নির্বাচন কমিশন আইনটি বাকশালের মতোই - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৫ এএম, ৩১ জানুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৫৮ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইনটি ‘বাকশালের মতোই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সংসদে পাস হওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২-এর প্রসঙ্গ টেনে আজ রবিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন বিএনপির জাতীয় কমিটির উদ্যোগে বাকশাল দিবস উপলক্ষে ‘২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ : বাকশাল’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা হয়। এতে সারাদেশসহ বিভিন্ন দেশের দলের প্রবাসী নেতাকর্মীরা অংশ নেন। ভার্চুয়ালি এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘১৯৭৫ : বাকশাল’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং এই গ্রন্থটি দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান। এই গ্রন্থটি প্রকাশক করেছে বিএনপি। গ্রন্থের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ এন্ড কমিউনিকেশন সেন্টারের পরিচালক সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে যে কাজটি ১৯৭৫ সালে করতে পারেনি, সেই কাজ করার জন্য তারা (সরকার) ধীরে ধীরে পদক্ষেপ নিয়ে নিয়ে এগিয়ে গেছে। একটা মোড়ক রেখেছে সামনে, একটা ছদ্মবেশ- অবয়ব-লেবাস যে বহুদলীয় গণতন্ত্র এখানে আছে। আসলে এখানে কোনো বহুদলীয় গণতন্ত্র নেই। একটা নির্বাচনের লেবাস, যে নির্বাচন তারা দুটি ইতিমধ্যে করেছে, যেখানে সত্যিকার অর্থে জনগণ তাদের ভোট দেয়ার অধিকার পর্যন্ত পায়নি এবং আবার একটা আইনও তৈরি করলো কয়েকদিন আগে। ঠিক সেই বাকশালের মতোই। যেটা ১১ মিনিটে ছিল, এটা সাত দিনের মধ্যে তারা একটা আইনও পাস করে নিলো সংসদে।
তিনি বলেন, বাকশাল একটি গালিতে পরিণত হয়েছে। কেনো? এই বাকশালের মধ্য দিয়ে সেদিন দেশে অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল, রাজনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছিল, স্বপ্নকে ধ্বংস করা হয়েছিল। একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে তারা দেশ ও জাতিকে গভীর অন্ধকারে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা আজকে ঠিক একইভাবে দেখছি আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে তারা দলীয়করণ করেছে, লুটতরাজের যে অর্থনীতি সেই অর্থনীতিতে পরিণত করেছে, আমরা দেখছি যে, সমস্ত রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডকে অত্যন্ত নিষ্ঠুর হাতে দমন করে, বিশেষ করে যারা স্বাধীনচেতা গণতান্ত্রিক মানুষ তাদেরকে হত্যা-গুমের মধ্য দিয়ে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে এবং প্রতিবাদের যে ভাষা সেই ভাষাকে বন্ধ করা হচ্ছে। বিভিন্ন নির্বতনমূলক আইন তৈরি করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইন তৈরি করে যারা কথা বলতে চান তাদের কথা বলাটা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখন ৪৭ বছর পরে আবার বাকশাল প্রতিষ্ঠার যে নীল-নকশা শুরু হয়েছে, এই নীল-নকশাকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে এবং সেটা আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়েই। আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে, বিএনপির নেতৃত্বে আমাদের এই প্রতিবাদ, এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, একটা উন্নত বাংলাদেশ, একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখার যে স্বপ্ন আমরা প্রতি মুহূর্তে দেখি, সেই স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আজ আমাদের সকলকেই ত্যাগ স্বীকার করে দৃঢ় ঐক্যবদ্ধতার মধ্য দিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে একত্রে নিয়ে এসে, সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তির একখানে নিয়ে এসে, সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষকে একখানে নিয়ে এসে আজকে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী বাকশালের নব্য প্রেত্মাতার যে সরকার তাকে সরিয়ে জনগণের সত্যিকার অর্থেই একটা সরকার, জনপ্রতিনিধির পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা অতিদ্রুত দাবি করেছি, সোচ্চার কন্ঠে বলছি যে, এই সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত এবং নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি নির্বাচনেরে মধ্য দিয়ে এদেশে আবার নতুন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন-সোপান আমরা নির্মাণ করতে পারি, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বাকশাল প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের দিনগুলোর মধ্যে সবচাইতে কলঙ্কযুক্ত একটি দিন। কারণ আমরা যুদ্ধ করেছিলাম স্বাধীন মুক্তচিন্তার একটি সমাজ বিনির্মাণের জন্য। বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের সেই আশা-আকাক্সক্ষাকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালেই শুধু এদেশের মানুষ যুদ্ধ করেনি। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই এদেশের মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য এবং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৫২ থেকে ১৯৭১-এর স্বাধীনতার যুদ্ধ পর্যন্ত নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছে। বাকশাল ছিল সেই সংগ্রামী মানুষের সাথে একটি প্রতারণা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম সেটি শুধুমাত্র একটি ভূখন্ডের জন্য নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য ও সমাজকে গণতান্ত্রিক করার জন্য। জনগণের সেই আশা-আকাক্সক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়ে ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সেই ভয়াবহ কলঙ্কময় দিনটিকে স্মরণ করার জন্য ও সেখান থেকে শিক্ষা নেয়ার জন্য স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি আজ যে ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সে জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র এক সাথে যায় না। ১৯৭২ থেকে ’৭৫, ’৭৫-এ বাকশাল প্রতিষ্ঠা এবং গত ১৪ বছর আওয়ামী লীগের এই শাসন, বিনা ভোটে নির্বাচিত সরকার, রাতের অন্ধকারে ডাকাতির সরকার আজকে গায়ের জোরে বাংলাদেশ পরিচালনা করছে। সে জন্য বাংলাদেশেও আজকে সেই বাকশালের চিন্তা-চেতনা যেটা অলিখিতভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। তাই উপসংহার একটাই যে, এই আওয়ামী লীগ তথা এই সরকার আর গণতন্ত্র পাশাপাশি যেতে পারে না। তারা স্বৈরাচারী তারা গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি। গণতন্ত্র নেই বলেই দেশ একটা অন্ধকারের গহবরের কিনারায় পৌঁছেছে। এ থেকে দেশকে রক্ষা করতে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। এখন সময় এসেছে দল-মত নির্বিশেষে সকলে মিলে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারকে সরানোর।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপদযাপনে বিএনপির জাতীয় কমিটির আহবায়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব আবদুস সালামের পরিচালনায় এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।