বিজয় দিবসের বিএনপির র্যালি আগামীকাল
সারাদেশকেই বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে সরকার - রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৯ এএম, ১৯ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪৮ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে টিকে থাকার মোহ থেকেই আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী বারবার গণতন্ত্রকে জবাই করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আজ শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে ১৯ ডিসেম্বর রবিবার বেলা ২টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। বিজয় র্যালি সফল করার জন্য বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যথাসময়ে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
তিনি বলেন, জাতির ঐতিহাসিক অবিস্মরণীয় অর্জন ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। ৯ মাস এদেশের বীর সন্তানরা পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করে। লাখো শহীদের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা লাভ করলেও স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই স্বজাতির রক্তপায়ী দানবেরা স্বাধীনতার অন্তর্নিহিত মূল স্পিরিট গণতন্ত্রকে দাফন করেছে। কখনো বাকশালের নামে, কখনো উন্নয়নের নামে কন্ঠের স্বাধীনতাকে কেড়ে নিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে অন্তর্ভুক্তিমূলক বহুমাত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা। সৃষ্টি করেছে এক ভয়ঙ্কর ভয়ের পরিবেশ। এবার বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী হলেও দেশে বর্তমানে গণতন্ত্র হত্যাকারীরা ক্ষমতায়। এই মুহূর্তে বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মৌলিক মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে। দেশে গণতন্ত্রের বিকাশের স্থানে নাৎসীবাদের বিকাশ লাভ করেছে। ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে টিকে থাকার মোহ থেকেই আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী বারবার গণতন্ত্রকে জবাই করেছে। আর এটি করতে গিয়ে সারাদেশকেই বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে। তারা দেশের জনগণ, বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বিরোধী মতের মানুষকে মনে করে ভাড়াটিয়া বা প্রজা, আর নিজেদেরকে দেশের মালিক মনে করে। তাই নির্বাচন, ভোট, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সবকিছু বানের জলে ভাসিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো দুঃশাসন কায়েম করেছে। আর নিহত গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এবং গণতন্ত্রের আপোসহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। একদলীয় বাকশালের বিষাক্ত গ্যাসচেম্বার থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিশুদ্ধ বাতাস বইয়ে দিয়েছিলেন দেশের শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়াউর রহমান। সেই গণতন্ত্রের পথচলাকে আবারো বন্দুকের নলের মুখে বন্দি করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আবারো ৯ বছরের নির্ভিক দুঃসাহসী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে বন্দি গণতন্ত্রকে মুক্ত করেন এদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাই জনগণের পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে বারবার অসীম দৃঢ়তা নিয়ে দাঁড়ানোর জন্যই বর্তমান নিশিরাতের সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে, অথচ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ থেকে লক্ষ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে প্রতি বছর। বন্ধুরা, বিদেশে দেশনেত্রীর সুচিকিৎসার মৌলিক অধিকারকেও তারা অবৈধ ক্ষমতার দাপটে বাধা দিচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকারের এই মনুষ্যত্বহীন অমানবিকতার বিরুদ্ধে দেশবাসী ক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদে সোচ্চার। মুক্ত বেগম খালেদা জিয়ার অস্তিত্বকে অন্যায়-অবিচারের ধারক এবং গণতন্ত্র খুন করার কসাই সরকার অজানা আতঙ্কে ভুগছে। জনগণের নেত্রীকে হাজারো বাধার মুখেও আটকিয়ে রাখা যাবে না জেনেই তাঁর জীবনকে নিঃশেষ করে দেয়ার যাবতীয় আয়োজন চালিয়ে যাচ্ছে ভোটারবিহীন সরকার। আমরা এই মুহূর্তে দেশনেত্রীর মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য আবারো জোরালো আহবান জানাচ্ছি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গতকাল সাদা পোশাকধারীরা ঢাকা মহানগর উত্তর আদাবর থানাধীন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হাসান জীবনকে তুলে নিয়ে গিয়ে এখনও পর্যন্ত তার কোনো হদিস না দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মনোয়ার হাসান জীবনকে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং তার কোনো খোঁজ না দেয়ার ঘটনায় বর্তমান নিশিরাতের সরকারের চলমান গুমের আরেকটি নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। মানুষকে নিখোঁজ করে দেয়ার মতো নির্দয় ঘটনাকে বর্তমান অবৈধ সরকার তাদের টিকে থাকার গ্যারান্টি হিসেবে বিবেচনা করছে। মনোয়ার হাসান জীবনকে ডিবি পুলিশই আটক করে নিয়ে গিয়ে এখন কোনো হদিস দিচ্ছে না। তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার পরিবারসহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি অবিলম্বে মনোয়ার হাসান জীবনকে জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি। গত পরশু মহান বিজয় দিবসে পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলায় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বিএনপির সভাপতি এস এম আহসান কবীর এবং সাধারণ সম্পাদক ও যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক এইচ এম দ্বীন মোহাম্মাদ সকল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে শহীদ মিনারে উঠতে গেলে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ মিল্টনের নেতৃত্বে একদল ক্যাডার বাহিনী বাধা দেয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালি করে। সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এইচ এম দ্বীন মোহাম্মদকে ঘিরে রাখে এবং তাকে শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলাধীন বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে বিজয় র্যালিতে পৌর মেয়র আশরাফের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে। হামলায় বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি পুত্র রাফি, ছাত্রদলের সাবেক নেতা রাজিব, আশিক ও যুবদল নেতা বাবুলসহ ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। মহান বিজয় দিবসের মতো জাতীয় দিবসে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দেখে মনে হয়- দেশটা আওয়ামী লীগের পৈতৃক সম্পত্তি, এই দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া কারো কোনো অধিকার নেই। পিরোজপুরের কাউখালীতে পুলিশের নাকের ডগায় আওয়ামী ক্যাডারদের ন্যক্কারজনক হামলা এবং কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা ও নেতাকর্মীদের আহত করার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।