প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এহেন বক্তব্য আশা করা যায় না - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৪ এএম, ১০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৪০ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এহেন বক্তব্য আশা করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির মরহুম নেতা সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ স্মৃতি পরিষদ’র উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর করোনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। আমরা আগেই বলেছি তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁর চিকিৎসা দরকার এবং সেই চিকিৎসা এই দেশে সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বলেছি যে, ডাক্তার সাহেবরা যারা তাঁর চিকিৎসা করছেন তারা বলেছেন, যে টেকনোলজিতে চিকিৎসা করা দরকার সেই টেকনোলজি এখানে নেই। সুতরাং তাঁকে অবিলম্বে কালবিলম্ব না করে বাইরে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো দরকার। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে জোর করে ক্ষমতা দখল করে দেশ চালাচ্ছেন তিনি বলছেন, অনেক মানবতা দেখিয়েছি। আর কত মানবতা দেখাব। এটা কোনো সভ্য দেশের নেতার কাছ থেকে আশা করা যায় না। দুর্ভাগ্য আমাদের, যে নেত্রী তাঁর সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য কারাগারে গেছেন, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য তিনি নিগৃহীত হয়েছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যখন স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তখন এই নেত্রী দুটো একেবারে শিশু তাদেরকে হাত ধরে নিয়ে পালিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। সেখানে তিনি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন এবং ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। সেই নেত্রীকে আজকে তাঁর বিশেষ চিকিৎসা, উন্নত চিকিৎসার কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না, অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। বুধবার আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁকে (খালেদা জিয়া) যে বাসায় থাকতে দিয়েছি, ইচ্ছামতো হাসপাতালে নিচ্ছে, চিকিৎসা করছে, এটাই কি যথেষ্ট না? অনেক বড় উদারতা কি দেখাইনি? আমার কাছ থেকে আর কত আশা করে তারা? কিভাবে আশা করে? গত ১৩ নভেম্বর থেকে বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর রক্তক্ষরণ হচ্ছে থেমে থেমে। তাঁর মেডিকেল বোর্ড অবিলম্বে তাঁকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত এক যুগে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে। এখানে এখন সত্য সুন্দর বলতে কিছু নেই, ন্যায় বলতে কিছু নেই। এখানে এখন ভয়াবহ প্রতিহিংসা, ভয়াবহ অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন-মাসল এই ছাড়া আর কিছু নেই। ২/৩ দিন আগে অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান একটা লেখা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন যে, আগে যে বাক্যটা লিখতে আমার এক মিনিট সময় লাগতো, সেই বাক্য লিখতে আমার ৭ দিন সময় লাগে। বার বার চিন্তা করতে হয় যে, কোনটা লিখবো, কোনটা লিখবো না, কোন শব্দটা চয়ন করব, কোন শব্দটা চয়ন করবো না। তাতে করে আবার আমার কি হবে? কোন বিপদে পড়বো? কোন আইনের আওতায় পড়ে যাবো জানি না। এই হচ্ছে অবস্থা। এই বিষয়গুলো আজকে সারা বাংলাদেশে গ্রাস করে ফেলেছে। আমরা কথা বলতে পারি না, নিঃশ্বাস প্রাণ খুলে নিতে পারি না। এক দম বন্ধ করা একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা খুব দুঃসময় অতিক্রম করছি। আমরা বিশ্বাস করি একদিন অন্ধকার কেটে যাবে, অবশ্যই একদিন নতুন সূর্যের উদয় হবে, অবশ্যই একদিন চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের মতো মানুষেরা আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবেন, অবশ্যই আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আমাদের যে জিনিসটা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে ঐক্য। আমাদেরকে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আমাদেরকে সব রাজনৈতিক দল, সমস্ত সংগঠন, সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই যে ভয়াবহ একটা মনোস্টার, একটা দানব আমাদের সব কিছু তছনছ করে দিচ্ছে, সেই দানবকে পরাজিত করতে হবে। আবার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবের যে স্বপ্ন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে স্বপ্ন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ সাহেবের যে স্বপ্ন, মেজর হাফিজ উদ্দিন সাহেবের যে স্বপ্ন একটা গণতান্ত্রিক দেশ প্রতিষ্ঠা করা, দেশে একটা সত্যিকার অর্থে সমৃদ্ধ দেশ প্রতিষ্ঠা করা, মাথা উঁচু করার মতো রাষ্ট্র তৈরি করা সেই রাষ্ট্র আমাদের তৈরি করতে হবে। মরহুম নেতা চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে একজন ‘বিনয়ী রাজনীতিক’ হিসেবে অভিহিত করে তার মতো নেতার শূন্যতা দেশের মানুষ অনুভব করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের পরিচালনায় আলেচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, বিএনপি নেতা মাশুকুর রহমান মাশুক, শাহ মো. আবু জাফর, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মরহুম নেতার সহধর্মিণী চৌধুরী শায়লা কামাল, তার কন্যা নায়াব ইউসুফসহ বিএনপি ও ফরিদপুরের জেলা নেতারা উপস্থিত ছিলেন।