শেখ হাসিনা চেয়েছেন ফল, আমলারা গাছসহ দিয়েছেন-কাদের মির্জা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৬ এএম, ৯ জানুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫৪ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র ও আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, ‘এদেশে কি ভোট ডাকাতি বন্দ অইত নয়, অইবো-অইবো। গত নির্বাচনে শেখ হাসিনা চাইছে ফল। আংগো দেশে কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা আছে, কিছু দুর্নীতিবাজ নেতা আছে-হেগুনে শেখ হাসিনারে গাছসহ দিয়ালাইছে। চাইছে ফল, গাছসহ দিয়ালাইছে হেগুনে। হিয়েন কইলে হয়তো আঁর ছাকরিও থাইকতোন। হিয়েন আঁই কই দিছি।’ (এ দেশে কী ভোট ডাকাতি বন্ধ হবে না, হবে- হবে। গত নির্বাচনে শেখ হাসিনা চেয়েছেন ফল। আমাদের দেশে কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা আছে, কিছু দুর্নীতিবাজ নেতা আছে- এরা শেখ হাসিনাকে গাছসহ দিয়েছে। চেয়েছে ফল, তারা দিয়েছে গাছসহ। সেসব বললে হয়তো আমার চাকরিও থাকবে না। কিন্তু আমি বলে দিলাম)।
আবু নাছের চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক নির্বাচনী পথসভায় বৃহস্পতিবার এ কথা বলেন তিনি।
এ পৌর মেয়র বলেন, সব সাংবাদিক, রাজনীতিক, প্রশাসনের লোক খারাপ নয়। যারা খারাপ, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত- তাদের বিষয়ে আমি কথা বলছি, বলব। প্রশাসনের লোক কারও কারও টাকা খেয়ে দুর্নীতি করে, ষড়যন্ত্র করে। তারা মনে করে, শেখ হাসিনাকে তারা ক্ষমতায় এনেছে, ক্ষমতায় রেখেছে। রাজনীতিবিদদের বিচার হয়, প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ আমলাদের বিচার হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানাচ্ছি, এদের বিচার করুন। আপনি অমর হয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের গোমর ফাঁক করে দিয়েছি, এজন্য তারা আমার বিরুদ্ধে। তারপরও বলব, নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। আবদুল কাদের মির্জা এদিন এ ছাড়াও বটতলা ও মুজিব কলেজ গেট এলাকায় পথসভায় বক্তব্য দেন। এসব পথসভায় আরও ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান, সহসভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী বাবুল, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল প্রমুখ। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এ ছোটভাই বলেন, ফেনী-নোয়াখালীর সন্ত্রাসীরা আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র পাঠায়, আমি ভয় পাই না। বিএনপি ও জামায়াতের পোস্টার থাকে, নৌকার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এটা আওয়ামী লীগ কর্মীদের উত্তেজিত করার অপকৌশল। নৌকার কর্মীদের মনে রাখতে হবে, বিএনপি-জামায়াত নৌকার পোস্টারে হাত দেওয়ার সাহস করবে না। ফেনী-মাইজদী থেকে পাঠানো সন্ত্রাসীরা এটা করছে। আবদুল কাদের বলেন, ১৯৮২ সালে কারাগারে গেছি, তাই কারাগারের ভয় দেখাবেন না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্য বাড়ি থেকে রাগ করে এসে ঈদের দিন মুজিব কলেজের হোস্টেলে উপোস ছিলাম। বহুদিন উপোস থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্য কাজ করেছি। চামচারা এখন আমাকে বহিষ্কারের ভয় দেখায়। মালেক উকিল বলেছিলেন, বহিষ্কার করলে দায়িত্ব কমে যাবে তখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রচারে বেশি করে আত্মনিয়োগ করা যাবে। আমাকে বহিষ্কারের ভয় দেখাবেন না। আওয়ামী লীগের এ প্রার্থী বলেন, নির্বাচনকে আমি আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। বহিষ্কার, জেল, গুলি করে; হত্যার হুমকি দিয়ে লাভ হবে না। আমার টাকা কোথা থেকে আসে এ প্রশ্ন কেন? আমার শত শত নেতাকর্মী-সমর্থক টাকা দেওয়ার আছে। যারা প্রশ্ন করেন, তারা কোথা থেকে টাকা পান-নেন তাও আমি জানি। আমার কোনো অভিভাবক নেই, আমার একমাত্র মেয়ে আছে, আমার প্রতি তার দরদ আছে, আল্লাহ আর আপনারা আছেন। তিনি বলেন, যতই ষড়যন্ত্র হোক, বাইরে থেকে সন্ত্রাসী ও আগ্নেয়াস্ত্র পাঠিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হোক, বুকের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও নির্বাচনী পরিবেশ সুন্দর, সুষ্ঠু ও অক্ষুণ্ন রাখব ইনশাআল্লাহ। আবদুল কাদের বলেন, প্রথম আলো থেকে ফোন করে আমার সম্পদের হিসাব চায়। আমার আয়ের উৎস খোঁজে। এ কৈফিয়ত নেওয়ার তারা কে? কৈফিয়ত নিতে হলে শেখ হাসিনা থেকে নিতে হবে, তার কি ব্যবসা আছে। তিনি বলেন, ইত্তেফাকের আলমগীর ইউছুপের স্ত্রী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিল, চিকিৎসার জন্য আমি টাকা পাঠিয়েছি। তার ছেলেমেয়ের বিয়েতে স্বর্ণের চেইন দিয়েছি। এরা এখন একরাম চৌধুরীর (নোয়াখালী-৪ সদর আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরী) টাকা খেয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আবদুল কাদের মির্জা বলেন, পুলিশ বা প্রশাসন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনেনি, তার দৃঢ়তা, তার ব্যক্তিত্ব, তার প্রতি আস্থার জন্যই জনতা তাকে বারবার ক্ষমতায় আনছে, ভবিষ্যতেও আনবে। কারণ তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন। তিনি গরিবদের ১০ টাকায় চাল দিচ্ছেন, গৃহহীনদের ঘর দিচ্ছেন, ভূমিহীনদের ভূমি দিচ্ছেন। আর দুর্নীতিবাজরা গরিবের একের ঘর অন্যকে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ঘরে ঘরে বেকারদের চাকরি দেওয়ার। কিন্তু কিছু কিছু এমপি-নেতা নিয়োগ ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তারা ঘর ও ভূমি দিচ্ছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার কথা বলেন না।