সরকার নিজেরা নিরাপদে থেকে জনগণকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে-রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৮ এএম, ৮ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৫৬ পিএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নিজেরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে থেকে দেশের জনগণকে সরকার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কীসের স্বাধীনতা, কীসের সার্বভৌমত্ব। মানুষ মরুক, মানুষ ধ্বংস হয়ে যাক- আমার কিছু যায় আসে না- সরকারের হচ্ছে এটাই ভাবনা, প্রধানমন্ত্রীর এটাই ভাবনা। অথচ তিনি নিজে একেবারে পাহারার মধ্যে।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে সরকার নিজের দেশের জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে, যে সরকার দেশের জনগণকে মহামারির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে, সেই সরকার দেশের জন্য কীইবা করবে? মানুষের জন্য কীইবা করবে? প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের সাহেব একেবারে এমন এক বৃত্তের মধ্যে আছেন যেখানে করোনা ভাইরাস দূরে থাক, মশা-মাছিও ঢুকতে পারবে না। এই ধরনের স্বার্থপরতা নিয়ে যারা দেশ শাসন করে তারা কখনোই জনগণের বন্ধু হতে পারে না।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীল সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্ট্যাডিজ (সিএনএস)-এর উদ্যোগে ‘ফেলানী ও সীমান্ত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এমন অভিযোগ করেন।
করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার ‘তেলেসমাতি’ খেলা শুরু করেছে, অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে সরকার করোনার টিকা নিয়ে তেলেসমাতি শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব বলছেন, এটা ভারতের সাথে জিটুজি (গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট) চুক্তি হয়েছে, সরকারের সাথে সরকারের চুক্তি হয়েছে। বেক্সিমকো বললো- না, এটা একটি বাণিজ্যিক চুক্তি। কোনটা বিশ্বাস করবেন?
এর মধ্য দিয়েই বোঝা যাচ্ছে যে, একটা শুভঙ্করের ফাঁকি এবং যেটাকে একেবারে রূঢ় ভাষায় বলা যায় যে, টাকা কামানোর জন্য অর্থ কামানোর জন্য একটা ফাঁদ পাতা হয়েছে। এটা কাভার দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। স্বাস্থ্য সচিবকে দিয়ে বলানো হচ্ছে যে, এটা জিটুজি চুক্তি- বলেন রিজভী।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, আসলেই বেক্সিমকো ভ্যাকসিনের এই চুক্তিটা করেছে। এই টাকাটা অনেক জায়গায় যাবে, এই টাকাটা কর্তা ব্যক্তিরাসহ সব জায়গায় যাবে। এই কারণে ওপরে একটা প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে স্বাস্থ্য সচিবকে দিয়ে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- কেন বেক্সিমকো? এই লোকটা (সালমান এফ রহমান), এই দরবেশ- সে তো অভিযুক্ত ব্যক্তি। ২০১০ সালে শেয়ার মার্কেটকে ধবংস করার জন্য দায়ী এই ব্যক্তি। আওয়ামীমনস্ক একজন সম্মানিত ব্যক্তি ইব্রাহিম খালেদের নাম শুনেছেন, যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। তার নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি হয়েছিলো সেই তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন এই দরবেশ।
সালমান এফ রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী আরও বলেন, সেই দরবেশের ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ভারতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করছে। এখানে জনগণের কোনও স্বার্থ নেই, এখানে করোনা মোকাবিলার জন্য অথবা করোনা আক্রান্ত মানুষের সেবা দেয়ার জন্য যে টিকা দেয়া দরকার- এটার কোনও কিছুই থাকবে না। এখানে থাকবে উৎকট টাকা চুরির একটা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের সংগ্রহের জন্য একনেকে ৬ হাজার কোটি টাকা পাস হয়েছে। আমরা বলে দিচ্ছি- এই টাকার পুরোটাই লোপাট হবে। এটা বেক্সিমকোর মতো যারা শেখ হাসিনার উপদেষ্টা রয়েছেন সেই উপদেষ্টাদের কাছে এই টাকাগুলো মূলত ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যাবে, এই টাকার একটা বড় অংক চলে যাবে সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে বেআইনিভাবে।
