারাতি তো পারবেন না। আর শেখ হাসিনা কি বলেন, ভোট চুরি কর? জীবনে কোনো দিন এলাকায় যায়নি, কাউকে ১০ টাকার চা খাওয়ায়নি। একটা গরিব মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে, সাহায্য করেনি। সে সব প্রার্থী ভোটে দাঁড়ায়। তারা ভোট চুরির জন্য শক্তি প্রয়োগ করে। মাস্তান ভাড়া করে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা কতক্ষণ পাহারা দেবেন? আবার কিছু কিছু জায়গায় যে ভালো ভোট হচ্ছে, সেটা কি মিথ্যে নাকি? এ সময় তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উদাহরণ দেন।
কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের আমার সঙ্গে নেই। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আমার সঙ্গে নেই। নোয়াখালী ও ফেনীর আওয়ামী লীগ আমার বিরুদ্ধে অস্ত্রশস্ত্র পাঠিয়েছে। ডিসি, এসপি, নির্বাচন অফিসার আমার সঙ্গে নেই। আপনারা কেউ আমার সঙ্গে থাকবেন? থাকলে আমি কথা বলব।’
দলের সঙ্গে ৪৭ বছর ধরে জড়িত উল্লেখ করে ক্ষোভের সঙ্গে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘এই দায়িত্বশীলতার ঘাটতি আছে, আপনি যে বললেন হানিফ সাহেব (মাহবুব উল আলম হানিফ)। আপনি দায়িত্বশীল লোক, ভদ্রলোক, আমাদের দলের নেতা। আপনার কুষ্টিয়াতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটা যে ভাঙছে, আপনি কি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন?’
অসুস্থতার কথা পুনরুল্লেখ করে এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘আমেরিকায় চিকিৎসার জন্য গিয়ে আমার দুটি টিউমার ধরা পড়েছে। তখন সেখানে আমি ২৪ দিন ঘরে ছিলাম। ঘরে বসে আমার অনুভূতিতে আঘাত করেছে, আমরা কী করছি। তাই বিমানবন্দরে এসে ঘোষণা করেছি, এখন থেকে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করব। সত্য কথা বলব। তাই এই নির্বাচনকে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে নিয়েছি। এটা হলো সত্য কথা। নির্বাচন আমার কাছে মুখ্য নয়। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।’
ভাইয়ের বিষয়ে আবদুল কাদের মির্জা আরও বলেন, ‘আমি একটি জায়গায় দুর্বল। ওবায়দুল কাদের সাহেব অসুস্থ। তিনি মারা যাবেন, এটা বললে আমি দুর্বল হয়ে যাই। তারও বুঝতে হবে, তিনি জাতীয় নেতা। আওয়ামী লীগের দুবারের সাধারণ সম্পাদক। আমি নোয়াখালীর, ফেনীর অপরাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব, গ্যাসের অধিকারের জন্য প্রতিবাদ করব। প্রতিবাদ করলে তখন বলে, আমি নাকি পাগল।’