যশোরে বিশাল গণসমাবেশে মির্জা আব্বাস
যশোর থেকে শুরু হলো বাঁধ ভেঙে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৪ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৫ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র ও মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে ছাড়বই ইনশাল্লাহ। যশোর থেকে বাধার ব্যারিকেড ভাঙা শুরু হয়ে গেল। তরিকুল ইসলামের যশোরে তাঁর সুযোগ্য পুত্র অমিতের নেতৃত্বে জনতার যে প্রতিরোধ আজ শুরু হয়েছে তা আমরা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেব এবং আরও বেগবান করে এ অমানবিক অগণতান্ত্রিক সরকারের পতন নিশ্চিত করব। তিনি আজ বুধবার বেগম জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন করবে না বিএনপি। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নয়, হুদামার্কা ছাগল খুঁজচ্ছেন। তারা আবারও ২০১৮ সালের মতো একদলীয় ভোট কাটার নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু এদেশের সাধারণ মানুষ আর তা হতে দেবে না। জনগণকে নিয়ে বিএনপি সে নির্বাচন অবশ্যই প্রতিহত করবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারের প্রশাসনযন্ত্রের হুমকি-ধমকি এবং বাধা পেরিয়ে মানুষ আজ রাস্তায় নামতে শুরু হয়েছে। আজ যশোরসহ ৬টি জেলায় এর প্রমাণ মিলেছে। প্রত্যেকটি জেলায় অমিতের মতো করে দলীয় নেতাকর্মীরা প্রশাসনের বাধা অতিক্রম করেছে।
যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক হুইপ আলহাজ মো. মশিউর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মির্জা আব্বাস আরও বলেন, তিন-তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজা দেয়া হলেও সেই টাকা কিন্তু সোনালী ব্যাংকে এখন ফুলে ফেঁপে ৮ কোটি টাকা হয়েছে। আসলে দেশনেত্রী আটকে রেখেই একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশের সম্পদ লুন্ঠনের জন্য এই সরকার নিজস্ব সৃষ্ট আদালতে সাজা দিয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার মনে করে, বেগম জিয়া বাইরে থাকলে তাদের সমূহ বিপদ। দেশের জনগণ কোনো অবস্থাতেই বেগম জিয়ার সিদ্ধান্তের বাইরে যাবে না। তিনি থাকলে নির্বাচনে জনগণ তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী করবে।
মির্জা আব্বাস এই সরকারকে জুলুমবাজ আখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা সভা-সমাবেশে এই সরকারকে খুন-গুম-লুন্ঠনের সরকার বলেছি; আজ সারাবিশ্ব সেটি জেনেছে। এই সরকারের সাবেক সেনাপ্রধান আব্দুল আজিজের দুই ভাই কুখ্যাত সন্ত্রাসী জোসেফ ও হারেজকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠালেও অসুস্থ তিনবারের বর্ষীয়ান একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে সুচিকিৎসা নিতে বাধা দিচ্ছে। সারাবিশ্ব আজ এই সরকারের চিনে ফেলেছে; সে কারণে তাদের আর্মি অফিসার, পুলিশ অফিসার, র্যাব অফিসারসহ দলের শীর্ষ কয়েক নেতার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারো কারো ভিসাও বাতিল করেছে।
তিনি বলেন, আমার যশোরে আসা সার্থক হয়েছে। সকাল থেকে সারাদেশে বিএনপির সমাবেশে পুলিশ বাধা দিচ্ছে কানে খবর আসছিল। যশোরে এসে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেল। গতকাল অনুমতি দেয়নি, পুলিশ মাইক দিতে নিষেধ করেছে। শহরে যানবাহন বন্ধ করে হরতাল অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তারপরও তরিকুল ইসলামের যোগ্য উত্তরসূরি অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে খুব ভোরেই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মাঠ দখল করা হয়েছে এবং অর্ধলক্ষাধিক মানুষ সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেছে।
গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায়চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্যে আইনগত কোনো বাধা নেই- আইনমন্ত্রী আমাদের এই কথা বললেও তারা সেই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কেউই মুক্তিযুদ্ধ করেনি; এমনকি ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে তাদের কেউ নেই। কেননা যুদ্ধ শুরু হলে তারা সব পালিয়ে ভারতে চলে যায়। সেই সময় মেজর জিয়া শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেড ফোর্স তাঁরই নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
তিনি বলেন, আজকের এই মহাসমাবেশ যাতে না হতে পারে, সে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার পেটোয়া বাহিনী দিয়ে যশোরের সব যানবাহন এমনকি রিকশাও বন্ধ করে দিয়েছে। তার প্রশাসন শহরের সব মাইকের দোকান, ডেকোরেশনের দোকান গতকাল রাতেই বন্ধ করে দেয়। কিন্তু শহীদ জিয়ার সৈনিকরা, খালেদা জিয়ার সৈনিকরা সেসব বাধা উপেক্ষা করে ২০ থেকে ত্রিশ কি.মি. পথ পায়ে হেঁটে এই মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছে।
গণসমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিশেষ অতিথি আলহাজ মসিউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার ভেতরে কোনো মানবিকতা নেই। আপনি চাইছেন বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে সারাজীবন ক্ষমতায় থাকতে। কিন্তু আপনার সে আশা কোনোদিন পূরণ হবে না।
তিনি বলেন, এই সরকার গত দশ বছরে যে টাকা পাচার করেছে, তা দিয়ে ১০টি পদ্মা ব্রিজ হয়ে যায়। সারাবিশ্ব আজ জেনে গেছে এই সরকার একটা ফ্যাসিস্ট সরকার। লুটেরা সরকার।
গণসমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, আমরা জনগণের রাজনীতি করি, জনগণই আমাদের শক্তি। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জনগণের নেত্রী। এদেশের জনগণ বেগম খালেদা জিয়াকে তাদের মা স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই মাকে অসুস্থ অবস্থায় জেলে পচে মরতে দিতে জনগণ পারে না। তাই তারা সরকারের কাছে অনুনয়-বিনয় করছে। সরকার যদি সে অনুনয়-বিনয় বুঝতে ব্যর্থ হয় তাহলে তার পরিণতি কি হবে তা জনগণ আজ যশোর টাউন হল ময়দানে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমরা আশা করবো, সরকার এ থেকে একটি শিক্ষা গ্রহণ করবে এবং অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠাবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, আবুল হোসেন আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, স্থানীয় বিএনপি নেতা মারুফুল ইসলাম মারুফ, মো. নূর-উন নবী, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, সাংবাদিক নেতা আনোয়ারুল কবির নান্টুসহ সকল অঙ্গ-সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকবৃন্দ।