সার্চ কমিটি নিয়ে আগ্রহ নেই বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫২ এএম, ৬ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৩ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির ঘোষিত সার্চ কমিটি নিয়ে আগ্রহ নেই বিএনপির। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গঠিত অনুসন্ধান কমিটিকে অর্থহীন বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এর কোনো মূল্যই নেই।
আজ শনিবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা মনে করি অনুসন্ধান কমিটি, নির্বাচন কমিশন সবই সরকারের অধীন। এগুলো নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। এটা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। নতুন বোতলে পুরাতন মদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন নয়, জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। কারণ, এটা প্রমাণিত, এই সরকারের অধীন কোনো অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়নি, হবে না। তাই এই মুহূর্তে অনুসন্ধান কমিটি, নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি ঘোষণা আওয়ামী লীগ সরকারের ভোট চুরির প্রজেক্ট। সার্চ কমিটি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টতা নেই। জণগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে আসবে না এমন সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপি ভাবছে না।
এর আগে দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে অনুসন্ধান কমিটি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে পৃথক প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ।
তিনি বলেন, সার্চ কমিটি আমাদের কোনো বিষয় না। কারা আছে, কারা নেই, কে থাকল, কে থাকল না- এসব জানতে আমরা ইন্টারেস্টেডও না। ঘোষিত অনুসন্ধান কমিটির বিষয়ে বিএনপির অবস্থান কী, জানতে চাইলে ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, আমাদের দলের অবস্থান খুব পরিষ্কার। আমরা মনে করি, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এখন সার্চ কমিটিই হোক বা যেই হোক, আর যে নির্বাচন কমিশনই থাকুক, এই সরকার থাকলে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না। ফলে এই নিয়ে কোনোরকম মন্তব্য করতে চাই না। ঘোষিত অনুসন্ধান কমিটিকে আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ বলছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই সরকার অনেক কিছুই বলে। এর আগের কমিশনের ব্যাপারেও বলেছিল নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ লোক সবাই। পরে আমরা যে নির্বাচন কমিশন পেয়েছিলাম, সেটা মনে হয় বাংলাদেশের জঘন্যতম নির্বাচন কমিশন।
সার্চ কমিটির সদস্যদের নিরপেক্ষতার বিষয়ে জানতে চাইলে টুকু বলেন, আমি তো বলেছি, এই সরকারের আমলে তো এটা অন্য প্ল্যানেট থেকে এনে বানায় নাই, এই প্ল্যানেট থেকেই করেছে। সব সেক্টর সবার খবর জানে কে কি করে? বাংলাদেশ খুব ছোট জায়গা। সবার খবর সবাই জানে। আমার মুখ দিয়ে না বলিয়ে আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। সার্চ কমিটি গঠনের পর বিএনপি এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, একাধিক নেতৃবৃন্দের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা আগ্রহও দেখায়নি।
নির্বাচন কমিশন গঠনের সংসদে বিল পাসের পরপরই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এই আইন আমরা মানি না। এটি শুধু আমাদের কাছে নয়, দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, গ্রহণীয় হতে পারে না। আর যে আইন মানুষ গ্রহণ করে না- সেটি কোনো আইনই নয়, সেটাকে কেউ মানবে না, এটাকে কেউ মানবেই না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমার কথা পরিষ্কার আমরা বিএনপি নির্বাচন কমিশন নিয়ে ইন্টারেস্টেড না। আমাদের ইন্টারেস্ট হলো যে, এমন একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, এমন একটি প্রশাসন থাকবে যে প্রশাসন একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন জনগণকে দিতে পারবে। যেটা ১৯৯১ সালে দিতে পেরেছে, ১৯৯৬ সালে দিতে পেরেছে এবং ২০০১ সালে দিতে পেরেছে সেই রকম একটা সরকার দরকার। নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে বিএনপির কেনো আগ্রহ নেই জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কথা আপনারা বোঝেননি। আমি বলেছি, সরকার নিরপেক্ষ না হলে কমিশন কী করবে? নির্বাচন পরিচালনা করবে সরকার। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে নির্বাচন কমিশন দিয়ে কী হবে? নির্বাচন কমিশন তখনই কার্যকর হবে যথন একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকবে। আমি মনে করি, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এটা বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে এবং এই সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হলে মানুষ ভোটও দিতে আসবে না। যেটা অতীতে আমরা দেখেছি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, সার্চ কমিটি হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করা। আওয়ামী লীগের বাইরে সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনকালীন সময়ে দলনিরপেক্ষ সরকার প্রত্যাশা করে। দলনিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতায় না থাকলে প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন কোনটাই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। এটা লোক দেখানো সার্চ কমিটি ভাল কিছু প্রত্যাশা করা যায় না।
আজ শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেই সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি হয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সদস্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এই কমিটির সভাপতি হয়েছেন। সদস্য হিসেবে আছেন হাইকোর্টের বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামান, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষক (সিএজি) মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও লেখক-অধ্যাপক আনোয়ারা সৈয়দ হক। সার্চ কমিটিতে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগই। সার্চ কমিটি নতুন ইসি গঠনের জন্য কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবে। সেই নাম থেকে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।