ইসি গঠনের পরিকল্পনা- নতুন বোতলে পুরনো জিনিস - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০১ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে কোনো লাভ হবে না, সংলাপ সংলাপ করে কোনো লাভ হবে না। এটা প্রমাণ হয়ে গেছে নির্বাচনকালীন সময়ে যদি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, তবে নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হতে পারে না। বর্তমান সরকারের আমলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা নতুন নির্বাচন কমিশন করার পরিকল্পনা করছে। যাদের নিয়ে পরিকল্পনা করছে তাতে বলা যায় যে, নতুন বোতলে পুরনো জিনিস। এ সরকারের আমলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগ সরকার স্থানীয় নির্বাচনেও কেন্দ্র দখল করে বিজয়ী হচ্ছে। তাদের নেতৃত্বে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না।
আজ বুধবার টাঙ্গাইল জেলা সদর মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক জনসভায় বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। তিনি যদি বেরিয়ে আসেন, তিনি যদি এই দানবীয় সরকারের পতনের ডাক দেন তাহলে হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো লাখ লাখ মানুষ রাজপথে বেরিয়ে এসে এই সরকারের পতন ঘটাবে। এই ভয়ে তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রেখেছে।
তিনি বলেন, এই সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে, যেটা কোনো মামলাই নয়, সেই মামলায় বেআইনিভাবে সাজা দিয়ে তাঁকে ৩ বছর ধরে আটক করে রেখেছে। তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখন তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। ডাক্তাররা পর্যন্ত প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে এখনই বিদেশে পাঠানো দরকার, যদি তাঁর জীবন রক্ষা করতে হয়। কিন্তু তারা শুনছেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সারাদেশে গণ-অনশন করেছি, সমাবেশ করেছি। একটাই দাবি জানিয়ে আসছি যে, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাঁকে চিকিৎসার সুযোগ দিন। কিন্তু তারা তা দিচ্ছে না। আমরা বারবার তাদের বলেছি আপনারা মানবিক কারণে বাধা দেবেন না। তাও তারা শুনছে না। কিন্তু আইন দেখায় আইনমন্ত্রী। কালকেও বলেছে আইনের বাইরে আমরা যেতে পারবো না। অথচ নিজেরাই বেআইনি হয়ে বসে আছে। আগের রাতে নির্বাচন করে, বেআইনিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। গত ১৪ বছর ধরে বেআইনি সব কাজ করে এই দেশকে একটা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। ‘পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে আবার সংলাপ সংলাপ খেলা শুরু হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে ডেকে সংলাপ করবে। কীসের সংলাপ শুরু করেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। নির্বাচন কমিশন গঠন করে কী হবে? যে সরকার আছে সেই সরকারই তো নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকবে ততক্ষণ নির্বাচন কমিশন গঠন করে কোনো লাভ হবে না। আমরা পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই, এই নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে কোনো লাভ হবে না, সংলাপ সংলাপ করে কোনো লাভ হবে না। এটা প্রমাণ হয়ে গেছে যে, নির্বাচনকালীন সময়ে যদি নিরপেক্ষ সরকার না থাকে, তবে নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হতে পারে না। কাজেই এই সংলাপ করে কোনো লাভ নেই। আর তাই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, বলেন বিএনপি মহাসচিব। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পতন ঘটাতে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশে এখন সংকট চলছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন কথা বলা যায় না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সরকার ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলেছিল। এখন শুধু আওয়ামী লীগের লোকেরাই চাকরি পায়। সরকারি চাকরি পেতে ২৫ লাখ টাকা লাগে। আর চালের দাম এখন ৭০ টাকা। জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা এ সরকার জনগণের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সম্পাদক অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, সাঈদ সোহরাব, ওবায়দুল হক নাসির, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন নান্নু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ মোহাম্মদ জুয়েল, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাসানুজ্জামিল শাহীন, অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল, কাজী শফিকুর রহমান লিটন, অমল ব্যানার্জি, দেওয়ান শফিকুল ইসলাম, সদস্যসচিব মাহমুদুল হক সানু, সদস্য বেনজীর আহমেদ টিটো, অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপন, জেলা যুবদলের আহবায়ক আশরাফ পাহেলী, যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার রাশেদুল আলম, জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক একেএম মনিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সরোয়ার, ঢাকা বিভাগীয় সম্পাদক সুলতান মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি তারেকুল ইসলাম ঝলক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রৌফ, জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক দুর্জয় হোঢ় শুভ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এদিকে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠানের স্থান নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতার অভিযোগ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রশাসন বারবার স্থান পরিবর্তন করায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। গভীর রাতে জেলা সদর মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠানের অনুমতি মেলে। সমাবেশ অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও টাঙ্গাইলের মানুষ বিশাল জনসমাবেশ করে প্রমাণ করেছে ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যায় না।