আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শিষ্টাচারে বিশ্বাসী - কাদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৩ এএম, ১০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:১৪ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
দলে কিংবা সরকারে কেউ শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করলে তাকে ছাড় দেয়া হয় না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শিষ্টাচারে বিশ্বাসী। ঐতিহ্যগতভাবেই রাজনীতিতে বিনয়, সহমর্মিতা, পরমতসহিষ্ণুতা চর্চা করে।
আজ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দলে কিংবা সরকারে কেউ শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করলে তাকে ছাড় দেয়া হয় না, এ কথা দেশরত্ন শেখ হাসিনা বার বার প্রমাণ করেছেন। যত বড় রাজনৈতিক পরিচয় হোক, অন্যায়, অনিয়ম কিংবা রাজনৈতিক শিষ্টাচার অথবা শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজ করলে দল কখনো তার পক্ষে দাঁড়ায় না।
তিনি বলেন, দেশবাসী দেখেছে একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্য এবং অসদাচরণের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনা ছাড় দেননি। আর তার বিপরীতে দেশবাসী দেখলো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের একজন নেতার অশালীন বক্তব্যকে নির্লজ্জভাবে কীভাবে দলীয়ভাবে সমর্থন দিল। দেশবাসী বিস্মিত, ক্ষুব্ধ এবং লজ্জিত। বিএনপি নেতারা রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। বিএনপি লালন করে প্রতিহিংসা, ষড়যন্ত্র আর পরশ্রীকাতরতা। তাদের মাঝে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই, তারা কৃতঘœ। তারা জন্মলগ্ন থেকে রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিবেশকে কলুষিত করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি দলগতভাবে শিষ্টাচার বর্জিত দল। তা নাহলে শোকসন্তপ্ত মা’কে সান্ত¡Íনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে তারা দরজা বন্ধ করে অসম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে দিত না। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চায়ের আমন্ত্রণের বিপরীতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সেদিনের অশালীন বক্তব্য সে সময় দেশবাসী শুনেছিল। তাই বলতে চাই, শিষ্টাচারহীনতা, অশালীনতা তাদের মজ্জাগত। এটা তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার। মঞ্চে-সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতা-নেত্রীরা যেসব ভাষায় বক্তব্য দেন, তা বলারও অযোগ্য, ছাপারও অযোগ্য। বিএনপিকে মেরুদন্ডহীন ফরমায়েশ-সর্বস্ব এক রাজনৈতিক দল হিসেবে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ইতিহাসের চলিষ্ণু কলম লিখে যায় কত ইতিহাস। আমরা সেসব তুলে ধরে কাউকে বিব্রত করতে চাই না। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার কন্যা আমাদের সে শিক্ষা দেননি। আমরা কখনো একথা বলতে চাই না যে, ১৯৯৩ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিফ নওয়াজ জানজুয়ার মৃত্যুতে কেন শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া! অথচ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করা বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর জেনারেল অরোরা মৃত্যুবরণ করেন ২০০৫ সালে, তখনও খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার মৃত্যুতে তিনিতো কোনো শোক প্রকাশ করেননি।
তিনি বলেন, ইতিহাস বলে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত সেনানিবাসে নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। জেনারেল জিয়া তাকে বার বার ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে আসতে বললেও তিনি সেনানিবাসের নিরাপদ ও বিলাসবহুল আতিথেয়তা ত্যাগ করেননি। পরবর্তীতে এ নিয়ে তাদের পারিবারিক এবং দাম্পত্য কলহ তুঙ্গে ওঠে। বিশিষ্ট কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর কলাম থেকে জানা যায়, জেনারেল জিয়া খলেদা জিয়াকে ডিভোর্স দেয়ার মনস্থির করেছিলেন। সে সংকটকালে বেগম খালেদা জিয়ার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে তাদের সংসার জীবন রক্ষা পেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, জিয়া পরিবারের সদস্যদের অনেক কীর্তি এদেশের মানুষ জানে। কিন্তু সেসব পারিবারের গন্ডি পেরিয়ে রাজনীতির মাঠে আসুক তা আমরা চাই না। কিন্তু বিএনপি নেতারা আজ সে প্যান্ডোরার বাক্স উন্মুক্ত করতে উসকানি দিচ্ছেন স্পষ্টত। বিএনপি নেতারা এতটাই অন্ধ এবং ফরমায়েশ নির্ভর হয়ে গেছেন যে, দলের একজন নেতা মিথ্যাচার করল, অশালীন কথা বলল; অথচ সিনিয়র নেতারা তার পক্ষেই সাফাই গাইলেন। এদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার দেয়াল তুলেছে বিএনপি- এমন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, অকৃতজ্ঞতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিএনপি। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা এবং শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা চেষ্টার পরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতিতে মানবিকতা এবং সহিষ্ণুতার যে নজির স্থাপন করেছেন, তা সমকালীন বিশ্বে নজিরবিহীন। আমি অশ্লীল বক্তব্য প্রদানকারী অভিযুক্ত বিএনপি নেতাকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে ধরে নেব, এটা বিএনপির দলীয় বক্তব্য। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে।