দেশবাসীর প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিষ্ঠুর রসিকতা : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪৯ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৪০ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বানিজ্য মন্ত্রী গত পরশু বলেছেন, 'দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের কিছইু করার নেই'। বানিজ্য মন্ত্রীর বক্তব্যে বোঝা যায়-দেশ চালাচ্ছে না আওয়ামী লীগ, আপনাদের কিছুই করার নেই তাহলে দেশ চালায় কে ? দেশ চালাচ্ছে অদৃশ্য শক্তি। মাঝে মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব অদৃশ্য শক্তিধরদের বক্তব্য পাওয়া যায়। বানিজ্য মন্ত্রীর বক্তব্য দুর্নীতির পক্ষে জোরালো সাফাই ছাড়া কিছু নয়। কর্মহীনতা, অর্ধাহার, অনাহারক্লিষ্ট দেশবাসীর প্রতি এটি মন্ত্রীর নিষ্ঠুর রসিকতা।
আজ রবিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় বলেছেন-বিএনপি ৫ বছরের ক্ষমতাকালে দেশকে ৫০ বছর পিছিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ কোন দিক দিয়ে এগিয়েছে সেটির কিছুই বলেননি। আওয়ামী সরকার দেশকে যে পিছনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে, সে বিষয়ে কিছুই বলেননি। উনার বক্তব্য শুনে মনে হয়-তিন কোন 'আজগুবি ইন্সটিটিউট' এ লেখাপড়া করেছেন। উদ্ভট তথ্য প্রদানের হেড মাস্টার হলেন মিঃ সজীব ওয়াজেদ জয়। ভোটারবিহীন নির্বাচন আর নিশিরাতের নির্বাচন করে গণতন্ত্র হত্যার মাধ্যমে ইয়াহিয়া-টিক্কার মডেলের শাসকদের উপদেষ্টার মুখে এমন কথাই মানায়।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক লুট, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচারে যে সরকার দায়ী তাদের উপদেষ্টার মুখে এমন কথাই মানায়। তিনি বিএনপি আমলের দলীয়করণের কথা বলেছেন। অথচ বর্তমানে দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসনকে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন, বিচার বিভাগে দলীয় লোক বসিয়ে বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রায় দিলে সেই বিচারককেও দেশান্তরিত হতে হয়। আওয়ামী শাসনে 'ফরমায়েসি রায়' এখন বিচার বিভাগের রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এই শতকে সভ্যতার সবচেয়ে বড় সংকট সৃষ্টি করেছে আওয়ামী সরকার। এরা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আদিম হিংস্রতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
আওয়ামী লীগ সরকার গত ১২ বছরে দেশের মানুষকে গরীব বানিয়ে দিয়েছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অপঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
রিজভী বলেন, আইসিটি উপদেষ্টা সাহেব বিএনপি আমলের দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কথা বলেছেন। তাহলে নিম্নে গণমাধ্যমে প্রকাশিত যে পরিসংখ্যান তাহলো এই-
বিএনপি আমলে মোটা চালের দাম ছিল ১৬ থেকে ১৭ টাকা, যা বর্তমানে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। চিকন চালের দাম ছিল ২২ থেকে ২৪ টাকা যা বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সোয়াবিন তেলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা, বর্তমানে দাম হলো ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। গরুর গোশতের দাম ছিল কেজি প্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, যা বর্তমানে ৬৫০ টাকা। মুসুর ডালের দাম ছিল কেজি প্রতি ৪৫ টাকা, যা বর্তমানে ১৩০ টাকা। ব্রয়লার মুরগীর দাম ছিল কেজি প্রতি ৫৫ টাকা, এখন ১৭৫ টাকা। গুঁড়ো দুধ ছিল কেজি প্রতি ২৮৫ থেকে ৩৪৫ টাকা, যা বর্তমানে ৫৯০ থেকে ৬৫০ টাকা। পেয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা, যা বর্তমানে ৫৫ টাকা-কয়েকদিন আগে ছিল ১৩০ টাকা। আলু কেজি প্রতি ছিল ৬ টাকা, এখন ২৫ টাকা।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধগতি, আইনের অপশাসন, গুম-খুন-বিচার বহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে আওয়ামী সরকার বাংলাদেশে গধহ সধফব ফরংধংঃবৎ সৃষ্টি করেছে। আসলে আওয়ামী নেতাদের বক্তব্য আদতে লুট, দাঙ্গা, হত্যা, ধ্বংস আর রক্তাক্ত উন্মাদনার সমার্থক।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র কর্মসূচী
১। ২১ ফেব্রুয়ারী ভোর ৬ টায় নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন।
২। ২১ ফেব্রুয়ারী সকাল ৬ টায় কালো ব্যাজ সহকারে বলাকা সিনেমা হলের সামনে দলীয় নেতা-কর্মীদের জমায়েত এবং প্রভাতফেরী সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের মাজার জিয়ারত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমূখে যাত্রা এবং শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।
৩। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২ বেলা ২ টায় রাজধানীর রমনাস্থ ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-মিলনায়তনে বিএনপি'র উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও ভাষা সৈনিকবৃন্দ উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন।
সারাদেশেঃ
১। ২১ ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সারাদেশে ইউনিট কার্যালয়গুলোতে সকাল ৬ টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন এবং স্থানীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।
২। ঐদিন দেশব্যাপী দলের বিভিন্ন ইউনিট স্থানীয় সুবিধানুযায়ী ভাষা শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা করবে।