সীমান্তে মানুষ হত্যার ঘটনার জন্য নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকেই দায়ী করে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন রিজভী।
তিনি বলেন, আজকে ভোটারবিহীন, জনসমর্থনহীন, ম্যান্ডেটহীন, নিশিরাতের সরকার সে আত্মসমর্পণ করে দিয়েছে ভারতের কাছে। দিয়েছে বলেই যারা তাদেরকে টিকিয়ে রেখেছে তাদেরই মোসায়েবী করছে, তাদের এই গোলামি করছে। দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আজকে বিএনপি দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ও বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সারা দেশে থানা পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি হচ্ছে। এই মুহূর্তে জনগণের দাবি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন দেশে বেকারত্ব বেড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার জিনিসপত্রের দাম কমেনি, শুধু বেড়েই চলেছে। ঢাকায় বাড়ি ভাড়াও বাড়ছে। আমরা আছি কোথায়? আজকে সকলকে মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। নইলে জনগণ মাটির সাথে মিশে যাবে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, যাদের খাবারের অভাব নেই, স্বল্প মানুষ, মেদ বেশি হয়ে গেছে, তারা মেদ কমানোর জন্য ডায়টিং করেন। আর আজকে বাংলাদেশের নিম্নআয়ের মানুষ, স্বল্প আয়ের মানুষ, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ, এমনকি মধ্যবিত্ত মানুষ অটো ডায়েটিং করছেন জিনিসপত্র কিনতে না পেরে, না খেয়ে তারা অটো ডায়টিং করছেন। বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে জাতীয়তাবাদী শক্তির নতুন প্রজন্মকে আরও সংগঠিত হওয়ার আহবানও জানান রিজভী।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সরকারের কাছে জানতে চাই, এই সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কারা এবং তাদের পারিশ্রমিক, বেতন-ভাতা, সুযোগ সুবিধা কি কি? এটা অবিলম্বে জাতির সামনে তথ্য আকারে প্রকাশ করা হোক। আমরা জানতে চাই, কোন কোন উপদেষ্টা রয়েছেন এবং রাষ্ট্রের কত কোটি টাকা তাদের পেছনে ব্যয় করছেন। কি কি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন। এটা জানার অধিকার আমাদের আছে। সংবিধানেও আছে এবং তথ্য বাতায়ন অধিকারেও আমাদের জানার অধিকার আছে। তিনি বলেন, আর একটা জিনিস আপনাদের মুখ থেকে শুনতে চাই, করোনার টিকা আমদানিতে যদি ভারতের সাথে নয়ছয় হয় তাহলে এর বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করেছেন কিনা এবং দেশের জনগণের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়ার কোনও ব্যবস্থা করবেন কিনা। এই টিকা নয়ছয় হলে প্রধানমন্ত্রী খেয়াল রাখবেন, এটা তারা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কী খেয়াল রাখবেন তা তো ওবায়দুল কাদের ভাই বলেছেন। আজকেও তিনি বলেছেন, ভোট চুরির নির্বাচন আমি করতে চাই না। আমি সত্য কথা বলেই যাবো, তাতে আওয়ামী লীগ আমার যাই করুক না কেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ঘরের মধ্যেই বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। সত্য কথা বলা শুরু হয়েছে। সুতরাং মাস্কের আড়ালে থেকে বেশিদিন নিজের চেহারা আড়াল রাখতে পারবেন না। চেহারার কুৎসিত রঙটা বেরিয়ে যাবেই। আলাল বলেন, বাংলাদেশের বা পৃথিবীর যেকোনও জায়গায় একটা দেশের স্বাধীনতাই শেষ কথা নয়। দেশটির শেষ কথা হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। অরক্ষিত স্বাধীনতা পরাধীনতার মতোই। যে স্বাধীনতা অরক্ষিত সেটা পরোক্ষভাবে পরাধীনতার মতই।
আয়োজক সংগঠনের ট্রাস্টি ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, বিএনপির নির্বাহী কমিটর সদস্য ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন ও ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ।