খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আবারো অবনতি : ২২ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশের ৩২টি জেলায় সমাবেশে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৩ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২২ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আবারো অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়ার) স্বাস্থ্যের অবস্থা আবার খারাপ হয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে তার স্বাস্থ্যের বিভিন্ন প্যারামিটারে নিম্নগামী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে সারাদেশের ৩২টি জেলায় সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
আজ বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়ার হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও কমের দিকে।
বিএনপি মহাসচিব জানান, প্রথম দিন ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, খুলনা বিভাগের যশোর, রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, রাজশাহী বিভাগের বগুড়া, সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাক্ষণবাড়ীয়ায় সমাবেশ হবে। এসব সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা সমন্বয় করবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর টাঙ্গাইলের জনসভায় বক্তব্য রাখবেন।
২২, ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর বিভিন্ন বিভাগের জেলা সদরে প্রতিদিন ছয়টি এবং ২৮ ও ৩০ ডিসেম্বর প্রতিদিন সাতটি করে সমাবেশ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, মঙ্গলবার পর্যন্ত খালেদা জিয়ার কোনো অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হয়নি।
তিনি বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার না থাকায় সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না।
ফখরুল বলেন, জনগণের কাছে জবাবদিহিতা প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দেশের সর্বত্র গণতন্ত্রহীনতা বিরাজ করছে।
বিএনপি নেতা বলেন, কোনো দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত থাকলে মানুষ মানবাধিকার ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ভোগ করতে পারে না। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে সরকারের বাধা তার সর্বশেষ উদাহরণ। ৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তার মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ায় তাকে অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে। খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ১১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন জমা দেন।
এদিকে, চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ‘কিছুদিনের’ মধ্যেই জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গত বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ আবাসিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের আইনমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বিএনপি'র ১৫ জন আইনজীবী তার সাথে দেখা করে যে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়ে এই উপমহাদেশের কোনো আদালতে কোনো নজির আছে কিনা তিনি সেটা খতিয়ে দেখছেন। এখনো তা শেষ হয়নি, প্রায় শেষ প্রান্তে। কিছুদিনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে জেলা পর্যায়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। আগামী ২২ তারিখ থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে, চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।’
তিনি বলেন, ‘এই সমাবেশ উপলক্ষে আমরা জাতীয় পর্যায়ে কয়েকটি টিম গঠন করেছি। যার তালিকা আমরা গণমাধ্যমকে পরে জানিয়ে দেবো।’ খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে ইতিমধ্যে সারাদেশে মানববন্ধন, সমাবেশ, গণঅনশন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি।
বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ম্যাডামের শরীর আবারো একটু খারাপ হয়েছে। তার বিভিন্ন প্যারামিটারগুলো নিচের দিকে। আপনার হিমোগ্লোবিন কমের দিকে।’ রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা এখন বন্ধ আছে, গতকাল পর্যন্ত ঠিক ছিল।’
উল্লেখ্য, গত ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন আহমেদ তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড তার চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।