সিরাজগঞ্জে আ'লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের মামলায় নেই অস্ত্রধারীদের নাম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১৬ পিএম, ২ জানুয়ারী,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:১১ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সিরাজগঞ্জ শহরের কাটাখালি সেতু এলাকায় গত বৃহস্পতিবার যুবলীগ ও বিএনপির সংঘর্ষে তিনজনের হাতে ছিল পিস্তল ও কয়েকজনের হাতে রামদা। ঘটনার একাধিক ছবি ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে অস্ত্রধারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের একাধিক সূত্র। যদিও বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন- সংঘর্ষ চলাকালে গণমাধ্যমে প্রচার হওয়া ভিডিও এবং ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, কেউ যদি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে থাকে, ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারদলীয় নেতাকর্মীরাও জানিয়েছেন, অস্ত্রধারীদের কেউই তাদের দলের নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে বৃহস্পতিবার সিরাজগঞ্জ শহরে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশ ঘিরে এ সংঘর্ষ হয়। এতে প্রাণ না ঝরলেও আহত হন যুবলীগ ও বিএনপির অন্তত ৮৫ নেতাকর্মী। মামলা হয়েছে মোট চারটি। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি এবং শহরের রেল কলোনি মহল্লার আওয়ামী লীগকর্মী উজ্জ্বল হোসেন বাদী হয়ে অপর মামলাটি দায়ের করেন।
আসামি করা হয়েছে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলার সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু, সহসভাপতি আজিজুর রহমান দুলাল, নাজমুল হাসান তালুকদার রানাসহ জ্ঞাত-অজ্ঞাত সাড়ে ৭শ জনকে। তবে অস্ত্রধারীদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেলেও আসামির তালিকায় নেই কারও নাম। এমনকি পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি কোনো আসামিকেই।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে, সংঘর্ষের সময় পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে রামদা নিয়ে মহড়া দেওয়া বিশাল দেহের কালো গেঞ্জি গায়ে থাকা ব্যক্তির নাম সাগর আলী ওরফে পাঙ্গাস। তার বাড়ি শাহেদনগরের ব্যাপারীপাড়া সংলগ্ন ঢুলিপাড়ায়। শহীদ আলীর ছেলে পাঙ্গাস মূলত ফেরি করে চানাচুর বিক্রি করেন। দলীয় পদপদবি না থাকলেও সরকারদলীয়দের সঙ্গেই ঘোরাঘুরি করেন। এ ছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র হাতে থাকা চারজনের মধ্যে অন্তত দুজন যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
তাদের মধ্যে একজন পৌর শহরের পিটিআই সংলগ্ন কোলগয়লা মহল্লার সুমন হোসেন এবং অপরজন শহরের দত্তবাড়ি মহল্লার বায়েজিদ আহম্মেদ। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা অবশ্য বলছেন, অস্ত্রধারী কাউকেই তারা চেনেন না। শুধু তাই নয়, তাদের দলের কর্মী বা সমর্থক হিসেবেও কোনো দিন তাদের দেখা যায়নি।
জেলা যুবলীগের সভাপতি রাশেদ ইউসুফ জুয়েল বলেন, ‘আমাদের ওপর বিএনপির লোকজন অতর্কিত হামলা চালালে দলের নেতাকর্মীরা তা প্রতিহতের চেষ্টা করে। সেখানে রামদা বা অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি আমরা দেখিনি বা জানি না। সংঘর্ষে কোন দল বা তাদের লোকজন রামদা বা অস্ত্র উঁচিয়ে ভীতি প্রদর্শন বা গুলি ছুড়লে সেটি পুলিশ খুঁজে বের করবে। আর পাঙ্গাস বা সাগর নামে আমাদের যুবলীগে কেউ নেই।’ অস্ত্রধারীরা আওয়ামী লীগের কেউ নন, সাফ জানিয়ে দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেএম হোসেন আলী হাসানও।
শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপি তাদের সমাবেশ করবে, এখানে বাধা দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমরা বাধা দিলে তারা জেলার বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে শহরেই আসতে পারত না। মূলত দলটির আভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। তা ছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংঘর্ষের ছবিতে পিস্তল বা রামদা উঁচিয়ে যাদের দেখা গেছে, তাদের কেউই আমাদের দলের নন।’
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু অবশ্য বলেন, ‘দিনের আলোতে যুবলীগ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করেছে। কাজেই আমরা ধরে নেব এরা যুবলীগেরই কর্মী। প্রকাশ্যে এভাবে আগ্নেয়াস্ত্র দেখে শহরবাসী উদ্বিগ্ন, স্তম্ভিত।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামলার ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে আমরাও মামলা করব। সেই প্রস্তুতিই নেওয়া হচ্ছে।’ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘সংঘর্ষ চলাকালে অস্ত্র হাতে থাকা দুই যুবলীগ কর্মীর নাম জানা গেছে। তারা শহরের কোলগয়লা ও দত্তবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা।’
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম বলেন, ‘শহরে বিভিন্ন মোড় ও স্পর্শকাতর স্থানে পুলিশের ৯৭টি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। পাঁচটি স্থানে সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের জ্ঞাত-অজ্ঞাত প্রায় সাত শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সদর থানায় কয়েকটি মামলা হয়েছে। সেই সঙ্গে হেলমেট পরিহিত থাকলেও সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ ও প্রকাশিত সংবাদপত্রের ছবি দেখে অস্ত্রধারীদের খুঁজছে পুলিশ। তারা যে দলেরই হোক না কেন, পুলিশ ঠিকই খুঁজে বের করবে।’
মামলার বিষয়ে সদর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০০-১৫০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এসআই আলীম হোসাইনের করা মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামি ২০০-২৫০ জন। এসআই মাহমুদ হাসানের মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ কর্মী উজ্জ্বল হোসেন বাদী হয়ে যে মামলাটি করেছেন, তাতে ৪০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামি ৫০-৬০ জন। সব বিষয় মাথায় রেখে এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি নজরুল।