ঐক্য সৃষ্টি করে জালেম, ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে হবে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৫ এএম, ৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৪২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বর্তমান সরকারকে হটাতে নব্বইয়ের মতো সকল গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যর প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসাম আলমগীর।
আজ সোমবার দুপুরে ‘স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এই ঐক্যের আহবান জানান। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের উদ্যোগে ‘স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সাবেক সামরিক শাসক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে বিএনপি এই দিনকে ‘স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র মুক্তি দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে আসছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। এর বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই যে নব্বইয়ের আন্দোলন, সেই আন্দোলন সফল হয়েছিলো তখনই, যখন সমস্ত শক্তিগুলো এক হয়েছিলো, যখন গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিগুলো এক হয়েছিলো তখনই সেদিন স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটেছিলো। আজকেও ঠিক একইভাবে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে, দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।
তিনি বলেন, এই সরকারের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নাই। এই গণতন্ত্র বিরোধী সরকার, তারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যেহেতু তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়েছে সেই কারণে আজকে এই সরকার বিভিন্নভাবে জনগণের যে দৃষ্টি তাকে অন্যদিকে ফেরানোর জন্য আজকে বিভ্রান্ত করছে। আজকে যে একটা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করলো, এই নির্বাচনের দেখুন কী অবস্থা। আমি অভিনন্দন জানাই আমার সেই তৃতীয় লিঙ্গের ভাইকে বা বোনকে যে, তার হাতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা পরাজিত হয়েছে। তাকে অভিনন্দন জানাই, তাকে শুভেচ্ছা জানাই। এর চেয়ে বড় কৃতিত্ব কিছু হতে পারে না।
বসুন্ধারার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়াকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী আজকে বন্দি, সেই নেত্রীর চিকিৎসা হচ্ছে না। ডাক্তাররা যখন বলেছেন যে, তাঁর চিকিৎসা আমাদের হাতে শেষ। এখন বাংলাদেশে এমন কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র নেই, যে চিকিৎসা কেন্দ্রের মাধ্যমে উন্নত ও পরবর্তী চিকিৎসা সম্ভব। সেটা একমাত্র আছে বিদেশের উন্নত সেন্টারে। যখন সমস্ত দেশ, সমস্ত জাতি, সমস্ত মানুষ আজকে বলছে যে, তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো দরকার। তখন এই সরকার যারা জনগণের বিরুদ্ধে, যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং যারা এদেশকে সত্যিকার অর্থে বিক্রি করে দিয়ে নতজানু একটা অবস্থা তৈরি করতে চায় সেই সরকার তাঁকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। তারা বিভিন্ন রকম কথা বলছেন। আইনের কথা বলছেন। আইন বাধা নয়, বাধা হচ্ছে সরকার। আইনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে ৪০১ ধারায় যে, এই ধারার অধীনে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো যেতে পারে।
