জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুলের বাণী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২৪ পিএম, ১০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১২:০৮ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার নিম্নক্ত বাণী দিয়েছেন।
বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বাণী-
"সকল দেশে মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে 'মানবাধিকার দিবস' জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত হয় ১৯৫০ সালে ১০ ডিসেম্বর। তখন থেকে প্রতি বছর 'মানবাধিকার দিবস' পালিত হয়ে আসছে ১০ ডিসেম্বর। এইদিনে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিক মানবিক অধিকারহারা নির্যাতিত মানুষের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করছি। যারা বাক, ব্যাক্তি, চিন্তা, প্রার্থনা, মূদ্রণসহ নাগরিক স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হতে গিয়ে ক্ষমতাসীন ও কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠির নৃশংস নিপীড়নে জীবন দিয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা। নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সহমর্মিতা।
আজও বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে মানুষ একদলীয় স্বেচ্ছাচারী শাসন, গোষ্ঠী, বর্ণ ও জাতিগত সংঘাতে নির্মমভাবে খুন ও গুপ্ত হত্যার শিকার হচ্ছে এবং গুম তথা নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে নানা বয়সী অগণিত প্রাণ। জাতিসংঘের সার্বজনিন ঘোষনায় বলা হয়েছে-বিশ্বের সব জাতির সকল মানুষের মানবাধিকার সংরক্ষণের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। কিন্তু দেশে দেশে নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসকেরা জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকারের সার্বজনিন ঘোষনার নির্দেশনাগুলোকে তাচ্ছিল্য করে নিজ দেশের জনগণের উপর চালিয়ে যাচ্ছে নির্দয় দমন-পীড়ণ।
শুধুমাত্র ক্ষমতাকে চিরস্থায়ীভাবে ধরে রাখার জন্য ন্যায়-নীতি, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা অগ্রাহ্য করতে হয়, আর সেজন্য এই সকল গণবিরোধী শাসক গোষ্ঠী জনগণের মানবাধিকারের তোয়াক্কা করেনা। দুঃশাসনের অচলায়তন তৈরী করতে গিয়ে তারা প্রতিবাদী জনগণের উপর চালায় পাশবিক উৎপীড়ণ। যারা সত্য উচ্চারণ করতে চায় তারা রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজিবিসহ নাগরিক সমাজের যেই হোকনা কেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং কারাবাস, শারিরিকভাবে নির্যাতনসহ জখম, হত্যা ও গুমেরও শিকার হতে হয়।
'মানবাধিকার দিবস' এর এ বছরের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে "সমতা-বৈষম্য হ্রাস করে, মানবাধিকারের অগ্রগতি" অর্থাৎ সমাজে বৈষম্য দুর করে সমতার পরিসর বিস্তৃত হলেই মানবাধিকারের অগ্রগতি হবে। তাই তাদের সংঘবদ্ধ হয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে জনগণের না আছে নাগরিক স্বাধীনতা, না আছে মৌলিক মানবিক অধিকার।
দেশের বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সকল ধরণের মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাঁকে অন্যায়ভাবে বন্দী করা হয়েছে। তিনি এখন গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বিনা দোষে তাঁকে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি স্বৈরশাসকের প্রতিহিংসার শিকার।
বেগম খালেদা জিয়ার মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে তাঁকে বিদেশে সুচিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে। সুতরাং এই নৈরাজ্যকর দুঃশাসনের ছোবল থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের এই মূহুর্তে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর সেজন্য গণতন্ত্র পূণ:রুদ্ধারের অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন তরান্বিত করতে হবে।
দেশের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের মিলিত কন্ঠের আওয়াজ তুলে বর্তমান অপশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গিকার।"
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বাণী-
"জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মৌলিক মানবিক অধিকারহারা নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা। বাংলাদেশে এখন ভয়াবহ দুঃসময় বয়ে চলছে। ক্ষমতাসীনরা বাংলাদেশকে বধ্যভূমিতে পরিণত করেছে। বর্তমান অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকার সীমাহীন রক্তপাত ও বেপরোয়া নিপীড়ন নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করে নিয়েছে।
মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার মানবাধিকারের পরিপূরক। বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার শূণ্যের নিচে অবস্থান করছে। এদেশে শুধু মাত্র বিরোধীদলের নেতাকর্মিরাই শুধু নয়, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, নারী, শিশুসহ কারোই কোন নিরাপত্তা নাই। এরাও গুম, গুপ্ত হত্যা এবং বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন।
সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও দল নিরেপক্ষ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, টকশো আলোচকদের বিরুদ্ধেও মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে এবং কাউকে কাউকে কারান্তরীণও করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে চলছে অমানবিক স্বৈরশাসন। শাসকগোষ্ঠী পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চরম কর্তৃত্ববাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে।
গণতন্ত্রের জন্য যিনি বারবার আপোষহীন লড়াই চালিয়ে গেছেন সেই আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সকল মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তাঁর উন্নত চিকিৎসা নেয়ার অধিকারও সরকার হরণ করেছে। আজকের এই মানবাধিকার দিবসে আমি বেগম জিয়ার প্রতি মনুষ্যত্বহীন নির্দয় আচরণের তীব্র নিন্দা জানাই। আমি অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
'মানবাধিকার দিবস' এর এ বছরের মূল থীম হচ্ছে "সমতা-বৈষম্য হ্রাস করে, মানবাধিকারের অগ্রগতি" অর্থাৎ মৌলিক মানবাধিকারে অগ্রগতি নিশ্চিত হবে সমাজে বৈষম্য হ্রাসের মধ্য দিয়ে। এই বাক্যটির মূল ভাব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজে বৈষম্য হ্রাসের মাধ্যমে সামাজিক সাম্যের ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়, পাশাপাশি মানবাধিকারও চূড়ান্ত বিকাশ লাভ করে।
আজও মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই মানবাধিকারের পক্ষে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-লিঙ্গের বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে মানুষের ন্যুনতম বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই। নিয়ন্ত্রিত রাজনীতির সীমিত সুযোগও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। সভা-সমাবেশ তথা প্রতিবাদ করার ন্যুনতম সুযোগ অবশিষ্ট নেই। নাগরিক অধিকার পূণ:রুদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার দিবসে এই হোক আমাদের দৃঢ় সংকল্প।"