সংলাপের নামে চোরাই কমিশন খোঁজা হচ্ছে - হবিবুন-নবী-খান সোহেল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩০ এএম, ৪ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১২ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিবুন-নবী-খান সোহেল বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যে সংলাপ করছেন, এটা কোনো সংরাপ নয়। বিগত নির্বাচনের আগে ইসি গঠনের আগে রাষ্ট্রপতি এমনই সংলাপের নামে সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। যে সার্চ কমিটি খুঁজে বের করেছিল কিভাবে ভোটের আগের দিন ভোট চুরি করা যায়। ভোট চোর আর নাইটগার্ড এক হয়ে ভোট ডাকাতি করেছে রাতের আঁধারে। এবারও সংলাপের নামে ভোট চুরির জন্য চোরাই কমিটি কমিশন খোঁজা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি এই ভোট চোর কমিশন খোঁজার সংলাপে যাবেনা। আগামী নির্বাচনে নির্বাচনকালীন কোন সরকার হবে তা ফয়সাল হবে রাজপথে। আগামীর বাংলাদেশ হবে রাজপথের বাংলাদেশ। সে জন্য জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আপোসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শিশু অবস্থায় ছাত্রদলকে মায়ের মতো পালন করে আন্দোলন সংগ্রাম করে যুগ শ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারকে হটিয়ে ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তাই সেই ছাত্রদল আবারও মাঠে নামবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও দেশে মানুষের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায়।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কোটি টাকার একটিও বেগম খালেদা জিয়া হাতে নেননি। খরচও করেননি। অথছ ফরিদপুরের দুই ছাত্রলীগ নেতা ২ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে, জি কে শামীম শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছে। পাতি নেতারা যখন এতো দুর্নীতি করেছে তখন শীর্ষ নেতারা কি পরিমাণে দুর্নীতি করেছেন তা ভাবনার বিষয়। মূলত: শেখ হাসিনা দুর্নীতির মহাসমুদ্রে দাঁড়িয়ে গডমাদারের ভূমিকা পালন করছেন।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার খুলনায় অনুষ্ঠিত ছাত্র গণ জমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। দুপুর ২টায় নগরীর কে ডি ঘোষ রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ কর্মসূচি যৌথভাবে আয়োজন করে খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রদল।
হাবিবুন-নবী-খান সোহেল বলেন, এদেশের মানুষের ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজন এই অবৈধ সরকারের পতন। আর সে জন্য ছাত্রদলকে সমুদ্রের মতো বিশাল হৃদয় নিয়ে এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো সাহস নিয়ে ১৭ কোটি মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় হতে হবে।।
তিনি সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, র্যাবের সাবেক ও বর্তমান ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আসলে ওই ৬ হলো কান, কান টানলে মাথা আসবে। তাই আগামী নির্বাচনের আগেই এদেশের মানুষ এই যুগ শ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারকে পতন ঘটাবে বিএনপির নেতৃত্বে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশ নায়ক তারেক রহমান। যেমনি শহীদ জিয়ার শাহাদাতের পর বেগম খালেদা জিয়া এদশের মানুষের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করেছেন, ঠিক একইভাবে তারেক রহমান এদেশের মানুষের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও সুশাসন ফিরয়ে আনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি াচিরেই চূড়ান্ত আন্দোলনের রূপরেখা দেবেন। সে আন্দোলনেই বাংলাদেশের ভবিষ্যত রচনা হবে।
ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ইতিহাস ও সংগ্রামের ইতিবৃত্ত তুলে ধরে হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, স্বাধীনতা উত্তরকালে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন মুজিববাদী ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগের সন্ত্র্রাসের রাজনীতি কায়েম হয়েছিল, সেই সময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার রহমানের হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রদল আদর্শবাদী রাজনীতির মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে স্থান করে নেয়। সকল ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাত্রদলের জয়জয়কার। মাত্র ১৭ জন কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করা ছাত্রদল আজ এশিযার বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন।
বিএনপি নেতা সোহেল বলেন, এভারকেয়ার হসপিটালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে তিলে তিলে হত্যা করার জন্যই সাজানো পাতানো মামলায় সাজা দিয়ে নির্জন পরিত্যক্ত কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। জামিন পাওয়া তার অধিকার, কিন্ত আজ্ঞাবহ বিচারপতিদের মাধ্যমে বারবার তার জামিন বাঁধাগ্রস্থ করা হয়েছে।
ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা এ টি এম খালিদের (বীরপ্রতীক) শাহাদাত বরণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সোহেল বলেন, এ টি এম খালিদ ছিলেন খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার মহান ঘোষক, রণাঙ্গণের বীর যোদ্ধা শহীদ জিয়ার গড়া বিএনপিতে তো বটেই, ছাত্রদলেও খেতাবধারী বীর মুক্তিযোদ্ধা রযেছেন। অথচ গোটা আওয়ামীলীগে একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা নেই।
ছাত্র গণ জমায়েতে সভাপতিত্ব করেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু। প্রধান বক্তা ছিলেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। বক্তব্য রাখেন কাজী মো: রাশেদ, ফখরুল আলম, আমির এজাজ খান, তরিকুল ইসলাম জহির, শফিকুল আলম তুহিন, মনিরুল হাসান বাপ্পী, আবু হোসেন বাবু, ওমর ফারুক কওসার, পার্থদেব মন্ডল, মাজেদুল ইসলাম রুমন, আমিনুর রহমান আমিন, তানভির হাসান, তবিবুর রহমান সাগর, মো: রিয়াদ ইকবাল, হেলাল আহমেদ সুমন। স্বাগত বক্তৃতা করেন মহানগর ছাত্রদল আহবায়ক ইসতিয়াক আহমেদ ইস্তি। গোলাম মোস্তফা তুহিন ও মো: তাজিম বিশ্বাসের সঞ্চালনায় সমাবেশের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন আব্দুল্লা কিমিয়া সাদাত। সভার শুরুতে প্রয়াত ছাত্রদল নেতাদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয়।
দুপুর ২ টায় সভা শুরুর কথা থাকলেও অনেক আগে থেকেই বিশাল বিশাল মিছিল এসে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। সকালে পুলিশের বাঁধার কারণে হেলাতলা মোড়ে মঞ্চ স্থাপনে বিঘœ সৃষি।ট হয়। পরে মঞ্চ সরিয়ে দলীয কার্যালয়ের সামনে আনা হয়। এদিকে সময়ের সাথে সাথে মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় খুলনা। একের পর এক বর্ণাঢ্য মিছিলে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে স্লোগান তোলা হয়। ছাত্রদলের কর্মসূচি হলেও তা এক সময় গণসমাবেশে পরিণত হয়। কে ডি ঘোষ রোডের গন্ডি পেরিয়ে থানার মোড়, কালিবাড়ি, নগর ভবন, পিকচার প্যালেস, হেলাতলা, স্যার ইকবাল রোডে বিস্তৃতি লাভ করে। দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষ এসব স্থানে ঠাই নিতে বাধ্য হন। এছাড়া সমাবেশে আসার পথে ডুমুরিয়া সহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাঁধার সৃষ্টি করে।