খালেদা জিয়া অনেক দিয়েছেন এখন আমাদের পালা - আব্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৫ এএম, ৭ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৫৭ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আমাদের অনেক দিয়েছেন। এখন আমাদের দেয়ার পালা বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলন দুর্বার হয়ে উঠেছে এটা আওয়ামী লীগ সহ্য করতে পারছে না। তাই তারা দেশনেত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে আজেবাজে কথা বলে দৃষ্টিকে অন্য দিকে ফেরাতে চায়।
আজ সোমবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে পাঠানোর দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা।
তিনি বলেন, আমরা একের পর এক কথা বলে জনমত সৃষ্টি করছি। জনমত প্রচন্ডভাবে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তারপরও আমরা কেন কিছু করতে পারব না? আমাদের অনেক কিছু করার আছে। তাঁর পতাকা নিয়ে, তাঁর নাম নিয়ে আমরা নির্বাচনে পাস করেছি। তিনি আমাদেরকে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন, পার্লামেন্ট সিস্টেম দিয়েছেন, মানুষের কথা বলার অধিকার দিয়েছেন, এই দেশের উন্নয়নে কাজ করেছেন। আমরা ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কাছ থেকে উপকৃত হয়েছি, এমপি-মন্ত্রী হয়েছি। এখন আমাদের দেয়ার পালা।
মির্জা আব্বাস বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন, সুচিকিৎসার আন্দোলন দুর্বার হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকার তা সহ্য করতে পারছে না। যার কারণে আমাদের দৃষ্টিকে, আমাদের কথাবার্তাকে সরিয়ে দেয়ার জন্য জিয়া পরিবারকে নিয়ে কথা বলছে। এরা আমাদের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরাতে চায়। আমাদের কথা পরিষ্কার, আমাদের দৃষ্টি এক দিকে। তা হচ্ছে দেশনেত্রীর মুক্তি, সুচিকিৎসা। এ সময় কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আপনারা অন্তরের অন্তস্থল থেকে আবেগ নিয়ে এখানে এসেছেন। যে আবেগ প্রকাশ করেছেন, সেই আবেগকে আগুনে রূপান্তরিত করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সাথে আমার দুই-তিন দিন হাসপাতালে দেখা হয়েছে। হাতের ইশারায় কথা হয়েছে। উনি ভালো অবস্থায় নেই। তিনি বলেন, একবার আমি বলেছিলাম, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী একজন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীর মতোই আচরণ আশা করে। কিন্তু এই আচরণটা বেগম খালেদা জিয়া পাননি। কথা বলার পরে আমার পাশ থেকে একজন বলল, ভাই আপনার কথা একটু কারেকশন করতে হবে। আমি বললাম সেটা কি? তিনি বললেন, উনি (শেখ হাসিনা) অবৈধ প্রধানমন্ত্রী আর যে সাবেক সে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং আচরণ এক রকম পাবেন না। একথাটা আমার কাছে খুবই যৌক্তিক মনে হল। বেগম খালেদা জিয়ার মামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কোনো মামলাই না। কথা হচ্ছে বিএনপির ওপর অত্যাচার করতে হবে, বিএনপিকে ধ্বংস করতে হবে। সুতরাং একমাত্র বেগম খালেদা জিয়াকে ধ্বংস করলে বিএনপি ধ্বংস হবে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমাদের আর কথা নয়; এখন থেকে অ্যাকশন। অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট মিডনাইট গভর্নমেন্ট। সারাদেশ গ্রাম-গঞ্জ শহর বন্দর একটি সুর এ শেখ হাসিনা সরকার ভোট চোর। এ ভোট চোরের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি। সাবেক এ জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে গয়েশ্বর বলেন, আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, এখনও আপনাদের নেতৃত্বে এলাকার মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে। এসব মানুষকে নিয়ে আপনারা আরো ঐক্যবদ্ধ হন। আমরা আবারো ‘৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করব। মিডনাইট এ গভর্নমেন্টকে বিদায় করব, গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, দেশবাসীকে মুক্ত করব। বিএনপির এ নেতা বলেন, উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া। মুসলিম বিশ্বের প্রথম নির্বাচিত মহিলা প্রধানমন্ত্রী, একবার নয় তিন বার। তিনি আলাদা আলাদাভাবে ২৩টি আসনে নির্বাচন করে প্রতিটি আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন। সেই নেত্রী সম্পর্কে (ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি ও নেতা) যে ধরনের ঠাট্টা মশকরা করা হয়-এটা সৃষ্টাচারের সাথে তুলনা করা যায় না-এরা বেয়াদব। এদের জবাব মুখ দেয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, আপনারা আপনাদের সাহসকে আরো প্রত্যয়ী করেন, নেতাকর্মীদের সাথে আরো ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলুন। এটাই হবে আমাদের আন্দোলনের সফলতার মূলমন্ত্র। ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারের জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। জনবিচ্ছিন্ন এ সরকার যদি আমাদের কন্ঠরোধ করে, আমাদের আন্দোলনকে স্তব্ধ করে তাহলে আমাদের জন্মই বৃথা। আমাদের জন্ম হয়েছে সংগ্রামের জন্য। আমরা বিএনপি করি তার যে নেতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, আমরা আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অনুসারী এসব কারণে আমরা ব্যর্থ হতে পারি না। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে মানবেতর জীবন যাপন করছেন, সেখান থেকে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শুধুমাত্র আমাদের ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সফল আন্দোলনের মধ্যদিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরবে, বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারবেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা জিয়াউর রহমানের সৈনিক, খালেদা জিয়ার সৈনিক ও তারেক রহমানের সৈনিক। আমাদের আলাদা পরিচয় নেই; সৈনিকদের কাজ হচ্ছে লড়াই করা। আজকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারেক রহমান, তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ মুক্ত হবে এবং মুক্ত হবে গণতন্ত্র।
গয়েশ্বর বলেন, আমাদের নেত্রী মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে পারি না। চিকিৎসকদের কথা সরকার কানে নেয় না, তারা আইনের ছবক দেয়। আবার বলে, তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে এ সময়ে কোন লোকটা নিষ্পাপ আছে, যার কাছে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমা চাইবেন। বেগম খালেদা জিয়া এমন কী অন্যায় করেছেন, যার জন্য ক্ষমা চাইবেন? টাকা তছরুপ হয়নি, বরং বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। তারপরও তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অথচ হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের প্রথিতযশা চিকিৎসকরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ হচ্ছে, এ দেশে তাঁর আর কোনো চিকিৎসা নেই। তাঁকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে হবে। কিন্তু সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছেন। এ সময় জিয়া পরিবার তথা তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সম্পর্কে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর নারী বিদ্বেষী মন্তব্যের জন্য কঠোর সমালোচনা করেন রিজভী। এতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, সাবেক জনপ্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন, শাহে আলম, আবু সাইদ চাঁন, দেওয়ান শফিকুজ্জামান, তমিজ উদ্দিন, কফিল উদ্দিন, দিলদার হোসেন, জাফর ইকবাল হিরন, আমিনুল ইসলাম বাদশা, সরকার বাদল, মোর্শেদ মিল্টন, মশিউর রহমান, নবী নেওয়াজ খান, জয়নাল আবেদিন, আতাউর রহমান আতা, আসিক চৌধুরী প্রমুখ।