ক্ষমতাসীনদের কিছু মানুষ ‘ভুঁইফোঁড়’ হয়ে মোটা-তাজা হচ্ছে - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫০ এএম, ৩ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:২৭ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ক্ষমতাসীনদের কিছু মানুষ ‘ভুঁইফোঁড়’ হয়ে মোটা-তাজা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি এই অভিযোগ করেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। মুক্তিযোদ্ধা দলের প্রজন্মরা বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতিকৃতি হাতে নিয়ে তাঁর মুক্তির জন্য স্লোগান দেয়।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সবাইকে আহবান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখানে মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত হয়েছে, তাদের রাইফেল একবার গর্জে উঠেছিলো ১৯৭১ সালে আরেকবার রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সরকারের জন্যই ভালো। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া দাবি যৌক্তিক। প্রয়োজন হলে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে হলেও হাফ পাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, সরকারি হাসপাতালে গেলে কেউ চিকিৎসা পায় না, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছেন, ব্যাংকগুলোকে লুটপাট করে শেষ করে দিয়েছেন। কথায় কথায় বলেন উন্নয়নের রোল মডেল নাকি বাংলাদেশ। রাস্তার পড়ে থাকে মানুষ না খেয়ে। আমাদের কৃষকেরা ধানের দাম পায় না, পণ্যের দাম পায় না, আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা তাদের মজুরি পায় না, আমাদের নিম্নবিত্ত আরো নিম্নবিত্ত হচ্ছে, মধ্যবিত্ত আরো নিম্নবিত্ত হচ্ছে। দারিদ্র্যের সীমা আরো অনেক নিচে নেমে গেছে। কিছু মানুষ ভুঁইফোঁড় হয়ে মোটা তাজা হচ্ছে। জনগণের পকেট কেটে তারা লুটপাট করে ওই কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি বানায়, মালয়েশিয়াতে সেকেন্ড হোম তৈরি করে অর্থাৎ টাকা পাচার করে দিচ্ছে। সেখানে এই দেশ এই রাষ্ট্রকে আজকে এমন এক অবস্থায় নিয়ে গেছে তারা।
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার অনুমতিতে সরকারের প্রতিবন্ধকতার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার দেশনেত্রীকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দিতে চায় না। কেনো? একবারও কি চিন্তা করেন না যে, এই দেশের ১৬ কোটি মানুষ আমার মা-বোনেরা রোজা রাখছে, দোয়া করছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যেন সুস্থ হয়ে যায়। কেনো আপনারা ভাবেন না যে, এতো কোটি কোটি মানুষের এই যে অভিশাপ আপনারা নিচ্ছেন এবং সেই অভিশাপ আপনাদেরকে নিঃসন্দেহে অভিশপ্ত করবে। আমি শুধু বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে পাঠানো এই সরকারের জন্য দরকার। কারণ আল্লাহ না করুন তাঁর যদি কোনো ক্ষতি হয় দেশের মানুষ আপনাকে রেহাই দেবে না, আপনাদেরকে রেহাই দেবে না। অবিলম্বে আর কাল বিলম্ব না করে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাঁর চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে প্রেরণ করুন। অন্যথায় আপনারা এরজন্য সর্বাংশে দায়ী থাকবেন। গত ১৩ নভেম্বর থেকে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড অবিলম্বে তাঁকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ উন্নত সেন্টারে নেয়ার সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশের ভিত্তিতে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ইতিমধ্যে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। তবে সেই আবেদনের এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কথায় আবারও প্রমাণিত হয়েছে, সরকার ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন। নির্বাচন কমিশনের একটি আইন হবে, কিন্তু আগামী নির্বাচন এ আইনের অধীনে হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ আবারও ভোটের আগের রাতে অপজিশন পার্টিদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে মাঠ খালি করে নির্বাচনে পদ দখল করে নেবে তারা।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে পরিষ্কার যে, আবারও দেশে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে। এ সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, আমাদের আশা-আকাক্সক্ষা-স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। আবারও একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শওকত মাহমুদ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, দিনাজপুর জেলা সভাপতি মোকসেদ আলী মঙ্গলীয়া, টাঙ্গাইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি আব্দুল হালিম, শরীফ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি জয়নুল আলম রুকু, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সভাপতি কালাম ফয়জী প্রমুখ।