নতুন সিইসি কট্টর আ.লীগ - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৬ এএম, ১ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:১৭ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সদ্য নিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এখন প্রভু ভক্তির পরাকাষ্ঠা দেখানোর দৌড় শুরু করবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, চরম বিতর্কিত সাবেক আমলা কাজী হাবিবুল আউয়াল শেখ হাসিনার বড় পছন্দের। যখনই কোনো সাংবিধানিক পদে নিয়োগের সময় এসেছে প্রতিটা ক্ষেত্রেই কাজী আউয়ালের নাম শেখ হাসিনা বিবেচনা করেছেন। তার কারণ হলো আউয়াল একজন কট্টর আওয়ামী লীগার। তার পুরো পরিবার আওয়ামী-বাকশালী রাজনীতির সাথে জড়িত।
আজ সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য নিশিরাতের আওয়ামী সরকার আবারো তাদের একান্ত অনুগত ও আওয়ামী ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষিত দলীয় আমলাদের দিয়ে তথাকথিত আরেকটি নির্বাচন কমিশন সাজিয়েছে। বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট, আওয়ামী জাহেলিয়াতের আমলে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসকারী নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই। এই মুহূর্তে বিএনপির একমাত্রই এজেন্ডা, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। কাজী হাবিবুল আউয়াল এখন প্রভুভক্তির চরম পরাকাষ্ঠা দেখানোর দৌড় শুরু করবেন। চরম বিতর্কিত সাবেক আমলা কাজী হাবিবুল আউয়াল শেখ হাসিনার বড় পছন্দের। যখনই কোনো সাংবিধানিক পদে নিয়োগের সময় এসেছে প্রতিটা ক্ষেত্রেই কাজী আউয়ালের নাম শেখ হাসিনা বিবেচনা করেছেন। তার কারণ হলো আউয়াল একজন কট্টর আওয়ামী লীগার। তার পুরো পরিবার আওয়ামী-বাকশালী রাজনীতির সাথে জড়িত। কাজী হাবিবুল আউয়াল আইন মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল অ্যান্ড ড্রাফটিং শাখার অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। এটি প্রশাসনিক ক্যাডারের একটি পদ। এই পদে থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে নিয়োগ পাওয়ার নিয়ম না থাকলেও শেখ হাসিনার বিশেষ অনুগ্রহে সেটি লাভ করেন। আইন সচিব একটি বিচার বিভাগীয় পদ। এ কারণে পদোন্নতি বিধিমালা-২০০২ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ কাজী হাবিবুল আউয়ালের নিয়োগ অবৈধ বলে রায় দেয়। কাজী হাবিবুল আউয়ালকে আইন সচিব নিয়োগ দেয়ার পরই আদালতের বিচারকসহ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা তার অপসারণ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ ছিল- বিচারকদের স্বার্থ রক্ষা না করা, বিচারকদের স্বতন্ত্র বেতন-ভাতা দিতে সরকারকে বাধা দেয়াসহ যখন-তখন বিচারকদের বদলির মাধ্যমে হয়রানি করতেন হাবিবুল আউয়াল। এর আগে হাবিবুল আউয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গিয়ে বিচারকরা পুলিশের দ্বারা চরম লাঞ্ছিত হন। এর পেছনে হাবিবুল আউয়ালের ষড়যন্ত্র ছিল বলে বিচারকরা অভিযোগ করেন। এ ঘটনার জন্য জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিবকে তখন বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। বিচারকদের অভিযোগ, হাবিবুল আউয়াল এই বাধ্যতামূলক অবসরের প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর করান ও প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ ঘটনায় সারাদেশের বিচারকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে দুই বিচারকের বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন রাষ্ট্রপতি। এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটি হাবিবুল আউয়ালকে তলব করলে তিনি সংসদীয় কমিটির কাছে সমস্ত দায়দায়িত্ব স্বীকার করে নেন ও দায় নিয়ে ক্ষমা চান। ওই ঘটনার পর তিনি নিশিরাতের সরকারের ঘনিষ্ঠতা ও বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়ে একের পর এক ধর্ম সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব হন হাবিবুল আউয়াল। অবসরে যাওয়ার আগেই তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় পিআরএল বাতিল করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে তাকে চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই চুক্তির মেয়াদ আর শেষ হয় না। বছরের পর বছর বাড়তেই থাকে। যিনি কর্মজীবনে আইন মানেননি। সর্বোচ্চ আদালতের উভয় বিভাগ থেকেই যার কর্মজীবন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। যিনি বিচারকদের পুলিশ দিয়ে লাঞ্ছিত করেছেন। যিনি সংসদীয় কমিটির কাছে দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে পরিত্রাণ পেয়েছেন। যিনি অবৈধ নিয়োগের পরও সরকার ঘনিষ্ঠতার সুবাদে একের পর এক মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়েছেন। নিজের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় পিআরএল বাতিল করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হয়েছেন। অবসরে না গিয়ে চুক্তিতে নিয়োগ পেয়ে সেই চুক্তি ক্রমাগতভাবে বছরের পর বছর বাড়িয়ে মাফিয়া সরকারের আনুকূল্য লাভের যোগ্যতা দেখাতে পেরেছেন। শেখ হাসিনার কাছে হাবিবুল আউয়াল যেন “মধুর তোমার শেষ যে না পাই”। আমরা আগেই বলেছিলাম, নির্বাচন কমিশন কাদের দিয়ে করবে সেই বিশ^স্তদের তালিকা চূড়ান্ত করে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। সার্চ কমিটি ছিল একটা আইওয়াশ মাত্র। কাজেই