জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৪ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৫২ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সমগ্র জাতিকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। সেই মানুষটিকে আজ ইতিহাস থেকে মুছে দেয়ার চেষ্টা চলছে। খুব সচেতনভাবেই কাজটি করা হচ্ছে।
আজ শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করার জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৭৪ দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, তারপরই আমরা দেখলাম সেই অবস্থান থেকে জিয়াউর রহমান অলৌকিক শক্তি নিয়ে সবকিছু পাল্টে দিয়েছেন। এক বছর পরেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে দেশ। এমন কোনো জায়গা নাই, যেখানে তিনি হাত দিয়ে পরিবর্তন করেন নাই।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও প্রেসিডেন্ট জিয়াসহ ১২টি বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতা হয় জানিয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি মুক্তিযোদ্ধার দল। স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা এই দলের দায়িত্ব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য, দেশের মানুষের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য। দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল একটি স্বাধীন- সার্বভৌম একটি বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পাবে বলে। সেই লক্ষ্যেই জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন এবং মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। একটি নতুন দর্শন, নতুন জীবনবোধ মানুষের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের ‘ফাঁদে’ জনগণ আর পা দেবে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘এরা (সরকার) গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। খুব কথা বলতে শুরু করেছে কয়েকদিন আগে আমরা সার্চ কমিটিতে নাম দেইনি কেনো? এটা তো আপনার ফ্রাস্ট শুধু না, এটা একটা জনগণের সাথে চরম প্রতারণা। আমরা বিগত নির্বাচনগুলোতে দেখেছি একইভাবে যে তারা তাদের ক্ষমতাকে রাখার জন্য তাদের সমস্ত লোকজনকে দিয়ে তৈরি করে এই নির্বাচন কমিশন। তারা যেটা নির্বাচন করে ওইটাকে বলে আমরাই তো জিতে গেছি, আমরাই এসেছি এখানে গণতন্ত্র পার হয়েছে।’
‘আমি অত্যন্ত পরিষ্কার করে বলতে চাই, ‘এই দেশের জনগণ আর সেই ফাঁদে পা দেবে না, এদেশের জনগণ গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার আওয়ামী লীগের যত পরিকল্পনা আছে সব তারা ধ্বংস করে দেবে, নষ্ট করে দেবে। অতীতের যে ঐতিহ্য সেই ঐতিহ্য নিয়েই তারা আজকে রুখে দাঁড়াবে, অবশ্যই উঠে দাঁড়াবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ভয়াবহ গণতন্ত্রবিরোধী, বাংলাদেশের মানুষবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে রুখে দেয়ার জন্য তারা জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে ইনশাল্লাহ।’
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির উদ্যোগে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ের রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোষণা উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে এই রচনা প্রতিযোগিতা ১২ স্তরে ১২টি বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এই প্রতিযোগিতায় ৪১৯ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। তাদের মধ্য থেকে জাতীয় পর্যায়ে ১৭ জন এবং বিভাগীয় পর্যায়ে ৭৯ জন বিজয়ী হয়।
‘দেশে লুটপাটের অর্থনীতি চালু করেছে’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকেই পত্রিকায় এসেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচক কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা সারাক্ষণ চিৎকার করছে উন্নয়ন উন্নয়ন উন্নয়ন। মনে হয় যে, গোটা বাংলাদেশকে তারা সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছে। হ্যারিটেজ ফাউন্ডেশন আন্তর্জাতিক সংস্থা আছে তারা এই বিষয়ে যে জরিপ করেছে সেখানে তারা বলেছে যে, এখন ১৭৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থা হচ্ছে ১৩৭তম স্থানে। ২০২১ সালে ছিল ১২০তম। অর্থাৎ ১৭ ধাপ নিচে নেমে গেছে।’
‘এই যে সূচক নিচে নামছে এটা ক্রমান্বয়ে নামছে। কারণ তারা (সরকার) অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে প্রথমে জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা হরণ করে, তারা মানুষের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে, মানুষের অর্থনৈতিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। এখানে একটা দুর্নীতির অর্থনীতি বললে ছোট করা হয়, লুটপাটের অর্থনীতি চালু করেছে। একেবারে ডাকাতি, অর্থনীতি চালু করেছে। দুর্নীতি করাটা তাদের মজ্জাগত, এটাকে তারা অপরাধ মনে করে না, এটাকে তারা রাইট মনে করে।’
