ক্ষমতা দখলের কলংকিত অধ্যায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন-বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৪ এএম, ৫ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৪৪ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনের পরেও জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের কলংকিত অধ্যায়। দিনটিকে ঘৃণার সঙ্গে স্মরণ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয় “২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের এক কলঙ্কিত দিন। সেদিন আওয়ামী মহাজোট সরকার সকল বিরোধী দলের দাবিকে উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে রাখে। ১৫৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীই ছিল না। জনগণের দাবিকে পদদলিত করে তারা একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। এই নির্বাচনে ভোটাররা অংশগ্রহণ করেনি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যাতে কোনভাবেই অনুষ্ঠিত না হয়, সেজন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলের যৌক্তিক দাবিকে অগ্রাহ্য করে একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে তাদের পূর্বপরিকল্পিত। একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই তারা সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে। এমনকি সরকারের গঠিত পার্লামেন্টারী কমিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুকূলে মতামত প্রদান করলেও প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়ে তার ইচ্ছা পূরণের দিকে এগিয়ে যান। এরপর শেখ হাসিনা ‘ডকট্রিন অব ফোর্স’ নীতির ওপর তার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে থাকেন। অবৈধ সরকার যৌথ বাহিনীসহ দলীয় সশস্ত্র ক্যাডাররা হিটলারের স্ট্রমট্রুপার বা ইয়ুথ বাহিনীর ন্যায় সারাদেশকে রক্তাক্ত জনপদে পরিণত করে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এরা নিজ দেশের জনগণকে পরাজিত করার উল্লাসে মেতে ওঠে। এর বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়-নারায়ণগঞ্জে তকি হত্যা ও সেভেন মার্ডার এবং লাকসামে বিএনপির সাবেক এমপি সাইফুল ইসলাম হিরু, পারভেজসহ অসংখ্য নেতাকর্মী যারা এখনো গুম হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগ চিরায়ত গণতন্ত্রে বিরোধী দলের যে অস্তিত্ব তাতে বিশ্বাস করে না। আর এই কারণে গুম, ক্রসফায়ার, ভূমিগ্রাস, জোর জুলুম করে চাঁদা আদায়ের মহাযজ্ঞে বিরোধীদলহীন এক নিবিড় শূন্যতা সৃষ্টি করে দেশের জনগণকে মূক ও বধির করতেই ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং আওয়ামী লীগ একসাথে চলতে পারে না। তার নজির প্রতিমুহূর্তেই তারা স্থাপন করেছে দেশের বিভিন্ন জনপদে। বর্তমানে স্বৈরতন্ত্র এক বীভৎস রূপ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। কারো কোনো নিরাপত্তা নেই। ঘর থেকে বের হয়ে আবার ফিরে যেতে পারবে কি না তা অনিশ্চিত। বাংলাদেশে এক ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ আমাদের জাতীয় জীবনে এক বেদনাবিধুর দিন। এদিন গণতন্ত্র হত্যার দিন, এদিন পুরনো বাকশালের নতুনভাবে আত্মপ্রকাশের দিন, এদিন স্বৈরাচারী সরকার কর্তৃক জনগণকে বন্দি করার দিন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রকে বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে দেশে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবিক সাম্য ও বহু মত ও পথের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল ও জনদাবিকে অগ্রাহ্য করে একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকে কালো অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “৫ জানুয়ারি ২০১৪ গণতন্ত্র হত্যার এক নজিরবিহীন কালো অধ্যায়। ঐদিন নির্লজ্জ একতরফা নির্বাচন করার উদ্দেশ্যই ছিল ’৭৫-এর একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবিত করার পথে অগ্রসর হওয়া। ’৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি গঠিত যে একদলীয় বাকশালী সরকার ব্যবস্থা ব্যর্থ হয় সেই ব্যর্থতার জন্য আওয়ামী লীগারদের মনোবেদনা পুঞ্জীভূত থাকে। সেই ব্যর্থতার গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্যই বর্তমান অবৈধ সরকার