নৌপরিবহনে দুর্বৃত্তদের দাপটে যাত্রীদের প্রাণ দিতে হচ্ছে : রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১২ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩৫ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
নৌপরিবহন খাতে দুর্বৃত্তদের দাপট চলছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার মন্তব্য, এ দাপটের কারণেই একের পর দুর্ঘটনা ঘটছে, আর প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরীহ মানুষদের। ঝালকাঠিতে লঞ্চ দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এসব কথা জানান রিজভী।
আজ শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।
রিজভী বলেন, ‘৪শ’ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করা লঞ্চটি অগ্নিকাণ্ডের সময়ে হাজার খানেক যাত্রী অবস্থান করছিল। এটি কী করে সম্ভব? সেই লঞ্চটির ধারণ ক্ষমতা কত? সেখানে কি ৪শ’ জন যাত্রী নেওয়া যায়? লঞ্চটি যখন ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে তখন ৪শ’ যাত্রী। যখন অগ্নিকাণ্ড হয় তখন যাত্রী ছিল এক হাজারেরও উপরে। কোনো নিয়মশৃঙ্খলা নেই, সরকারের কোনো মনিটরিংও নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি জায়গায় দুর্বৃত্তদের দাপট এবং দৌরাত্ম্য। নৌ-পরিবহনে দৃর্বৃত্তদের দাপট বলেই কোনো নিয়ম শৃঙ্খলাকেই তোয়াক্কা করা হয় না। আর এই কারণে জীবন দিতে হচ্ছে নিরহ যাত্রীদের। এই অগ্নিকাণ্ডে হৃদয়স্পর্শী ঘটনা দুঃশাসনেরই প্রতিফলন।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, সর্বত্র সরকারি দলের দৌরাত্ম্যের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনহানীসহ প্রচণ্ড জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ হত্যার বীরত্বে আওয়ামী সরকার দারুন উল্লসিত। তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কে মরলো, কে বাঁচলো তাদের কোনো যায় আসে না। বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি এবং বিএনপির পক্ষ থেকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহতদের সুস্থতা কামনা করছি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, ‘অবৈধ আওয়ামী সরকার চারিদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে দেশের মানুষের কাছ থেকে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে এখন নানা চক্রান্তের জাল বুনতে শুরু করেছে। বিএনপি নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা ও চার্জশিট দিয়ে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
আমির খসরু বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এসএকে একরামুজ্জামানের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিজের বাসায় কর্মীসভা চলাকালে পুলিশি হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রিজভী।
কক্সবাজারে এক নারী পর্যটকের স্বামী সন্তানকে জিম্মি করে দলবেধে তার শ্লীলতাহানির ঘটনাকে বর্তমান দুঃশাসনের চালচিত্র উল্লেখ করে এই নির্মম পাশবিকতার নিন্দা জানান রিজভী। একই সঙ্গে দুস্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘এই নারকীয় ঘটনা যে বর্তমান দুঃশাসনেরই একটি চালচিত্র। স্থানীয় এমপি সাইমুন সারোয়ার কমল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে ওই দুষ্কৃতিকারী যারা ওই অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের সঙ্গে ছবি পাওয়া গেছে। দুষ্কৃতিকারীদের একজনের নাম জয়। ছাত্রলীগের সাদ্দামও স্বীকার করেছে জয় ছাত্রলীগের কর্মী। সরকারি দলের এই নিকৃষ্ট নুমনা নিয়ে আর কি বলা যেতে পারে।ক্ষমতাসীনদের পৃষ্টপোষকতায় এখন শকুন ও হায়েনারদের জয়জয়াকার।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর সরকার আবারো বিদ্যুত,গ্যাস, সারের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা শুরু করেছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী একটি মিটিং করে এই প্রস্তাব করেছেন।গত ১২ বছরে বিদ্যুতের দাম এই অবৈধ সরকার ১০বার বৃদ্ধি করেছে। এখন পুনরায় বৃদ্ধি হলে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। গত ১২ বছরে ১১৮ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুত, গ্যাস, পানির এই দাম বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অশুভ। এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া হবে শিল্প, কৃষি ও সাধারণ মানুষের গৃহস্থালী কাজে, মুদ্রাস্ফীতি মাত্রা তীব্র রূপ ধারণ করবে। ক্ষমতাসীনদের আত্মীয় স্বজনদের দ্বারা পরিচালিত কুইট রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রের যারা মালিক তাদেরকে ভতুর্কি দেওয়ার জন্য জনগণের টাকা লোপাট করতে আবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির এই পাঁয়তারা হচ্ছে। সরকারের বিদ্যুত, গ্যাস, সারের দাম বৃদ্ধি প্রস্তাব হচ্ছে জনগনকে নিঃশেষ করে দেওয়া। বিএনপির পক্ষ থেকে আমি সরকারের এই প্রস্তাবের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
অবিলম্বে এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বানও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করীম শাহিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহিদুল কবির, জাসাসের সৈয়দ আশরাফুল মজিদ খোকন ও ছাত্রদলের আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।