স্বাস্থ্য খাত, সড়ক-যোগাযোগ-সেতুসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক দুর্নীতির চিত্রও তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এসব লুটপাট হচ্ছে তাদের কাছে উন্নয়ন। তাদের (আওয়ামী সরকার) উন্নয়ন হয়েছে, তারা কোটিপতি হয়েছে। তারা বিদেশে বেগমপাড়া তৈরি করছে। এসব খবর উঠে আসছে।’
‘যাদের ব্যবহার করে তারা ক্ষমতাকে টিকিয়ে রেখেছে তাদের সঙ্গে শেয়ার করছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর দাবি- আমাদের কোনো আপত্তি নেই, আমরা খুশি হবো। কিন্তু সেই সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের আয় তো বৃদ্ধি করতে হবে, সেই সুযোগ তো তৈরি করতে হবে। সেটা কিন্তু হচ্ছে না।’
‘মূল্যস্ফীতি বেড়েছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ইনফ্লুয়েশন কোথায় কোথায় ২০০% পর্যন্ত বেড়েছে। আজকে চাল-ডাল-তেল-লবণের দাম যে হারে বেড়েছে এটা কোনো স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না।’
‘এটা তো একটা পুরোপুরিভাবে ভেনিজুয়েলা বা নাইজেরিয়ার মতো অবস্থা হয়ে যাচ্ছে, যেখানে আপনার এই অপচয়, অপব্যবহার, দুর্নীতির কারণে এদেশ একটা ফেইল্ড স্টেটে পরিণত হয়েছে।’
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির আহবায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হচ্ছে। আমরা এখন থেকে পুরো মার্চ মাসব্যাপী আমাদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির বিভিন্ন কর্মসূচি শুরু করবো। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতার সঠিক ও প্রকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরব।’
রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এ বি এম আবদুস সাত্তার, রিয়াজউদ্দিন নসু, শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
এ সরকারকে হটাতে রাজপথে নেমে এসে রুখে দাঁড়ানোর আহবান :
সরকার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আবারো মিথ্যা মামলা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘এই কিছুদিন আগে গত পরশু আব্দুস সালাম (মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক) হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। একটা ঘটনা ঘটেছে সবার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এ রকম প্রায়ই হচ্ছে আপনি দেখবেন। যেহেতু তাদের (সরকার) সময় ঘনিয়ে এসেছে এখন তারা একটু বেশি করে এগুলো (মামলা-মোকদ্দমা) করার চেষ্টা করছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। কারোই কোনো দিন হয়নি।’ ‘যারা মানুষের ওপর জুলুম করে, অন্যায় করে, অত্যাচার করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, যারা চুরি করে, লুট করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে দিয়ে টিকে থাকতে চায়, তারা কখনোই চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। অতীতে পারেনি, এখনো পারবে না।’ এ সরকারকে হটাতে রাজপথে নেমে এসে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, ৩৫ লাখ আসামি- চিন্তা করতে পারেন। কোনো দেশে কোথাও এই ধরনের নজির আছে বলে আমার জানা নেই যে, একটা গণতান্ত্রিক দলের ৩৫ লাখ লোককে আসামি করা হয়েছে, লক্ষাধিক মানুষের বিরুদ্ধে মামলা।’
‘এই যে অবস্থাটা এখান থেকে যদি আমরা নেমে আসতে না পারি, রাজপথে নেমে আসতে পারি তাহলে এর একটা উত্তর আছে। তাই এই সংকট উত্তরণের একটাই মাত্র পথ অবিলম্বে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করে এখানে একটা নির্বাচন হতে হবে, যে নির্বাচনে সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন, সরকার গঠন করবেন, পার্লামেন্ট গঠন করবেন। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করি।’
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী তাঁতী দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে শেরেবাংলানগরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
তাঁতী দলের নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাঁতী দলকে বলব, মূল্যায়ন হয় না অথবা আপনাদের গুরুত্ব দেয়া হয় না- এই কথাগুলো ভুলে যান। আপনারা নিজের মূল্যায়ন তৈরি করতে পেরেছেন অলরেডি। আমরা তো স্বীকার করি আপনারা কাজ করছেন।’
‘আপনাদের কাছে আমার আহবান থাকবে আন্দোলন তো শুরু হয়েছে আপনারা সারা বাংলাদেশ থেকে তাঁতী দলের লোকজনকে নিয়ে এসে এখানে একটা সমাবেশ করবেন। ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং আপনাদের সাফল্য কামনা করছি।’
সংগঠনের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব হাজী মজিবুর রহমানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম খান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রাশেদুল হকসহ তাঁতী দলের যুগ্ম আহবায়ক ও সদস্যবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।