আ.লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৪ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৪৭ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম উচ্চারণ করা হয়নি, তাজউদ্দিন আহমদের কথা উচ্চারণ করা হয়নি, এমন কি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীকে আড়ালে রেখেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার যুদ্ধ এদেশের আপামর জনতা করেছে; একজন ব্যক্তি বা একক কোনো দল নয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে সিলেট নগরের রেজিস্ট্রারী মাঠে সিলেট মুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও গণসংগীত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির উদ্যোগে গঠিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি, সিলেট বিভাগের উদ্যোগে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
এতে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে দিচ্ছে না। উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্পের কথা বললেও, দেশে দারিদ্র্য বেড়েছে, অর্থনীতি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে যে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হয়েছে সেখানে শেখ মুজিব ছাড়া আর কারো নাম নেয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর সিলেট শত্রুমুক্ত করতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কিন্তু জোর করে ক্ষমতায় থাকা এ সরকার প্রকৃত ইতিহাস মুছে দিয়ে একটি ভ্রান্ত গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চায়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য বাসযোগ্য একটি ভূমি রেখে যেতে ব্যর্থ হয়েছি। আমাদের স্বপ্ন ছিলো একটি গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। এ দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গুটিকয়েক মানুষ সরকারের ছত্রছায়ায় কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশে আজ গণতন্ত্রের কবর রচনা করা হয়েছে। যার প্রমাণস্বরূপ- জনগণের ভোটে বার বার নির্বাচিত একজন প্রধানমন্ত্রীকে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে কারাবাস করিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। তিনি এখন মুমূর্ষু অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে দেয়া হচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীন ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। প্রয়োজনে একাত্তর সালে যেভাবে দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবব্ধ হয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশবাসী, ঠিক সেইভাই যুদ্ধ করে বর্তমান অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি- সেই দিন আর বেশি দূরে নয়।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস বিকৃত করছে। জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীনতার যুদ্ধের শুরু হয়েছে; এটা সরকার মানতে চায় না। গণতন্ত্র হত্যা, বাকস্বাধীনতা হরণ করছে আওয়ামী লীগ।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন দলটি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বীর বিক্রম। সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠে বেলা ২টা থেকে শুরু হয় অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। জাতীয়, দলীয়, দেশাত্মবোধক ও গণসংগীত পরিবেশনের পর বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আলোচনা। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক ও সিলেট সিটি করপোরেরশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, আব্দুর রাজ্জাক। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন সিলেট বিভাগীয় সমন্বয় কমিটির সদস্যসচিব ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন। পরে সন্ধ্যা ৫টায় অনুষ্ঠানের সভাপতি সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ সমাপ্ত করা হয়। এর আগে সমাবেশে যোগ দিতে গতকাল শনিবার দুপুরে বিমানে করে সিলেটে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা।