প্রতিহিংসা পরায়ণ প্রধানমন্ত্রীর টার্গেট দেশনেত্রীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া- রিজভী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৫ পিএম, ৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩০ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, তিনবারের সর্বাধিক ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন বিনা ভোটের সরকার। দেশের জনগণের আর বুঝতে বাকি নেই যে, প্রতিহিংসা পরায়ণ প্রধানমন্ত্রীর প্রধান টার্গেট এখন দেশনেত্রীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়া।
আজ মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মৃত্যুর সাথে লড়াই করা দেশনেত্রীর সমস্ত মৌলিক মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকারকে পদদলিত করে তাঁকে সুচিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। বিদেশে উপযুক্ত চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে সূক্ষ্ম মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে কিনা এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে জনমনে। বেগম খালেদা জিয়াকে যখন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী কারাগারে নেয়া হয়েছিল তখন তিনি কারাগারের ভেতরে হেঁটে গেছেন। কিন্তু আজ কেন তাঁর এই ভয়ানক অবনতিশীল শারীরিক অবস্থা ? এ প্রশ্নের জবাব সরকার, কারাগার ও পিজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একদিন দিতেই হবে। আরেকটা প্রশ্নের জবাবও সরকারকে দিতে হবে। এখন দেশনেত্রীর জীবনকে নিঃশেষ করে দিতে শেখ হাসিনার প্রকাশ্য প্রতিহিংসার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে নানাভাবে।
যেমন- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। গত ০৬ মে ২০২১ অর্থাৎ সাত মাস আগে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করা হয়েছিল। এতেই প্রমাণিত হয়-সরকার দেশনেত্রীর সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশ যেতে দিতে রাজী নয়, তিলে তিলে তাঁকে নিঃশেষ করাই এই মূহুর্তে আওয়ামী সরকারের কর্মসূচি।
রিজভী বলেন, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বেগম খালেদা জিয়া। চিকিৎসকরা বলছেন-বাংলাদেশে তাঁর চিকিৎসা সম্ভব নয়। দ্রুত বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা না দিলে তাঁকে বাঁচানো যাবে না। বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে দেশবাসী যখন সোচ্চার, বাজার-বন্দর-হাট-ঘাট-চায়ের দোকান-গণমাধ্যম-সোশ্যাল মিডিয়া-রাজপথে প্রতিবাদী মিছিলে সর্বত্র যখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে একাট্টা তখন মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে নিতে নতুন নতুন নাটক তৈরী করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, অবৈধ সরকারের মন্ত্রিত্বের সুযোগ নিয়ে প্রতিদিন বিএনপি তথা জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে খিস্তিখেউড় করাই ছিল তার একমাত্র কাজ। খিস্তিখেউড়ে তথ্য-প্রতিমন্ত্রী মুরাদ তার সিনিয়রদের অতিক্রম করে দিনে দিনে দুর্বিনীত হয়ে উঠেছিল। ভব্যতা সভ্যতার সকল সীমা অতিক্রম করে মুরাদ জনগণের সামনে দানবের মতো আবির্ভূত হয়েছে। এরা আমাদের সমাজে বসবাস করবে, কিন্তু তাদের আচরণ, চলাফেরা ও কথাবার্তায় প্রতিফলিত হয় কুরুচি, বিবেকবর্জিত ও নারী বিদ্বেষ। তাহলে সেই সমাজে কত বিষাক্ত নৈরাজ্য তৈরী হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। নারীবিদ্বেষী, বর্ণবিদ্বেষী মুরাদের মানসিকভাবে বিকৃত বক্তব্য সারা জাতিকে হতবাক ও স্তম্ভিত করেছে। উপর মহল থেকে আস্কারা পেয়ে অসুস্থ মানসিকতার একজন ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা থাকলে ক্ষমতার অপব্যবহারে সে যে বিকারগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে তথ্য-প্রতিমন্ত্রী মুরাদ সেটির একটি প্রমাণ। এরকম একজন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই মন্ত্রী হয়ে ক্ষমতার আস্ফালনে দুর্বৃত্ত ও সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার প্রশ্ন নিয়ে একটি অনাকাঙ্খিত ও অশোভনীয় বিতর্ক অযৌক্তিকভাবে দীর্ঘায়িত করছে আইনমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া একজন সত্তরোর্ধ্ব বর্ষিয়ান জনপ্রিয় জাতীয় নেত্রীর গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে সরকারের টালবাহানা সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই-বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে কেউ রেহায় পাবেন না। জনগণের টর্নেডো আন্দোলনে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবেন আপনারা। আপনাদের অস্তিত্ব জনগণের মন থেকে মুছে যাবে। তাই আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই মূহুর্তে বেগম জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করুন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফেনীতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাংগঠনিক কাজে ফেনী সফররত মহিলা দল কেন্দ্রীয় সভাপতি বেগম আফরোজা আব্বাসকে ফেনীর কোন হোটেলে থাকতে দেয়নি সরকারের আজ্ঞাবাহী পুলিশবাহিনী। তিনি তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ফেনীতে রাত্রিযাপনের জন্য হোটেল বরাদ্দের চেষ্টাকালে পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে জানিয়ে দেয়া হয় আপনারা কোন হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন না। পুলিশের এই ধরণের ন্যাক্কারজনক আচরণের বিরুদ্ধে আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।
এ সময় তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
১। আগামী ১৪ ডিসেম্বর ২০২১, মঙ্গলবার শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে কার্যালয় সমূহে কালো পতাকা উত্তোলন ও দলীয় পতাকা অর্ধ:নমিতকরণ করা হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র উদ্যোগে সকাল ৯টায় মিরপুরস্থ শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিস্তম্ভে পুস্পার্ঘ অর্পণ করা হবে।
২। দিবসটি উপলক্ষে আগামী ১৫ ডিসেম্বর কাকরাইস্থ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে বেলা ২-০০টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি
১। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিাবর ভোরে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
২। সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র উদ্যোগে পুস্পার্ঘ অর্পণ করার জন্য সকাল ৭-৩০টায় দলের নেতাকর্মীরা ঢাকা থেকে রওয়ানা দিবেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দলের পক্ষ মহান শহীদদের উদ্দেশ্যে পুস্পার্ঘ অর্পণ করা হবে।
৩। ঐদিনই জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে ফিরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শেরেবাংলা নগরস্থ মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর মাজারে পুস্পার্ঘ অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হবে। মাজারে বিএনপি মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
৪। দিবসটি উপলক্ষে আগামী ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ শুক্রবার সকাল ১১-০০টায় বিএনপি'র উদ্যোগে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালী অনুষ্ঠিত হবে।
৪। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামী ১৯ ডিসেম্বর বেলা ২-০০টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
৫। এছাড়াও বিএনপি'র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
৬। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৬ ডিসেম্বর ভোরে দেশব্যাপী বিএনপির কার্যালয়গুলোতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে স্থানীয় সুবিধাজনক সময়ে দেশব্যাপী বিএনপির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।