চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সমাবেশে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
আওয়ামীলীগ আবারো দেশের মানুষের ভোট কেড়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৫ পিএম, ১২ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২২ | আপডেট: ১২:৩৬ এএম, ১৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন- সরকারের বিরুদ্ধে নাকি দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে! আসলে ষড়যন্ত্র মূলত করছে আওয়ামী লীগ। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র করছে। আবার এদেশের মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। বিচার বিভাগকে কুক্ষীগত করে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরে, সরকারের কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র করছে। আগামী নির্বাচনে ভোটচুরির ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সব ভোট চোররা আজ একজায়গায় যুক্ত হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবীতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ পাশে কর্ণফুলী সিডিএ আবাসিক মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আজ একতাবদ্ধ হয়েছে। আন্দোলনের যে জোয়ার শুরু হয়েছে, আগামীদিনে তারা সেই ষড়যন্ত্রকারীদের ধ্বংস করে দেবে। বাংলাদেশের মানুষ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে, যারা যারা ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য আমাদের সভা সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এই যে উত্তাল আন্দোলন শুরু হয়েছে, কোনো শক্তি একে রুখতে পারবে না। যারা বাংলাদেশের আত্মাকে বিক্রি করে দিয়েছে তাদের মূল্য দিতে হবে আগামীদিনে।
আমীর খসরু বলেন, শুনেছি- সরকার নাকি বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা করছে। একটা পরামর্শ দিই, আপনারা আওয়ামী লীগের যে গুটিকতক সমর্থক আছে, তাদের তালিকা করুন। আর বাকি সব বিএনপি। আওয়ামী লীগে এখন কোনো রাজনীতিবিদ নেই। লুটপাটে যারা জড়িত, তারা ছাড়া আওয়ামী লীগে এখন আর কেউ নেই। বাংলাদেশে যে ভোটচুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে আওয়ামী লীগ, মধ্যরাতের ভোটচুরির মাধ্যমে এবং খালেদা জিয়াকে যে কারণে জেলে রাখা হয়েছে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে পরিস্কার হয়েছে যে, এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বেগম জিয়াকে জেলে নেওয়া। এই গুম, খুন, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে ক্ষমতায় গেছে এটা বিশ্বব্যাপী দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে গেছে। আজ আমেরিকায় কংগ্রেস সিনেট সদস্যরা দুই দলের সদস্যরা একসাথে বলছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠন এবং আমেরিকায় দ্বিকক্ষীয় মানবাধিকার গ্রুপগুলো পরিস্কারভাবে বলছে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। পার্লামেন্টে তারা ভোটচুরি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে। বৃটিশ পার্লামেন্ট বলছে। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে নামকরা পত্রিকাগুলো তারাও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে। বাংলাদেশে যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আছে, তারা বলছে বাংলাদেশে যা হচ্ছে এখানে একটি রেজিম ভোটচুরি করে জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণ করে তারা ক্ষমতায় আছে।
দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিস্কারভাবে বলতে চাই- খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না, খালেদা জিয়াকে মুক্ত আমরা করব। কার কাছে মুক্তি চাইব ? একটা অবৈধ, অনির্বাচিত, দুর্নীতিবাজ, দালাল সরকারের কাছে ? খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব আন্দোলনের মাধ্যমে। আবারও বলছি, এই অবৈধ সরকার, এই অনির্বাচিত সরকার তাদের কাছে আমাদের গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আমরা চাইতে পারি না। আগে তাদের পতন ঘটাতে হবে। পতনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। বিএনপি আজ অনেকবেশি শক্তিশালী। গুম-খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলার মাধ্যমে বিএনপির নেতারা জেলে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে।
মহাসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সমুদ্রের পানিকে বালু দিয়ে রক্ষা করা যায় না, সমুদ্রের পানি বাধ ভেঙ্গে দেয়। আজ দক্ষিণ জেলা বিএনপি বাধ ভেঙ্গে দিয়েছে। যে পরিমাণ লোক সমাগম আজ হয়েছে, এটা একটা স্যাম্পল মাত্র। এটা স্যাম্পল। এখনও তো ঘুঘু দেখেছ, ফাঁদ দেখনি। ফাঁদ দেখাব আগামী দিনে। চট্টগ্রামে দেখাব, চট্টগ্রাম বিভাগে দেখাব, বাংলাদেশে দেখাব। এসব ধানাইপানাই করে কোনো লাভ হবে না। ১৪৪ ধারায় কোনো কাজ হবে না। ১৪৪ ধারার দিন শেষ হয়ে গেছে। কথায় কথায় অনুমতি দিয়ে জনসভা করার দিনও শেষ হয়ে গেছে। আগামীদিনে এই বাধ ভাঙ্গা জোয়ার রুখার কারও কোনো শক্তি নাই। সমস্ত বাংলাদেশ আজ ঐকব্যদ্ধ, একতাবদ্ধ। রাজনৈতিকভাবেও ঐক্যবদ্ধ, একতাবদ্ধ।
তিনি বলেন, ওমিক্রন কোভিডের জন্য নাকি সমাবেশ বন্ধ করতে হবে। ওমিক্রন নয়, আসল রোগ অন্য জায়গায়। রোগ হচ্ছে, সরকার পতনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। ওমিক্রনের নাম দিয়ে ১৫-২০ দিন ঠেকাতে পারবেন , না হলে একমাস ঠেকাতে পারবেন। পতন কিন্তু হবেই হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক বলেন, বীর চট্টলার মানুষ বিগত বারটি বছর সরকারের অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছেন। কিন্তু এই বার বছরে বিএনপি'র একটি লোকও অন্যদলে যান নাই। আজকে গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। প্রশাসন দিয়ে বিএনপিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে কিন্তু পারেন নাই। পেরেছন শুধু নেতাকর্মীদের সপ্তাহের পাঁচটা দিন কোর্টের বারান্দায় হাজিরা দিতে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, জনগণ শেখ হাসিনাকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় রেখেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু পাঁচটি আসনে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছে, কিন্তু আপনি পারেন নাই। সেজন্য আপনি বেগম খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে শেষ করে দিতে চাচ্ছেন। আবারো বলছি, অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। আমাদেরকে রাজপথে শোবার ব্যবস্থা করবেন না। আমাদেরকে এতো দুর্বল ভাববেন না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বিএনপির আজকের এই সমাবেশ প্রমাণ করেছে, চট্টগ্রামবাসী শেখ হাসিনার সরকারকে এক মুহুর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই সমাবেশের দাবী, বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। যদি বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেওয়া না হয়, তাহলে চট্টগ্রামকে অচল করে দেওয়া হবে। আমরা ঘরে বসে থাকবো না। বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তিনি চট্টগ্রামবাসীকে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সালাম ও সংগ্রামী শুভেচ্ছা জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, আওয়ামীলীগের নেতারা চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন আর বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করছে। আমরা খালেদা জিয়ার চিকিৎসার অধিকার চাচ্ছি। কিন্তু সরকার দিচ্ছে না। তাই অধিকার আদায় করে নিতে হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব মোস্তাক আহমেদ খান ও আহবায়ক কমিটির সদস্য এস এম মামুন মিয়ার যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি'র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, হারুনুর রশীদ ভিপি।
বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল, সরওয়ার জামান নিজাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক এনাম, মোশারফ হোসেন, এড, ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সভাপতি আশরাফুল আলম লিংকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সাব্বির, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মো. শাহজান, সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুল ইসলাম রাহি, সাধারণ সম্পাদক মন্জুর আলম তালুকদার, ছাত্রদলের সভাপতি শহীদুল আলম শহীদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিন, বাশখালী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মাষ্টার মো. লোকমান, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাজী মো. উছমান প্রমূখ।