দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে আমলারা : কামাল মজুমদার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩৫ এএম, ২৮ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৮ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ইস্পাত প্রকৌশল করপোরেশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। প্রতিমন্ত্রীর দেয়া সেই বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত ২০ ডিসেম্বর আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো :
রক্ত দিয়েছি আমরা, রক্ত দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু, রক্ত দিয়েছে ৩০ লক্ষ শহীদ। আত্মত্যাগ করেছেন দুই লক্ষ মা-বোন। আর আপনারা আজকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে লুটেপুটে খাচ্ছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ইস্পাত প্রকৌশল করপোরেশনের যে বিরাট সংস্থা, এখানে আলোচনা হবে বঙ্গবন্ধুর উপরে, এখানে আলোচনা হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে। আপনারা প্রয়োজনে অডিটরিয়াম বানিয়ে নেবেন। সবার উপস্থিতিতে আপনারা আলাপ আলোচনা করবেন। সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারীদের আলোচনার সুযোগ দেবেন। আর আপনারা তা না করে এখানে গুটি কয়েকজন কর্মকর্তা সমবেত হয়েছেন, ৭/৮ জন বক্তব্য দিয়েছেন। আপনাদের বক্তব্য শোনার জন্য আমরা এখানে আসিনি। আমরা এসেছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন, সেই শপথবাক্যের কতটুকু আপনারা বাস্তবায়ন করছেন, ইস্পাত প্রকৌশল করপোরেশন কতটুকু বাস্তবায়ন করছে - সেটাই আমরা জানতে চাই। কারণ আমরা দেখছি এটিকে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে আপনারা পরিণত করেছেন। সরকারি জমি, ইস্পাত প্রকৌশল করপোরেশনের জমি ভাড়া দিয়ে আপনাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে, বোনাস দেওয়া হচ্ছে, আরাম-আয়েশ আপনারা করছেন। অবশ্যই এটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নতুন করে কোনো করপোরেশনের নামে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে না।’ আপনারা গাড়ির কথা বলেছেন। প্রগতির কথা বলেছেন। প্রগতি যেভাবে ছিল... স্বাধীনতা-উত্তর প্রগতি যেভাবে ছিল, সেটা ওইভাবে আর নাই। আপনারা গাড়ি নিয়ে আসেন, সেটা পরে বাজারে বিক্রি করে দেন। আপনারা স্বাধীনতার ৫০ বছর প্রগতি কেন করতে পারলেন না? স্বাধীনতার ৫০ বছর, সুবর্ণজয়ন্তী আমরা উদযাপন করছি। কোন শিল্প কারখানা আপনারা লাভজনক করেছেন? একটির কথা বলতে পারবেন? পারবেন না। প্রত্যেকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। স্টিল করপোরেশনের আজকে আপনারা ভাড়া দিয়ে বেতন-বোনাস নিচ্ছেন। আমরা কী ধরে নিতে পারি যে আপনারা এখানে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত পান করছেন? দুর্নীতিতে হাবুডুবু খাচ্ছেন? কারণ আপনারা কেউ পদক্ষেপ নেননি এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে গড়ে তোলার। আজকে যদি এখানে ট্রেড ইউনিয়ন থাকতো, সব নেতাকর্মী থাকতো, আমরা সেখানে বক্তব্য দিতাম। কেন এ অবস্থা হচ্ছে? প্রত্যেকের সম্মিলিতভাবে এই সব প্রতিষ্ঠান যেগুলো বঙ্গবন্ধু জনগণের জন্য জাতীয়করণ করেছেন, সেগুলো কেন ধুঁকে ধুঁকে নষ্ট হয়ে যাবে? সেগুলোর উত্তরোত্তর উন্নতির দায়িত্ব আপনাদের, আমাদের, সকলের। আপনাদের আলোচনা সভা থেকেই এটা বোঝা যায় কী করতে পারবেন! কারণ সরকারি কিছু কিছু আমলা আছে, চাকরির শেষ বয়সে উনাদের শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আমি আড়াই বছর দেখলাম। তাদের পাঠানো হয়, ক’দিন পর ওনারা চলে যান। তার ভেতরে অনেক ভালো লোকও আছেন। নতুন চেয়ারম্যান সাহেব এসেছেন। ওনাকে বলা হয়েছে যে এগুলো স্থগিত রাখেন। তিনি