ছাত্রলীগ সভাপতির পায়ের জুতা মৃত্যুপথযাত্রী পিতার সামনে নিজের মুখে মারলেন কর্মী!(ভিডিওসহ)
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৯ পিএম, ১১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৩৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ নিজের জুতা খুলে এগিয়ে দিলেন নিজ দলের কর্মীর সামনে। বললেন তোর কৃতকর্মের জন্য আমার জুতা তোর মুখে মার। ভীত সন্ত্রস্ত একই দলের কর্মী হোসেন সরকার অসুস্থ মৃত্যুপথযাত্রী পিতার সামনে দুই গালে একে একে ৬টি জুতার বাড়ি মারলেন। এই অমানবিক ও ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে গত ৮ ডিসেম্বর ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এদিকে এঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগ এক বিবৃতিতে দলীয় আদর্শ ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আরিফুজ্জামান বিপাশকে মহেশপুর উপজেলা ছাত্রলীগের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায় উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. আরিফুজ্জামান বিপাশের পা ধরে ক্ষমা চাচ্ছেন মহেশপুর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের যুবক এস এম সরকার ওরফে হোসেন সরকার। এতেও তার পাষান হৃদয় গলেনি। কথাবার্তার এক পর্যায়ে নিজের জুতা খুলে এগিয়ে দেন হোসেন সরকারের সামনে। মারতে বলেন মুখে। মহেশপুর হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অসুস্থ পিতা গিয়াস উদ্দীন সরকার এই দৃশ্য দেখে হতবাক ও আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পিতা গিয়াস উদ্দিন সরকার (৬২)। অসুস্থ পিতাকে দেখতে হাসপাতালে ছিলেন হোসেন সরকার। খবর পেয়ে দলবল নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ হাসপাতালে এসে এই কান্ড ঘটান। এদিকে নিজের ছেলে মুখে জুতার বাড়ি মারতে দেখে আরো অসুস্থ হয়ে পড়লে পিতা গিয়াস উদ্দীন সরকারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে তাঁর মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুর পর মুখে জুতা মারার ঘটনার পর দুঃখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হোসেন সরকার লিখেছিলেন, ‘মানুষ কখন আত্মহত্যা করে?’। এদিকে দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে পিতার মৃত্যুর পর হোসেন কথা বলার ভাষাও হারিয়ে ফেলেন।
মুঠোফোনে শুধু এটুকুই বলছেন, ‘ওরা আমাকে জুতা মারতে বাধ্য করার কারণে অসুস্থ বাবা খুব কষ্ট পেয়েছেন, যে কারণে তাঁকে বাঁচানো গেল না।’ জুতা মারার ঘটনা সরাসরি অস্বীকার করেননি ছাত্রলীগ নেতা আরিফুজ্জামান বিপাশ।
তিনি বলেন, একই দলের কর্মী হোসেন সরকারের অসুস্থ পিতাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। এ সময় হোসেন সরকার দুঃখ প্রকাশ করে তার কৃত কর্মের জন্য ক্ষমা চয়ে বলেন, ‘এত দিন আপনাদের সঙ্গে বিরোধ করে এসেছি, অথচ আপনারা আমার বাবাকে দেখতে এসেছেন। আমি এতদিন ভুল করেছি, এর জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।’
ছাত্রলীগ নেতা আরও দাবি করেন, ওই কর্মী নিজেই তাঁকে জুতা দিয়ে মারতে বলেন। তখন তিনি নিজে না মেরে পা থেকে জুতা খুলে এগিয়ে দেন। হোসেন সরকারের ভগ্নিপতি মোমিনুর রহমান বলেন, তার শ্যালক ছাত্রলীগ করেন ও প্রতিপক্ষ গ্রুপের সঙ্গে ছিলেন। ফলে ফেসবুকে দলের গ্রুপিং লবিং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি করে। এই লেখালেখি নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আরিফুজ্জামান বিপাশ ক্ষুব্ধ হন।
মোমিনুর রহমান বলেন, জুতা মারার ঘটনার পর তাঁর শ্বশুর মানসিক কষ্টে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বশুরের কাছে গেলেই শুধু প্রশ্ন করতেন, কেন ছেলেকে দিয়ে নিজের মুখে জুতার বাড়ি দেওয়ানো হলো? এ কথায় তিনি বারবার বলতেন। ছেলের ওপর এই নির্যাতন সইতে না পেরেই শ্বশুরও চিরদিনের মতো চলে গেলেন বলে মনে করেন মোমিনুর রহমান।