শনিবারের মধ্যে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে ‘সর্বাত্মক আন্দোলনে’ যাবে আইনজীবীরা
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় আইন নয়, বাধা সরকার : মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫২ এএম, ৮ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:০১ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
আগামী শনিবারের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে ‘সর্বাত্মক আন্দোলনে’ যাবে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।
আজ মঙ্গলবার বিকালে এক আইনজীবী সমাবেশ থেকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব সুপ্রিম কের্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে এই আইনজীবী সমাবেশ হয়। ঢাকা বারসহ সারাদেশের বারগুলো থেকে কয়েকশ আইনজীবী এই সমাবেশে অংশ নেয়। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিকৃতি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তরুণ আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন।
অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, আমরা এই সরকারকে তিন দিন সময় দিলাম। বুধ-বৃহস্পতি-শুক্র-শনি। রবিবার আমরা সারা বাংলাদেশব্যাপী আইনজীবীরা অনশন ধর্মঘট করবো। প্রত্যেক ঘরে, প্রত্যেক পাড়ায় পাড়ায় ঘোষণা করবেন অনশন ধর্মঘট হবে আগামী রবিবার। এরপরেও যদি সরকার সোজা না হয় আমি জানি না কী হবে। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, আমি জানি আজকের সূর্যের মুখ মেঘ ঢেকে রেখেছে। আগামীকাল কিন্তু সূর্য উঠবে। আজকে যদি এই সরকার আইনের কথা বলে দেশকে পদানত করে রাখে এবং এমন সময় আসবে এদেশে মানুষে মানুষে মিছিলে মিছিলে রাজপথ কম্পিত করবে, সংগ্রামে সংগ্রামে আন্দোলনে আন্দোলনে এদেশের রাজপথে আগুন জ্বালাবে, দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে। সেই দিনটা বেশি দূরে নয়। আসুন দেশনেত্রীকে বিদেশে পাঠানোর জন্য আমরা আন্দোলন করি।
আইনমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে ফজলুর রহমান বলেন, আইনমন্ত্রী মি. আনিসুল হক আমরা যখন আপনার সঙ্গে দেখা করি, আমরা বলেছিলাম আপনি শুধু আইনমন্ত্রী নন, আপনি একজন আইনজীবীর সন্তান। আপনার পিতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল হক বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আইনজীবী ছিলেন। একথাটি আজকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, আপনার অমর পিতার মুখকে স্মরণ করে, তাকে ছোট না করে, তার আত্মাকে লজ্জা-শরম না দিয়ে আপনি খুঁজে বের করুন আইনের পথ কোনটি। আইনের পথ আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। মানুষের জীবনের চেয়ে আইন বড় নয়। আমি আহবান করব, আইনের কথা না দেখিয়ে এমন একটা সময় এসেছে সাপকে এখন সোজা হয়ে গর্তে ঢুকতে হবে, সরকারকে এখন মাথা নত করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার এবং তাঁর চিকিৎসা করার পারমিশন দিতেই হবে। এছাড়া এই সরকারের কাছে কোনো পথ নাই।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের আইনজীবীরা বলেছেন, আইন দেখাচ্ছেন। কোন আইন? যে আইন দেখাচ্ছেন ৪০১ ধারা। সেখানে পরিষ্কার করে বলা আছে যে, সরকার সরকার, শুধু সরকারই পারে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে। এখানে আইন কোনো বাধা নয়, বাধা হচ্ছে সরকার যারা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, যারা জনগণকে প্রতারণা, ভুল বুঝিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। আইনজীবীদের আজকের এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে একটা আশার সঞ্চার হলো। আমরা কিন্তু পথে পথে ঘুরছি। আজকে সারাদেশ থেকে আইনজীবীরা এসে আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে উজ্জীবিত করেছেন। ইনশাল্লাহ আমরা সকলকে সঙ্গে নিয়ে, বাংলাদেশের সমস্ত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমস্ত গণতন্ত্রকামী শক্তিগুলোকে সঙ্গে নিয়ে আমরা দুর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠাতে সক্ষম হবো এবং এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হবো।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী আজকে অত্যন্ত অসুস্থ। এতো অসুস্থ যে, আমি বর্ণনা করতে পারবো না। তাঁর চিকিৎসকদের প্রেস কনফারেন্সে আপনারা শুনছেন তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁর আশু প্রয়োজন বিদেশে উন্নত সেন্টারে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা। তাঁর চিকিৎসকরা বলেছেন, আমাদের যা কিছু সম্ভব আমরা করেছি। আমাদের কাছে সেই প্রযুক্তি নেই, যে প্রযুক্তি নিয়ে আমরা পরবর্তীতে আরো উন্নতভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করাতে পারি। সরকার শুধুমাত্র প্রতিহিংসায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দি করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকারকে বলব, যদি বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু দেখতে না চান, অন্য কিছু যদি চিন্তা না করেন তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে আপনারা মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করুন। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া এবং তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নেত্রীকে মুক্তি দেয়ার কোনো আইনগত বাধা নেই। আমি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে বলছি, যদি কোনো বাধা হয় তাহলে একমাত্র সরকারই বাধা। আল্লাহ এই দর্জাল সরকারের হাত থেকে আমাদেরকে ও আমাদের নেত্রীকে রক্ষা করুন।
আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী ও অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলের সঞ্চালনায় সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অ্যাডভোকেট মীর নাসির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মামুন, অ্যাডভোকেট আবদুল গাফফার মিয়াসহ সারাদেশের বারের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন।