সরকার প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২২ এএম, ১৪ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪০ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আন্দোলনে পেশাজীবীদের রাস্তায় নামার আহবান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, একটি দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট, ভয়াবহ ও দানবীয় আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করা হবে।
আজ রবিবার দুপুরে পেশাজীবীদের এক মানববন্ধনে তিনি এই আহবান জানান। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে বিএনপি গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই মানববন্ধন হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি পেশাজীবীদের প্রতি আহবান জানাতে চাই, আসুন আর কাল বিলম্ব নয়, জনগণ বেরিয়ে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি সব জনগণই বেরিয়ে আসবে, আরো বেশি করে আসবে। পেশাজীবী ভাইরাও এগিয়ে আসবেন আরো বেশি, আরো শক্তির সঙ্গে। তখন নিঃসন্দেহে আমরা আন্দোলন শুরু করতে পারবো। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা এই সরকারকে বাধ্য করতে পারবো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে।
তিনি বলেন, আজকের এই আন্দোলন শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন নয়, আজকের এই আন্দোলন হচ্ছে সমগ্র দেশের, সমগ্র জাতির মুক্তির আন্দোলন। আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে, আমাদের সমস্ত স্বপ্নগুলো যা এতোদিন আমরা অর্জন করেছিলাম তাকে ধ্বংস করা হয়েছে। আজকে সেই কারণে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলের ঐক্যের মধ্য দিয়ে, সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যের মধ্যে দিয়ে একটা দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি। যে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট ভয়াবহ দানবীয় আওয়ামী লীগ সরকারকে পরাজিত করতে পারবো এবং তাদেরকে বাধ্য করবো যে, তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর চিকিৎসা এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করবে। প্রায় এক মাসের ওপরে বিএনপি আন্দোলন করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি রাজপথে অনশন, সমাবেশ, বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ করেছে এবং পুলিশের নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপির নেতারা সমস্ত জায়গায় আন্দোলন শুরু করেছেন। আর শওকত মাহমুদ সাহেব যে কথা বলেছেন, পেশাজীবীরা পরিবর্তন আনতে পারে। সত্যি পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেশে পরিবর্তনের জন্য পেশাজীবীরা সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। শর্ত সাপেক্ষে বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করতে বলা হয়েছে- আদেশের এই কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। বেগম খালেদা জিয়াকে তাদের যে ভয়, তিনি যদি সুস্থ হয়ে বের হয়ে আসেন তাহলে তাদের তখতে তাউস ভেঙে খানখান হয়ে যাবে। সেই কারণে তারা তাঁকে বাইরে চিকিৎসার জন্য দেন না। বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে তিনি বলেন, এতো অসুস্থ যে, এখন ডাক্তারা নিজেরাই বলছেন, বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা বলেছেন, এখন যে চিকিৎসা করলে আল্লাহ তাআলা আবার তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারেন- সেই চিকিৎসা এদেশে নেই, তাঁকে বিদেশে পাঠানো দরকার। কিন্তু এই সরকার তাঁকে বাইরে যেতে দিতে চায় না।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আজকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাঁকে আটক করে রাখা হয়েছে। এই আটক করে রাখাটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা সামগ্রিক চক্রান্তের একটা বহিঃপ্রকাশ। ১/১১ তে যে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল, বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণ করা হবে, পুরোপুরি রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে দেয়া হবে- খালেদা জিয়াকে সেই পরিকল্পনা নিয়ে তারা (সরকার) এগিয়ে চলছে।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, ওপরে আল্লাহ আছেন আর নিচে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ। তাদের দোয়ায় ও আশীর্বাদে বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হবেন এবং ফিরে আসবেন বাংলাদেশের মানুষের মাঝে। আমি আপনাদের বলছি- যে লড়াই আপনারা শুরু করেছেন তাঁর সুচিকিৎসার জন্যে, তাঁর মুক্তির জন্যে এই লড়াই অব্যাহত রাখেন। তারা (সরকার) যেমন ধরা খেতে শুরু করেছে। এর পরে এমনভাবে ধরা খাবেন যেমনভাবে জালের মধ্যে মানুষ ধরা পড়লে ততই আটকিয়ে যায়, আমাদের সরকারও সে রকম আটকে যাবে ছাড়া পাবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটক করে রাখা হয়েছে। তাদের যে ভয় দেশনেত্রী যদি বেরিয়ে আসেন তাহলে তাদের তখতে তাউস ভেঙে চূরমার হয়ে যাবে। সে কারণে তারা বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য দিতে চান না।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শওকত মাহমুদ বলেন, আজকে আইনের দোহাই দেয়া হয়। আইন কোথায়? আইন কোনো অবশিষ্ট নাই। আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে চাই। যদি আপনারা (সরকার) অনুমতি না দেন, আমরা অনুমতি আদায় করে নেবো। আমরা পেশাজীবীরা রাজপথে দাঁড়িয়ে সেই দাবি আদায় করব। আমরা বলে দিতে চাই, বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে আপনাদেরও কিছু হবে।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার পরিচালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মহানগর বিএনপি উত্তর আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম, আইনজীবী ফোরামের অ্যাডভোকেটে আহমেদ আজম খান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক শামসুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ডা. রফিকুল কবির লাভলু, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, চৌধুরী আবদুল্লাহ ফারুক, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, জাতীয় প্রেসক্লাবে ইলিয়াস খান, কর আইনজীবী ফোরামের অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের জাকির হোসেন, এমটেবের বিপ্লব-উজ-জামান বিপ্লব, সম্মিলিন সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের কালাম ফয়েজী প্রমুখ।