তথ্য প্রতিমন্ত্রীর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করে মির্জা ফখরুল বলেন, সোশাল মিডিয়াকে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত জঘন্য, নিকৃষ্ট কথা বার্তা বলছেন। কাকে নিয়ে করছে? একজন ভুঁইফোড়, ডাক্তার ছিলো শুনেছি, সম্ভবত জামালপুরের সরিষাবাড়ীর। ধিক্কার দেই আমি তাকে। সেইম। কিন্তু আরো মারাত্মক হচ্ছে ওই বক্তব্যের (তথ্য প্রতিমন্ত্রীর) শেষের যে বক্তব্যটুকু সেটা অত্যন্ত মারাত্মক। বলেছে, আমি যা কিছু করছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করছি এবং তা তিনি সব কিছু জানেন। আামি আজকে এই সভা থেকে স্পষ্টভাবে প্রশ্ন করতে চাই প্রধানমন্ত্রীকে-এই কথা সত্য কি মিথ্যা আপনাকে জানাতে হবে। কারণ আপনি প্রধানমন্ত্রী- এদেশের মানুষের নিরাপত্তা, তার নিজের মর্যাদাকে রক্ষা করা এবং একই সঙ্গে এই ভয়াবহ উক্তি মিডিয়ার উদ্দেশ্যে একজন মন্ত্রী করতে পারে তাহলে আপনার সরকারের অবস্থ্না কি আমরা জানতে চাই। এর উত্তর দিতে হবে। কারণ আপনাকে জড়িয়ে এই কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই যে, আপনি কী এমন একটি সরকার নিয়ে এখানে এসেছেন, যে সরকার আমাদের দেশের সমস্ত কৃষ্টি, আমাদের দেশের যে সৌজন্যবোধ, আমাদের যে ঐহিত্যগুলো আছে তাকে বিনষ্ট করে দেবে? রাজনীতিকে তো ধবংস করেছেনই। এখন ন্যূনতম মূল্যবোধগুলো আছে, আমাদের মা-বোনের প্রতি আমাদের সম্মান-শ্রদ্ধা সেটাও কী আপনি ধ্বংস করে দেবেন? আমরা তীব্রভাবে শুধু প্রতিবাদ নয়, আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করছি, ধিক্কার জানাচ্ছি সেই সমস্ত বক্তব্যের জন্যে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা তাদের চরিত্র। এই যে বর্ণবাদী কথা, এই যে নারী বিদ্বেষী কথা। আমার বোনদের অনুরোধ করবো আপনাদের প্রতিবাদ জানানো উচিত। আজকে আমি ধন্যবাদ জানাই কয়েকজন নারী নেত্রীকে তারা আজকে প্রতিবাদ করেছেন। একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, নব্বইয়ের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণঅভ্যত্থান ঘটিয়েছিলো আমাদের নেতারা এই কারণে যে, একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, একটি সভ্য-স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণ করবার জন্য। আজকে এই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, এই সরকারের নেতৃত্বে সেই দেশটি আজকে একটি অসভ্য, অশালীন, অমর্যাদাকর দেশে পরিণত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্ভাগ্য আমাদের, আজকে আমাদের ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই জালেম, এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারের অধঃপতন যখন হয় কিভাবে হয় ..। ফুটপাত থেকে ধরে এনে মন্ত্রী বানিয়েছে। বাংলাদেশের লোক ফুটপাতের মন্ত্রী দেখতে চায় না, বাংলাদেশের লোক চোর-বাটপার দেখতে চায় না, বাংলাদেশের ঘুষখোর লোক মন্ত্রী দেখতে চায় না, বাংলাদেশের লোক তাদের অশ্রাব্য, অকথ্য কথা-বার্তা শুনতে চায় না। ওমা নতুন একটা জুটছে। সে এখন বিএনপির বিরুদ্ধে, বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আমার নেত্রী মুমূর্র্ষু রোগী, মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তাঁর বিরুদ্ধে অশ্রাব্য কটূক্তি করছে, সেই নেত্রীর পরিবার সম্পকের্, আমার নেতা তারেক রহমানের পরিবার সম্পর্কে অশ্রাব্য কটূক্তি করছে। এগুলো সহ্য করা যায় না, এগুলো আমরা সহ্য করবো না। এর প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এই সমস্ত নোংরা লোকজনকে মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়ে বাংলাদেশের সচিবালয়কে অপবিত্র করা হয়েছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারকে বলতে চাই, এতো মারপ্যাঁচ না করে আপনারা সোজাসুজি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেবেন কি দেবেন না। আমরা সাফ সাফ কথা জানতে চাই, এখনই জানতে চাই। আপনাদের এতো কথা শুনতে চাই না। নইলে দেশের জনগণ এই সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে সুচিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা নেবে।
ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন নব্বইয়ের সাবেক ছাত্র নেতার মধ্যে ড. আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাইফুদ্দিন মনি, খন্দকার লুৎফুর রহমান, আসাদুর রহমান খান, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুল করীম মজমুদার, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।