‘গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার আন্দোলনের শুভ সূচনা’
বিএনপির বিজয় র্যালীতে লাখো জনতার ঢল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪২ এএম, ২০ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৬ এএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর বিজয় র্যালীকে ‘গণতন্ত্র পূনরুদ্ধার আন্দোলনের শুভ সূচনা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার বিকালে বিজয় র্যালীপূর্ব সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। ফকিরেরপুল বাজার থেকে শুরু করে নয়াপল্টন সড়কের শেষ প্রান্ত নাইটেঙ্গল রেঁস্তোরার মোড়ে পর্যন্ত সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে তিল পরিমান ঠাঁই ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি দুপুর ২টা ২০ মিনিটে এই শোভাযাত্রা শুরু করে। এর আগে ওলামা দলের আহবায়ক শাহ নেছারুল হক কোরআন তেলোয়াত করেন। এর আগেই বেলা ১২টায় নয়াপল্টনের নাইটেঙ্গল থেকে ফকিরেরপুল বাজার পর্যন্ত সড়ক ভরে যায় লাখ লাখ নেতা-কর্মী-সমর্থকে। এই দীর্ঘ সড়কে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল মিছিলে নয়া পল্টনে এলাকা জনসমুদ্রে রুপ নেয়। নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে ছিলো লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা এবং জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম’, ‘এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি থাকতে দেবো না’, ‘বাংলাদেশ যাবে কোন পথেম, ফয়সালা হবে রাজপথে’ ইত্যাদি স্লোগানে স্লোগানে নেতারা ছিলো সর্বক্ষন সরব-সোচ্চার। এই সময়ে সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন নেতা-কর্মীদের করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে দেখা গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই র্যালী বাংলাদেশের জনগণের নতুন করে জেগে উঠবার র্যালী, আজকের এই র্যালী বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রাম করা শুরু করার র্যালী, আজকের এই র্যালী হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার র্যালী। আসুন- আজকের এই র্যালীর মধ্য দিয়ে আমরা সেই শুভ সূচনা করি, যে সূচনার মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব, তার আমরা সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারবো। একই সাথে আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যিনি ১৯৭১ সালে শিশু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাকে নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে আমরা এখানে আমাদের নেতৃত্বে বসাতে পারব এবং আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা রয়েছে তাকে প্রত্যাহার করিয়ে দেশে গণতন্ত্রকে মুক্ত করে সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব, সত্যিকার অর্থেই আমরা আমাদের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারবো।
দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কী দুর্ভাগ্য, আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি জাতি যে, আজকে ৫০ বছর পরে আমরা দেখছি যে, এমন একটি সরকার যারা জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা আজকে ১৯৭১ সালের সমস্ত চিন্তাভাবনাগুলোকে, আশা-আকাংখাগুলোকে, চেতনাকে ধবংস করে দিয়ে তাদের একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করতে গোটা জাতির উপরে নির্যাতন-নিপীড়নের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা একে একে আমাদের অর্জিত সমস্ত কিছু, আমাদের সার্বভৌমত্ব ধবংস করেছে, আমাদের স্বাধীনতা ধবংস করেছে, আমাদের ভোটের অধিক্রা কেড়ে নিয়েছে, আমাদের লেখার অধিকার কেড়ে নিয়েছে, আমাদের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তাঁর ঘোষণার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছিলো, তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এদেশের সমস্ত মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। রাষ্ট্রপতি হয়ে তিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, মানুষের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে নয় বছর সংগ্রাম করে গণতন্ত্রকে পূণরুদ্ধার করেছিলেন এবং সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন তাকে এই সরকার ধবংস করে দিয়েছে। বসুন্ধরার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ভারক্রান্ত হৃদয়ে উপস্থিত হয়েছি যখন আমাদের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা, এই দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্য তিনি আজকে এই সরকারের মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে অবস্থান করছেন। সেইজন্য এই র্যালী আজকে গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এজন্য যে, ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করি সেই সময়ের অনেকে এখানে উপস্থিত আছেন। সেই যুদ্ধ করেছিলাম আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, আমরা একটা মুক্ত স্বদেশ পাবো বলে, সেই যুদ্ধ করেছিলাম আমাদের বাক স্বাধীনতা থাকবে, আমাদের লেখার স্বাধীনতা থাকবে, আমরা আমাদের সন্তানের জন্য একটা বাসভূমি নির্মাণ করতে সক্ষম হবো সেখানে কোনো রকমের অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন-দমন থাকবে না।
বর্ণাঢ্য র্যালী শুরুর আগে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় খোলা ট্রাকের মঞ্চে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে র্যালীর শুরুর ঘোষণা দেন। পরে তিনি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আবদুস সালাম, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ^াস, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন নবী খান সোহেল,সাংগঠনকি সম্পাদক ফজলুল হক মিলন প্রমূখ নেতাদের নিয়ে পায়ে হেটে র্যালীতে অংশ নেন।
র্যালীতে সামনে ছিলো মুক্তিযোদ্ধা দল এবং এরপরে মহিলা দল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল ‘সুবজ রঙ’ এবং যুবদলের ‘লাল রঙ’ এর টুপি পড়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। র্যালীতে ছোট ছোট ট্রাক বেগম খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান, তারেক রহমানের বড় বড় প্রতিকৃতি দিয়ে সাজিয়ে জিয়াউর রহমানের চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধে উজ্জীবনী বিভিন্ন দেশাত্মকবোধক গান বাজাতে দেখা গেছে। নয়াপল্টনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে আবার নয়া পল্টনে এসে র্যালী শেষ হয়। এই র্যালী যখন শুরু হয়ে শান্তিনগরের মোড় ঘুরে তখন র্যালী শেষ সীমানা ছিলো নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে।
এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী, বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, অনিদ্র ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, সহ দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুল ইসলাম আলিম, আসাদুল করিম শাহীন, আনিছুর রহমান তালুকদার খোকন, আমিরুজ্জামান শিমুল, যুব বিষয়ক সহ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেয়াজ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আ ক ম মোজ্জামেল হক, আকরামুল হাসান, হায়দার আলী লেলিন, রফিক শিকদার, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সুরুজ আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, সাধারণ সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিনিয়র সহ সভাপতি মোরতাজুল করীম বাদরু, সহ সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, সহ সভাপতি আনু মোহাম্মাদ শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ,সাদরেজ জামান, সহ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শহিদুল ইসলাম, সর্দার নুরুজ্জামান, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, সহ সভাপতি আলহাজ খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহিম, সহ সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলম, হাজী মোঃ মাসুক মিয়া, জাসাসের আহবায়ক হেলাল খান, সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইন, প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, মৎসজীবি দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাব, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, তাতী দলের আহবায়ক আবদুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, সিনিয়র সহ সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, সাবেক ছাত্রনেতা সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদ, মহাসচিব ডা. আবদুস সালাম প্রমূখ নেতারা বিভিন্ন মিছিলে নেতৃত্ব দেন নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে। এছাড়াও বিজয় র্যালিতে ঢাকার আশপাশের জেলা নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানকিগঞ্জ, নরসিংদী থেকে বিপুল সংখ্যক বিএনপির নেতা-কর্মী অংশ নেন।
বিএনপির শোভাযাত্রা উপলক্ষে ব্যাপক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। শান্তিনগরের মোড়ে পুলিশ কাটাতার বসিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। দুপুর থেকে শোভাযাত্রা উপলক্ষে নয়াপল্টনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে পুলিশ। ফলে কাকরাইল, মালিবাগ, বিজয়নগর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।