স্থগিত রাখেন নাই। আজকে একই অবস্থা চলছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাউন্ডপ্রুফ রুম, চেয়ারম্যান সাহেবেরও রুমও সেভাবে সাজাতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে। লিফটের পরিবর্তন করতে হবে। খুশিমতো কথা না শুনলে লোকজনকে বদলি করতে হবে। চেয়ারম্যান সাহেব, এগুলো না করে, আপনার প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করেন। যাতে প্রতিটা প্রতিষ্ঠান লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। কোন প্রতিষ্ঠানের কী অবস্থা আমাদের লিখিতভাবে জানান এবং সুপারিশও জানাবেন। আপনাদের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেন। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে গেলে যা যা করতে হবে কর্মচারীদের নিয়ে বসেন। তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেন। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এত বড় একটা করপোরেশন... আপনারা এখানে কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়ে বসে অনুষ্ঠান করছেন, আপনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছেন, বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করছেন। এ করপোরেশন একটা বড় করপোরেশন- এখানে হাজার হাজার কর্মচারী রয়েছে, কর্মকর্তা রয়েছে। যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন। সে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমরা দুজন সৌভাগ্যবান। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের এই পরিকল্পনা ছিল যে আমরা এই মন্ত্রণালয় ঢেলে সাজাবো। কিন্তু ঢেলে সাজাবো তো দূরের কথা, আপনাদের কথা বললে আপনারা কথাও শুনেন না। আপনারা এখানে কয়জন চেয়ারম্যান আছেন, আগামী ১৫ দিনের ভেতরে আপনার অধীনস্থ কয়টা সংস্থা আছে, কত আয়, কত ব্যয়, কত ভর্তুকি দেন এবং কোন কোন জমি আপনারা ভাড়া দিয়েছেন, সেখান থেকে কত টাকা পান এবং কতগুলো অব্যবহৃত রয়েছে সেগুলোর হিসাব-নিকাশ আমাদের দেবেন।
আমরা ইতিপূর্বে আপনাদেরকে, আগে যে চেয়ারম্যান সাহেব ছিলেন, তাকে বোধহয় আমরা চিঠি দিয়েছিলাম, আমার এখানে পিএস সাহেব আছেন, তিনি নিজেই চিঠি দিয়ে সবাইকে অবহিত করেছেন, আপনারা হিসাব দেননি। কারণ সেগুলো দিলে আপনারা লুটপাট করে খেতে পারবেন না। কথাগুলো এ জন্য বলছি, আমি আমার জানামতে, অনেক কর্মকর্তা ইস্পাত করপোরেশন থেকে অবসর নিয়েছেন, তারা এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। কোত্থেকে আসলো এই টাকা? আজকের এই দিনে, আমি শুধু এটাই বলতে চাই, আপনারা বঙ্গবন্ধুর রক্ত আর পান করবেন না, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত আর পান করবেন না। মুসলমান হিসেবে আল্লাহকে ভয় করেন, মৃত্যুকে ভয় করেন। আল্লাহ আপনার মনের গোপন কথাও জানেন, তার কাছ থেকে কিছুই গোপন করতে পারবেন না। কাজেই আপনারা একজন মুসলমান হিসেবে, আল্লাহর বান্দা হিসেবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে আপনারা এই প্রতিষ্ঠানকে, এই করপোরেশনকে কীভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবেন... আমাদের কাছ থেকে যতরকম সহযোগিতা দরকার হয় আমরা করবো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে কাজ করতে হবে। আমরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কথা বলছি। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সেই ঋণকে শোধ করার জন্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ঋণ যাতে আমরা শোধ করতে পারি, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা যাতে কিছু রেখে যেতে পারি, এ অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায় সেজন্য কাজ করতে হবে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতেই হবে।