খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসায় বিদেশে না পাঠালে সরকার পতনের আন্দোলন - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪২ এএম, ৫ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪৫ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসায় দ্রুত বিদেশে না পাঠালে ‘সরকার পতনের আন্দোলন’ শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার সকালে এক বিক্ষোভ সমাবেশে কর্মসূচি থেকে তিনি সরকারের প্রতি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য পাঠানোর দাবিতে এই সমাবেশ হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঢাকা মহানগর ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিকৃতি হাতে নিয়ে এই সমাবেশে অংশ নেয়। এই সমাবেশে ব্যাপক নেতাকর্মীর উপস্থিতির কারণে এই সড়কে একটা পর্যায়ে যানবাহন চালাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, খুব পরিষ্কার করে সরকারের কাছে বলতে চাই, আর বিলম্ব করবেন না। অবিলম্বে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন এবং তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এদেশের জনগণ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। আপনাদেরকে হটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং এই আন্দোলনই হবে এই সরকার পতনের শুরু।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ছাত্ররা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, অনেকে গুম হয়ে গেছে, অনেকে খুন হয়েছে, কারাগারে এখনো আমাদের ছাত্র নেতারা নির্যাতন ভোগ করছেন। এদেশকে মুক্ত করতে হলে, এই যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হলে আজকে যুবকদেরকে জেগে উঠতে হবে, আজকে তরুণদেরকে জেগে উঠতে হবে, আজকে ছাত্রদলকে জেগে উঠতে হবে। বাংলাদেশে সকল বিজয় অর্জন হয়েছে ছাত্রদের নেতৃত্বে। আজকে আবার সেই ছাত্রদলকে জেগে উঠতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবার জন্য আজকে সেই নেতৃত্ব দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর বিদেশে চিকিৎসায় পাঠানো নিশ্চিত করতে হবে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। আমরা কি সবাই প্রস্তুত আছি, আছি আমরা প্রস্তুত? আন্দোলনে ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি? এই সময়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা হাত উঁচু করে ‘হ্যাঁ’সূচক জবাব দলে তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ আমরা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো, তাঁকে বিদেশে পাঠাতে সক্ষম হবো।
বেগম খালেদা জিয়াকে তারা পথের কাঁটা মনে করে বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেশনেত্রীকে আপনারা বন্দি করে রেখেছেন। কারণটা কী? তাঁকে যদি বন্দি করে রাখা যায়, তাঁকে যদি অসুস্থাবস্থায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো না যায়, তিনি যদি জীবন থেকে চলে যান তাহলে আপনাদের (আওয়ামী লীগ) পথের কাঁটা দূর হবে। আমি তাদেরকে বলতে চাই, তা হবে না। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে তারা ভেবেছিলেন যে, বোধহয় শেষ হয়ে গেলো বিএনপি, শেষ হয়ে গেলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জায়গা। তা হয়নি। ঠিক একইভাবে বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সঠিকভাবেই তিনি তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবকে এবং তারই নেতৃত্বে এই দল এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, আমাদের সার্বভৌমত্বে প্রতীক, আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি আছেন বলেই এখনো গণতন্ত্রের সংগ্রাম চলছে, তিনি আছেন বলেই এখনও আমাদের শত্রুরা আমাদের সীমান্তে তারা ভয় পায়। এখনো আওয়ামী লীগ যে আছে ওই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বেঁচে আছেন বলেই এখনো আছে। তা না হলে আওয়ামী লীগ থাকবে না। এদেশের যদি গণতন্ত্রকে ঠিক রাখতে চাই, এদেশের যদি সত্যিকার অর্থেই সুশাসন চালু রাখতে চাই, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা করে জনগণের সমস্ত অধিকার যদি ফিরিয়ে আনতে চাই তাহলে অবশ্যই দেশনেত্রীকে এই রাজনীতিতে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে হবে, আমাদের তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেত্রী তিনি বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে জীবনে কখনো পরাজিত হননি। তাঁর জনপ্রিয়তাকে যারা ভয় পান, এদেশকে যারা করদ রাজ্যে পরিণত করতে চায়, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যারা বিকিয়ে দিতে চায় সেই অপশক্তি, সেই তাঁবেদার শক্তি বেগম খালেদা জিয়াকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। এই কথা মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যদি আপনারা এটা অস্বীকার করেন তাহলে প্রমাণ করুন। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দিন। প্রমাণ করুন স্বাধীনভাবে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। আপনি প্রমাণ করে দিন আপনারা এই ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত নন। যদি তা না করেন, বাংলাদেশের মানুষ এটা বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, যদি অনতিবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো না হয় তাহলে এই অবৈধ ও ভোট ডাকাতির সরকার প্রধানকে সরানোর জন্য বৃহত্তর কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এটাই আজকে ছাত্রদলের সমাবেশের আহবান বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মামুন খান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ প্রমুখ।