ভিন্ন আঙ্গিকে জনসমর্থনহীন একটি তামাশার নির্বাচনে সেই একদলীয় বাকশালের নবসংস্করণ তৈরি করেছে। জনমতকে তোয়াক্কা না করে, অ্যামিকাস কিউরিদের মতামতকে উপেক্ষা করে এমনকি নিজ দলীয় সংসদ সদস্যদের মতামতকেও উপেক্ষাসহ সকল বিরোধী দলের দাবিকে অগ্রাহ্যের মাধ্যমে শুধুমাত্র এক ব্যক্তির ইচ্ছায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। স্ববিরোধিতার এক নিকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। যারা জ¦ালাও- পোড়াও-এর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিল তারাই আজীবন ক্ষমতায় থাকার লালসায় সেই ব্যবস্থাটি সংবিধান থেকে মুছে দেয়। আর এটি করতে গিয়ে রক্তের অগ্রজ স্রোতধারায় অর্জিত গণতন্ত্রকে সমাহিত করতে বাংলাদেশের বহুদলীয় বহুমাত্রিক পরিচয়কে মুছে দেয় তারা। গণতন্ত্রের পথচলাকে থমকে দেয়া হয়। দেশে দেশে নিষ্ঠুর একনায়কদের একদলীয় ব্যবস্থার ন্যায় নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রিত তথাকথিত হাইব্রিড গণতন্ত্রকে জেঁকে বসানো হয়েছে জনগণের কাঁধের ওপর। মূলত এটি নাৎসীবাদের বাংলাদেশি সংস্করণ। দেশে এক ভয়াবহ শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজমান। অবরুদ্ধ জাতির সাফোকেশন ভেন্টিলেট যাতে করা সম্ভব না হয় সেজন্য সকল ছিদ্র বন্ধ করে দেয় তারা। বিরোধী কন্ঠ, মত ও পথকে নিশ্চিহ্ন করে বেপরোয়া দেশশাসন করতে গিয়ে জনগণের নাভিশ^াস উঠেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশচুম্ব^ী মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের ভূতুড়ে বিলে স্বল্প আয়ের মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। আর এসব নিয়ে যাতে কোনো প্রতিবাদ না হয় সেজন্য গণতন্ত্রকে রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এখন প্রতিদিন নির্মম নিষ্ঠুরতায় বিরোধী দলের কর্মসূচিকে বানচাল করতে সাজানো প্রশাসনকে বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়েই তারা মানুষের বাক-ব্যক্তি ও বিবেকের স্বাধীনতাকে কঠিন লৌহ শৃঙ্খলে বন্দি করে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের মুখে গণতন্ত্রের কথা বলার অর্থই হলো মানুষের নাগরিক স্বাধীনতার দিকে বিপজ্জনক বার্তা। আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে গণতন্ত্রের ছিটেফোঁটাও কখনো স্থান পায়নি। এরা কথার বাগাড়ম্ব^র দিয়ে ক্ষমতায় এসে প্রথমেই গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরে। এরা আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার শত্রু।
৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর নির্বাচন ছিল ‘৭৫-এর ব্যর্থ বাকশালকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ঐ নির্বাচন স্বাধীনতার মূল চেতনা, গণতন্ত্র ও নাগরিক স্বাধীনতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। দেশের আপামর নির্যাতিত জনগণ এখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। জনগণের উদ্বেল অভিযাত্রা যেকোন মহূর্তে রাজপথে প্রবল স্রোত তৈরি করবে।”
কর্মসূচি :
১। বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জনের পরেও জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের কলংকিত অধ্যায়কে ঘৃণার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য আজ ৫ জানুয়ারি সারাদেশে বিএনপি কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং দলের নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবে।
২। সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় আগামী ৭ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার সারাদেশে থানা পর্যায়ে বিএনপিসহ সকল অঙ্গ-সংগঠন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধনের কর্মসূচি পালন করবে।
৩। এই নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে ব্যার্থতা, দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্বের কারণে সকল দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে আগামী ১০ জানুয়ারি ২০২১ রবিবার বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে পৌরসভা ও মহানগরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে উক্ত কর্মসূচি ঐদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।