সরকার হটানোর আন্দোলনের ‘সর্বাত্মক’ কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই - নোমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৯ এএম, ২৩ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১১ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
সরকার হটানোর আন্দোলনের ‘সর্বাত্মক’ কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে আজ বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি এক্স স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের (রুনেসা) উদ্যোগে ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা ও অগ্নিঝরা মতিহার এবং রিজভী আহমেদ’ শীর্ষক দোয়া মাহফিল ও আলোচনার এই অনুষ্ঠান হয়।
আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, বাস্তবতার নিরিখে আপনি যদি সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি দেন সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন যে বক্তব্য ভেসে আসছিলো সেই শক্তি ভেসে আসবে। কিন্তু কর্মসূচি দিতে হবে এবং কর্মসূচিটা কিসের? সরকার পতনের আন্দোলনের কর্মসূচি। কর্মসূচি মানে আমি এটা বলব না যে, আমরা পতনের আন্দোলনে যাবো সেটা মারামারি-পিটাপিটি, এটা-ওটা করবো সেটা। কান টানলে মাথা আসবে, কানটা টানবো মাথাটা আসবে-এই প্রক্রিয়ায় যদি যেতে পারি তাহলে আমরা সফল হবো।
বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রসঙ্গ টেনে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, এটা হচ্ছে বাস্তব। অনেক পার্থক্য আছে বাংলাদেশের সাথে ইউরোপ-আমেরিকার চিকিৎসা ব্যবস্থা। আমি নিজে অসুস্থ হয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা করিয়ে এসেছি। আমি এটা ফিল করেছি। আমার সাংবিধানিক অধিকার হচ্ছে বেঁচে থাকার অধিকার। এটা সরকারের দায়িত্ব অথচ তারা সেটা গ্রহণ করছে না। কাজেই সরকার অবশ্যই গ্রহণ করবে যদি আমরা আামাদের শক্তিকে আরো জোরদার করতে পারি, একতাবদ্ধ হতে পারি। আমাদের প্রয়োজনে, দেশমাতৃকার প্রয়োজনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেজন্য জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান এই প্রবীণ নেতা।
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে তাদের কর্মের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আপনারা এখনও বিচার দেখেন নাই। প্রস্তুত হন আপনাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। দেশের বর্তমান গণতন্ত্রের অবস্থাটা কি? এই দিন শেষ দিন না, আরও দিন আছে। আপনারা জনতার বিচার দেখেন নাই। প্রস্তুত হন আপনাদেরও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৭১ থেকে এখন পর্যন্ত এই ৫০ বছরে কত দেখলাম। আমরা দেখতে না পেলেও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম দেখতে পাবে। আপনারা (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী) লুটপাট করেছেন। সারাজীবন এই ক্ষমতা থাকবে না। পতন একদিন হবেই। সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, বিএনপির ৬০০ জন নেতাকর্মী গুম-খুন হয়েছে একজন দুজন না। আমি উদ্বিগ্ন এরা (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা) কাঠগড়ায় দাঁড়ালে অপরাধীদের কী সাজা হবে? উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ছাত্র রাজনীতি করা অবস্থায় এরশাদ সরকারকে উৎখাত করেছেন। আপনারাই তো এখন বিএনপিতে আছেন। কেন আপনারা সরকার পতন করতে পারছেন না? এই জিজ্ঞাসা আমার মনে জাগে।
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বলেন, বক্তৃতা দেয়ার জন্য এখন তো আর মতিহারে কেউ ডাকে না। ইউনির্ভার্সিটির হলগুলোতে সম্মেলনের জন্য ডাকে না। সেই ভূমিগুলো চোর, ডাকাত দখল করে নিয়েছে। সেই শিক্ষাঙ্গন শিক্ষাঙ্গন নাই। স্বৈরাচার একনায়কতন্ত্র সরকার সেগুলোকে অপবিত্র করে ফেলেছে। সেই সব জায়গায় আড্ডা ছাড়া আর কিছু আছে? তাহলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন আসবে কোথা থেকে।
তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতির যেটা করার দরকার ছিল সেটা হচ্ছে না। আর সেই কারণে স্বৈরাচার গেড়ে বসেছে। উত্তর কোরিয়া ও বাংলাদেশ পিঠাপিঠি ভাইবোন হয়ে গেছে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। কত মা তার সন্তান হারিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সাথে পিঠাপিঠি ভাইবোন হওয়ার জন্য? কিন্তু আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বাঁচা মরা আল্লাহর হাতে। কোনো কারণে যদি আপনি চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হন তাহলে আপনার পরিস্থিতি আপনাকে বহন করতে হবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা যখন আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন তখন ভয় পাওয়ার, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নাই। কারণ আমরা ভালো জিনিসটা দেখেই যাব।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ বাহাউদ্দিন বাহারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মল্লিক মো. মোকাম্মেল কবীরের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, বিএনপির শামীমুর রহমান শামীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, রমেশ দত্ত, আমিনুল ইসলাম, নুরুজ্জামান তপনসহ রুনেসার নেতৃবৃন্দ।