সার্চ কমিটি যাদের দিয়ে করেছে তারা প্রত্যেকেই আ'লীগের লোক : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৫ পিএম, ২২ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৫৩ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার মতো লোক দিয়েই দেশের ১৩তম নির্বাচন কমিশন গঠন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সার্চ কমিটি যাদের দিয়ে করেছে তারা প্রত্যেকেই তাদের (আওয়ামী লীগের) লোক দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রত্যেকটা, একটাও বাদ নেই। আজকে আবার নামগুলো পাঠাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। যাদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে, দেখা যাবে তারা সেই হুদার মতোই লোক।’
আজ মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ফসলের মাঠে কৃষকের আত্মহত্যায় ফ্যাসিবাদী শাসনের নির্মম বাস্তবতার দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় দলের মহাসচিব এমন মন্তব্য করেন।
১৩তম নির্বাচন কমিশন গঠন করতে সার্চ কমিটি এরই মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠনসহ ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে নাম নিয়েছেন। সার্চ কমিটির কাছে কোনো নাম দেয়নি বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবিতে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে দলটি।
এদিকে বিএনপির নাম প্রস্তাবের জন্য সার্চ কমিটি সময় বাড়িয়েছে। এই সুযোগ গ্রহণ না করে নতুন কমিশন গঠনের আগেই অবস্থানের কথা জানালেন দলের মহাসচিব।
ক্ষমতাসীন সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন তারা আবার নির্বাচিত হওয়ার জন্যে তাদের মতন করে ইলেকশন কমিশন গঠন করবে। সে জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছে। আইনও তৈরি করেছে। সবগুলো জনগণকে বোকা বানানোর জন্য।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ অনেক মুখরোচক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারা বলেছিল— ১০ টাকায় চাল খাওয়াবে। বিনাপয়সায় সার দেবে। এই আশায় অনেকে তাদের ভোট দিয়েছিলেন। কিছু দিন না যেতেই দেশের মানুষ টের পেলেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি স্রেফ ভাওতাবাজি ও প্রতারণা। তখন গান রচনা হলো— ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না।’
বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে বিচারের আওতায় আনায় মত দেন তিনি। পাশাপাশি সিইসিকে জনগণের কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে বলেও যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
কৃষক শফিউদ্দিনের চলে যাওয়ায় গভীর শোক প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যে সব আওয়ামী সন্ত্রাসদের কারণে তার এই চলে যাওয়া সেইসব সন্ত্রাসদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রদর্শন করেন।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ভোটারবিহীন সরকারের যে দুঃশাসন, নৈরাজ্য, ফ্যাসিবাদের যে আগ্রাসন, তার বিরুদ্ধে শফিউদ্দিনের যে আত্নহনন হচ্ছে একটি প্রতিকী আত্মহত্যা।’
এদিকে গত ২ ফেব্রুয়ারি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার মানিকচাঁদ গ্রামে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী মহল কর্তৃক সেচ পাম্প স্থাপনে বাধা দানের প্রতিবাদে নিজের ফসলের মাঠে ফাঁসির মঞ্চ বানিয়ে কৃষক শফিউদ্দিন আত্মহত্যা করেন। এদিকে শফিউদ্দিনের অসহায় পরিবারকে সহানুভূতি জানাতে কৃষকদলের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলেও গিয়েছিলেন। পরে ঢাকায় আবার প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সংগঠনটি।
নিজেকে বয়স্ক মানুষ উল্লেখ করে বিএনপি’র এই নেতা বলেন, যারা স্বাধীনতার সংগ্রামে বহু আগে থেকে জড়িত তাদের সামনে এ সমস্ত কথা বলা অর্থহীন মনে হয়।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালে ক্ষমতায় আসার পর তাদের দুঃশাসনের কারণে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ সংগঠিত হয়েছিল। যেখানে লক্ষাধিক মানুষ না খেয়ে মারা গেছেন। রংপুরের বাসন্তী মাছের জাল পড়ে লজ্জা নিবরণ করেছেন।’ এই সরকার দাবি করে কৃষি উৎপাদনে শীর্ষে পৌঁছে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর ৬৭ লাখ টন খাদ্য আমদানী করতে হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা।’ কৃষির বৈপ্লবিক পরিবর্তন করেছেন জিয়াউর রহমান বলে যোগ করেন তিনি।
করোনাতে মানুষের অনেক কষ্ট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষকদের জন্য এই সরকার কিছুই করে নাই। যারা প্রান্তিক মানুষ আছে তাদের আড়াই হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল; তার ৯০ শতাংশ আওয়ামী লীগের দালালদের কাছে পৌঁছে গেছে।' ’কৃষির উন্নয়নের জন্য মেশিন ট্রাক্টর দেয়া শুরু করেছিল তার ৯০ শতাংশ আওয়ামী লীগের ঘরে চলে গেছে। ব্যবসায়ীরা পরিস্কার করে বলেছে আমরা কোনো প্রণোদনা পাই নাই।’
এই প্রতিবাদ সাধারণ কোনো প্রতিবাদ নয়, জানিয়ে কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন বলেন, ‘এ লজ্জা শুধু ওই কৃষকের নয়। লজ্জিত হয়েছে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ। লজ্জিত হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র।’
বাংলাদেশের কৃষক সমাজ ভালো নেই জানিয়ে কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘সকল শ্রেণী পেশার মানুষ নিপীড়িত অবহেলিত। সাধারণ মধ্যবিত্তের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সভাপত্বিতে সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল। এছাড়া সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।