সরকার পরিবর্তনের ফয়সালা রাজপথেই - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৭ এএম, ১ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:২৭ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সরকার পরিবর্তনের ফয়সালা রাজপথেই হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শুক্রবার সকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘আজকে পঞ্চদশ বছর হয়েছে স্বাধীনতার। এই পঞ্চাশ বছরে অনেকে অনেক কিছু বলে, আওয়ামী লীগাররা সব সময় বলছে, উন্নয়ন, অনেক উন্নয়ন করে ফেলেছি। কিন্তু বেসিক জিনিসটা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। সেটা হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক যে স্বাধীনতা সেই স্বাধীনতাকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি।’
‘এই স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনতে হলে, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুসংহত করতে হলে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের দেশনেত্রী, আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হলে আন্দোলন, আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই। আসুন আমরা আজকে এখানে শপথ নিয়ে আবারো এগিয়ে যাই, ঐক্য সৃষ্টি করি। রাজপথেই এর ফয়সালা হবে ইনশাল্লাহ।’
চলমান আন্দোলন ‘অতি অল্প সময়ের মধ্যে’ দুর্বার আন্দোলনে পরিণত হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে ষড়যন্ত্র শুরু করে এখান থেকে রাজনীতি বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে তার বিরুদ্ধে আমরা লড়ে যাচ্ছি। আমাদের এই লড়াই এখন বেগবান হচ্ছে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। আমরা বিশ্বাস করি, এই লড়াই অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটা দুর্বার গণ-আন্দোলনে পরিণত হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই- এটা হচ্ছে আমাদের এক নম্বর কথা। কেনো মুক্তি চাই? কারণ তিনি হচ্ছেন একমাত্র নেত্রী যারা জীবিত এখন আছেন তাদের মধ্যে তিনিই হচ্ছেন একমাত্র নেত্রী যিনি গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নয় বছর আপোসহীন সংগ্রাম করেছেন। উড়ে এসে জুড়ে বসে প্রধানমন্ত্রী হন নাই, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে হয়েছেন।’
‘এই গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এতো বেশি যে, তিনি এখন পর্যন্ত বন্দি, হাসপাতালে আছেন, অত্যন্ত জটিল দুরূহ রোগে আক্রান্ত হয়ে আছেন, তার চিকিৎসকরা বলছেন যে, তাকে বাইরে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কিন্তু তিনি মাথানত করছেন না।’
সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে একাদশ নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতির তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘ভোটাধিকার হরণের কালো দিবস’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
‘আমলারা এখন আকাশে উঠে গেছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন পার্লামেন্ট যে আছে, সেই পার্লামেন্টে বিরোধী দল বলতে কিছু নেই। আমলারা একেবারে আকাশে উঠে গেছে। রাজনৈতিক নেতা, আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন তাদের কোনো মূল্যই নেই। একজন ওসি সরাসরি বলে আপনারা কে? আপনাদের তো আমরাই বানিয়েছি।’
‘অর্থাৎ রাজনীতিটা পুরোপুরিভাবে সরিয়ে দিয়ে একটা আমলাতান্ত্রিক-সামরিক আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখান চালু করার ব্যবস্থা হয়েছে এবং তারা বলেছেনও। পার্লামেন্টে তারা বসে বলতে শুরু করলেন যে, এটাকে আমরা মালয়েশিয়ার মতো, সিঙ্গাপুরের মতো একটা রিজেমেন্টেড ডেমোক্রেসি দিতে চাই এবং উন্নয়নের জন্য আমাদের একটা রেজিমেন্টেড ডেমোক্রেসি দরকার। সেই কারণে এখানে সমস্ত ঘটনা তারা সাজিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা চিন্তা করে দেখুন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রধান ভূমিকা কে পালন করেছে? এইচ টি ইমাম, তিনি পুরোপুরিভাবে একজন আমলা। তাকে দায়িত্ব দিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, সমস্ত আমলাকে একখানে করে এই ব্যবস্থাগুলো (ফলাফল) নিতে হবে।’
‘আমরা যারা নির্বাচন করেছি আমরা খুব ভালো করে জানি যে, এর প্রধান ভূমিকা যে মাঠে নেমে কাজটা করেছে তারা হচ্ছে পুলিশ। একেবারে পুরোপুরি। এই যে একটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা। এমনকি বিচারালয়কে পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা, যারা নমিনেশন পেলেন, অনেকের নমিনেশন ক্যানসেল হয়ে গেল, তখন নির্বাচন কমিশনে গেলেন, কমিশনে না পেয়ে হাইকোর্টে গেছেন। হাইকোর্টও সরকার যা চেয়েছে ঠিক সেটাই করেছে। ফলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে নিয়েই তারা ২০১৮ সালের নির্বাচনটা করেছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) যে লক্ষ্য এখানে সেই লক্ষ্য হচ্ছে সত্যিকার অর্থে একটা একদলীয় ব্যবস্থা বহাল রাখা। আগে ছিল বাকশাল করে। এখন বাকশালকে ঘোষণা দিয়ে নয়, একটা মুখোশ পরিয়ে, একটা আবরণ পরিয়ে গণতন্ত্রের মোড়কে রেখে একটা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।’
‘আপনাদের মনে থাকার কথা যারা পড়ালেখা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউনির্ভাসিটির প্রফেসর আলী রীয়াজ তিনি বই লিখেছিলেন বাংলাদেশের ২০১৮ নির্বাচনের পরে পরেই। বইটির নাম হচ্ছে দ্যা হাইব্রিড রেজিম ইন বাংলাদেশ-২০১৮ ইলেকশন। এই বইটার মধ্যে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে- পৃথিবীর অনেক দেশে আজকে গণতন্ত্রকে নিচের দিকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ ডেমোক্রেসি ইজ ডায়িং এবং এই ধরনের কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোকে উপরের দিকে উঠিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই কথাগুলো আমাদের জানা উচিত।’
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, নিতাই রায় চৌধুরী, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়ন বিষয়ক সহ-সম্পাদক অপর্ণা রায়, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, তাঁতী দলের আবদুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম বক্তব্য রাখেন।