খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে ‘আন্দোলনের গতি-প্রকৃতিকে আরো কঠোর করার’ প্রস্তুতি - মিজা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৬ এএম, ১৩ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:১০ পিএম, ১৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে ‘আন্দোলনের গতি-প্রকৃতিকে আরো কঠোর করার’ প্রস্তুতি নিতে বলেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ রবিবার জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের এক আলোচনা সভায় তিনি প্রস্তুতির তাগিদ দেন। সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে সংগঠনটির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘কৃষক বাঁচাও দেশ বাঁচাও’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮০ সালের ১১ ডিসেম্বর কৃষক দল প্রতিষ্ঠা করেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। গত ৭ ডিসেম্বর কৃষক দলের ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সত্যিকার অর্থে গুরুতরভাবে অসুস্থ এবং ডাক্তাররা বলেছেন যে, তাঁর বাইরে যাওয়া খুব প্রয়োজন এবং ইতিমধ্যে যাওয়া প্রয়োজন। কেনো? তারা বলছেন যে, ইতিমধ্যে যে চিকিৎসাটা প্রয়োজন সেই চিকিৎসা নেই যা দিলে তিনি সুস্থ হবেন। সরকার সেটা করতে দিচ্ছে না, করতে দিতে চাচ্ছে না। আমরা মনে করি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তাঁর সুচিকিৎসা পাওয়ার জন্যে, বিদেশে তাঁকে পাঠানোর জন্যে শুধু কথায় হবে না। আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছি এই আন্দোলনের গতি-প্রকৃতিকে আরো কঠোর করতে হবে, আরো দুর্বার করতে হবে। দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাঁকে মুক্ত করেই আমরা তাঁর সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে বাইরে পাঠাতে পারবো এবং তাঁকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনতে পারবো। যেকোনো আন্দোলনকে যদি সফল করতে চান তাহলে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে সংগঠনকে শক্তিশালী করা। আপনার যদি সংগঠন শক্তিশালী থাকে আপনি সব আন্দোলনকে সফল করতে পারবেন। সংগঠন যদি শক্তিশালী না থাকে কোনো আন্দোলন সফল হবে না। এই কারণে আমি বিশ্বাস করি, কৃষক দলকে আপনারা খুব অল্প সময়ের মধ্যে গুছিয়েছেন। আরো দ্রুত আমার পরামর্শ হচ্ছে আপনারা ছড়িয়ে পড়েন। প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নে সংগঠন তৈরি করে কৃষক ভাইদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসেন এবং তাদের সমস্যাগুলো সামনে নিয়ে আসেন।
‘আমলা নির্ভর সরকার’ এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ এখন রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা দানবে পরিণত হয়েছে। সত্যিকার অর্থে তারা কিন্তু দেশ চালায় না। দেশ চালায় আমলা এবং তারা গণতন্ত্রের বাইরে দেশ পরিচালনা করছে। আপনারা দেখেছেন যে, কী অবস্থা করেছে বাংলাদেশের? বেশি দূর যাওয়ার দরকার নেই। গতকালকে দেখেছেন আপনারা এখানে আমাদের একটা প্রতিষ্ঠান র্যাব তাকে আজকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে আমেরিকা থেকে। তাদের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা তাদেরকেও সেখানে অগ্রহণযোগ্য এবং তাদেরকে বলা হয়েছে যে, যেতে পারবে না, তাদের কোনো সম্পত্তি থাকলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। এটা কিন্তু একটা দেশের জন্য লজ্জার কথা। আমার প্রায় ৭৪ বছর বয়স। আমি তো কোনো দিন শুনিনি যে, পাকিস্তান আমলে হোক, বাংলাদেশের আমলে হোক আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর, আমাদের কোনো কর্মকর্তাদের ওপরে এই ধরনের একটা কলঙ্কজনক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়েছে যা আমাদের দেশের জন্য এই লজ্জা সৃষ্টি করা হয়েছে। আজকে দুর্ভাগ্য আমাদের এই আওয়ামী লীগ এই অবস্থাটা তৈরি করেছে যে, আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠান যেগুলোকে নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত সেই প্রতিষ্ঠানগুলো তারা ধ্বংস করে দিয়ে শুধুমাত্র তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবার জন্যে তারা আপনারা দেখবেন পত্রিকায় আছে- প্রায় ৬শ লোককে গুম করা হয়েছে, হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড করা হয়েছে এবং পঙ্গু হয়ে আছে হাজার হাজার।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে ‘পয়েন্ট লাইন গুলি করে হত্যার’ ঘটনা কোনো সভ্য দেশে সম্ভব নয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনকে তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে। এরপর পত্রিকায়ও এসেছে যে, পুলিশের এক অফিসার বলেছে, মাছের রাজা ইলিশ আর দেশের রাজা পুলিশ। এভাবে কিন্তু সরকার দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। দুঃখ হয় আমাদের, আমাদের সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান তাকে আমেরিকাতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, সে আর ঢুকতে পারবে না, তার পরিবারের সদস্যরা ঢুকতে পারবে না। অর্থাৎ এমন একটা অসভ্য দেশে পরিণত হয়েছি, এমন একটা অগণতান্ত্রিক দেশে পরিণত হয়েছি যে, এখন আমাদের রাষ্ট্রের যারা ওপরের দিক আছে যাদের ওপরে রাষ্ট্র নির্ভর করে তাদেরকে বিভিন্ন রাষ্ট্র গ্রহণ করতে রাজি হচ্ছে না যে, ‘দে আর ডেনজারাস এলিমেন্টস’। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনই একমাত্র পথ বলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল ও যুগ্ম সম্পাদক টিএস আইয়ুবের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কৃষক দলের গৌতম চক্রবর্তী, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, নাসির হায়দার, জামাল উদ্দিন খান মিলন, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সল, খন্দকার নাসিরুল ইসলাম, আলহাজ খলিলুর রহমান ভিপি ইব্রাহীম, মোশাররফ হোসেন এমপি, হাজী মোঃ মোজাম্মেল হক মিন্টু সওদাগর প্রমুখ।