চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে মির্জা আব্বাস
সবকিছুর দাম বেড়েছে, শুধু বাড়েনি মানুষের দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৮ এএম, ১ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:১৩ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমাদের বাংলাদেশ আজ অদ্ভূত এক দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে ৪০ টাকা ডিমের হালি, তেলের দাম ১৮০ টাকা, ১২৬০ টাকা গ্যাসের চুলা, ৭০ টাকা চাল, ১২০ টাকা ডাল। সবকিছুর দাম বেড়েছে, শুধু বাড়েনি মানুষের দাম। একদিকে মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে দিশেহারা আর সরকারের নেতা পাতি নেতারা ব্যস্ত লুটপাটে। মফস্বলের ছাত্রলীগ নেতার অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায় দুই হাজার কোটি টাকা।
আজ সোমবার বিকেলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর পলোগ্রাউন্ড স্কুল সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে তখনই তাদের নেতাকর্মীরা লুটপাট করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। ১৯৭৩-৭৪ সালে তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলায় ৩৫ হাজার নেতাকর্মীকে খুন করেছিল। চারটি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করেছিল। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দিয়েছিল। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আজকের আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো তফাৎ নেই।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে। আর আজকের প্রধানমন্ত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জনগণের ভোটচুরি করে। এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো মায়া দয়া নেই। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, আপনারা আর কোনোদিন ভোট দিতে পারবেন না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হবে, সেদিনই বাংলার জনগণ ভোট দিতে পারবে। ইনশাল্লাহ বিএনপি সেদিন সরকার গঠন করবে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সময় একটি সুন্দর বাংলাদেশ ছিল, গুম-খুন ছিল না, দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হত না। এই প্রধানমন্ত্রীর সময় গুম-খুন হচ্ছে। দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে। দেশের মানুষ কথা বলতে পারে না। কথা বললে গুম হয়ে যায়, খুন হয়ে যায়। বিএনপির নেতাকর্মী সবাইকে মামলা দেয়া হয়েছে। এই প্রধানমন্ত্রী থাকলে দেশে কোনোদিন গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। আর গণতন্ত্র ফিরে না এলে আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে না।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকার জন্য সাজা দেয়া হয়েছে। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই, দুই কোটি টাকা বেগম জিয়ার অ্যাকাউন্টে ছিল যদি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে রাজনীতি করব না। দুই কোটি টাকা আট কোটি টাকা হয়ে গেছে। একটা টাকাও তসরুফ হয়নি। বিএনপির নেত্রীর অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা, বিএনপির অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ আর কোনোদিন রাজত্ব করতে পারবে না। এ কারণে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গুম-খুন।
তিনি বলেন, মন্ত্রীরা বলছেন, কোনো গুম-খুন নাকি হয়নি। গুম-খুন যদি না-ই করে থাকেন, তাহলে স্যাংশন দেয়া হল কেন? গণতন্ত্রকে হত্যার দায়ে, মানুষ খুনের দায়ে, গুমের দায়ে স্যাংশন দেয়া হয়েছে। আজ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা হয়েছে আপনারা চোরের দল, আপনারা লুটের দল, আপনারা খুনির দল, আপনারা মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর দল, এটা আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। পুলিশ ভাইদের বলব, আপানারা আমাদের মিছিলে হামলা করেন, মিটিংয়ে হামলা করেন। কিন্তু ক্ষমতা হারালে তারা যখন পালাবে, আপনাদের কি সাথে নিয়ে যাবে? সুতরাং সরকারের অন্যায় আদেশ নয়, রাষ্ট্রের নিয়মনীতি মেনে চলেন।
চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহবায়ক জনতার মেয়র ডা.শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর এর পরিচালনায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, এএম নাজিম উদ্দীন, সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, শহিদুল ইসলাম বাবুল।
বক্তব্য রাখেন, আবু সুফিয়ান, এমএ আজিজ, এডভোকেট আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, এসকেকোতা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, কাজী বেলাল, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মোহাম্মদ শাহআলম, আবদুল মন্নান, ইস্কান্দর মির্জা, কামরুল ইসলাম, শেখ নুরুল্লাহ বাহার, মোহাম্মদ আলমগির, মোশারফ হোসেন দিপ্তি, মোহাম্মদ রাসেদ, মোহাম্মদ সাহেদ, বেলায়েত হোসেন বুলু, ফাতেমা বাদশা, মনোয়ারা বেগম মনি, জেলি চৌধুরী, মোহাম্মদ সাইফুল আলম, শরিফুল ইসলাম তুহিন, হাজী নুরুল হক প্রমুখ।
দুপুর ২ টা থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ব্যানার নিয়ে সমাবেশে আসতে থাকে। ৩ টায় সমাবেশ স্থল ভরে উঠে।সকলের মুখে মুখে স্লোগান ছিল দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়লো কেন শেখ হাসিনা জবাব চাই। মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।
সভাপতির বক্তব্যে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, গুম খুনের দিন শেষ খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কথিত এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই সরকারের মতো এই কমিশনও অবৈধ। তাই আমরা আগে যে স্লোগান দিয়েছিলাম, গলি গলি মে সুর হে, ইভিএম মেশিন চোর হে, ইভিএম মেশিন চোর হে, শেখ হাসিনা চোর। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।
প্রধান বক্তা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, এই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। ভোট ডাকাত সরকার তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করার জন্য আবারো তথাকথিত নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এই নির্বাচন কমিশন ও অতীতের মতো আওয়ামী নির্বাচন কমিশন হিসেবে কাজ করবে। কাজেই এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া তো দূরের কথা আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের লুটপাট দুর্নীতি সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আওয়ামী বাকশালীদের সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে। সরকার দেশকে উন্নত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রচার করলেও এখনো মানুষ না খেয়ে অনাহারে দিন যাপন করছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি লিপ্ত হয়েছে এই সরকার। এই মেঘলা দুর্নীতির হিসাব একদিন দিতেই হবে, দুর্নীতির সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আজকে বিচার বিভাগ আইন বিভাগ থেকে শুরু করে সরকার প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস করে দিয়েছে। এই আওয়ামী সিন্ডিকেটের কবল থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে। এই সিন্ডিকেটের অধীনে দেশ ও দেশের স্বাধীনতা কোন কিছুই নিরাপদ নয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বীর চট্টলা আমাদের আবেগ-অনুভূতির জায়াগা। এই চট্টগ্রাম থেকে এরশাদের পতন হয়েছে, শেখ হাসিনার পতন হবে। আমরা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার কর্মী, আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে লুটপাটকারী দল। গণতন্ত্র ধ্বংসকারী। বেগম খালেদা জিয়া নয় বছর আন্দোলন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আর শেখ হাসিনা তা ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশ যখন বিপদে পড়েছে জিয়া পরিবার হাল ধরেছে। এই করোনাযাও আওয়ামী লীগের লোকজন লুটপাট ছাড়ে নাই। তাই তারেক রহমান বলে দিয়েছেন, বাংলাদেশ যাবে কোন পথে, ফয়সালা হবে রাজপথে।
কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার দেশের গণতন্ত্রকে বিপন্ন করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে। শেখ হাসিনার দুর্নীতির যে ইতিহাস, গুম খুনের যে ইতিহাস, সেজন্য তাকে বাংলাদেশের মানুষ একদিন মমি করে রাখবে। ২০১৮ সাল ও ২০২২ সাল এক নয়। আগের মতো নিশিরাতের নির্বাচন আর করতে দেওয়া হবে না। এই চট্টগ্রাম থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে এই সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।