আওয়ামী-বাকশালীদের সিইসি ও ইসি নিয়োগ করা হয়েছে আরেকটি নীলনকশার নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য। সুতরাং এইসব নাটক তামাশা বন্ধ করেন। সময় থাকতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। সামনে উত্তাল আন্দোলনে ভেসে যাওয়ার আগেই বাঁচতে চাইলে জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করুন। দেশ এমন এক অপশক্তির কবলে যাদের শাসনামলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির সর্বগ্রাসী আগুনে দাম কমেছে শুধু মানুষের। জনগণ চায়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকুক। কিন্তু জনগণের চাহিদার প্রতি তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ক্ষমতাসীন অপশক্তি ব্যস্ত লুটপাট, টাকা পাচার, দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা আর বাচালতায়। তারা বিদেশ থেকে কাঁথা বালিশ কেনাসহ নানারকম ধান্দাবাজিতে ব্যস্ত। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে দেশের জনগণের চাওয়া ছিল একটি উন্নত ও নিরাপদ বাংলাদেশ। অথচ, নিশিরাতের সরকারের লুটপাট-দুর্নীতি দেশকে আবারো তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। আপনারা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে অর্থের জন্য বাংলাদেশের নিশিরাতের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের আহাজারি দেখেছেন। তিনি জার্মানিতে প্রকাশ্যে বিভিন্ন দেশের নেতা-মন্ত্রীদের সম্মেলনে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের টাকা নেই, টেকনোলজি নেই’ অর্থাৎ বাংলাদেশ এখনও একটি তলাবিহীন ঝুড়ি।
তিনি বলেন, ’৭৪ সালেও বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ একবার তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হয়েছিল। দেশকে সেই অন্ধকার থেকে বের করে এনেছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি বাংলাদেশকে একটি আধুনিক এবং স্বাবলম্বী এবং মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করে দিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার হিসেবে।
অথচ, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে বর্তমানে দেশের জনগণকে আবারো শুনতে হচ্ছে, ‘বাংলাদশের টাকা নেই, প্রযুক্তি নেই’। বাংলাদেশের যদি টাকা আর টেকনোলজি কিছুই না থাকে, জনগণ জানতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের আছেটা কি? ‘শুধু চাপার জোর’ আর মানুষ মারার জন্য ‘লগিবৈঠা-চাপাতি’? কোথায় গেল সব উন্নয়নের গলাবাজি আর মাথাপিছু আয়? লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করার সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এতো দিন ধরে চাপাবাজ মন্ত্রী-এমপিদের মুখে দেশের জনগণ শুনে আসছে দেশ কানাডা, সিঙ্গাপুর হয়ে গেছে। দেশ ডিজিটাল প্রযুক্তিতে পৃথিবীর বহুদেশ ছাড়িয়ে গেছে। অর্থমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখার সূচকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ কানাডার সমান হয়ে যাবে। এক বছরের মধ্যে স্পেন, থাইল্যান্ডের সমান হয়ে যাবে। এই লুটেরা বেহায়া সরকারের মন্ত্রীরা দেশে বসে উন্নয়নের মহাপ্লাবনের গল্প শোনায় আবার বিদেশে গিয়ে টাকা নেই বলে হাত পাতে। এদের অবস্থা হলো ওপরে উন্নয়নের বিশাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তার ছায়ায় বসে ভিক্ষা করে।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, কুমিল্লা জেলাধীন লাকসামে আওয়ামী লীগ দলীয় দুই কাউন্সিলরের নেতৃত্বে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট চালিয়েছে সরকারদলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের হামলায় অনেক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। সরকারের পায়ের নিচে আর সর্ষে পরিমাণও মাটি অবশিষ্ট নেই বলেই তারা দ্বিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে বেপরোয়া গতিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা শুরু করেছে। লাকসামে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত, ন্যক্কারজনক ও কাপুরুষোচিত হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপি নেতা সুরুজ চৌধুরী, সেলিম আহমেদ, আবুল হোসেন মিলন, সাদেক হোসেন, আবুল বাশার, জামিলুর রহমান সোহেল, শামছুল হক সামু, যুবদল নেতা বেলাল রহমান মজুমদার, মাহবুবুর রহমান মানিক, মাহবুবুল হক মনু, নাজমুল হাসান, মজনু চৌধুরী, সফি উল্যা, সোহাগ হোসেন, মিন্টু, ছাত্রদল নেতা অ্যাড. নাজমুল হাসান রনি, মহিন উদ্দিন, জাফর আহমেদ, পাখী আক্তারসহ ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমি লাকসামে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এ ধরনের পৈশাচিক হামলা, নেতাকর্মীদের আহত ও লুটপাটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। কিছুদিন আগে সিরাজগঞ্জে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যুবদল নেতা আকবর আলীকে নির্মম ও পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের সেই চিহ্নিত আসামিরা পুলিশের সামনে মানববন্ধন করে, পুলিশ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ দূরে থাক, তাদেরকে সহায়তা করছে। এজাহারভুক্ত আসামিরা থানায় বসে গল্প করে, অথচ নিহতের পরিবার-পরিজন এলাকায় থাকতে পারছে না, তাদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে এবং চরম হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।